- শেষের পাতা
- আর ভাগ্যবদলের স্বপ্ন দেখবে না পরিবারটি
শেষের পাতা
আর ভাগ্যবদলের স্বপ্ন দেখবে না পরিবারটি
রূপগঞ্জে ঘরের ওপর বিদ্যুতের হাইভোল্টেজ তার পড়ে আগুনে একই পরিবারের চারজন নিহত, তদন্ত কমিটি
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২১
জিয়াউর রাশেদ রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
মাছুম মিয়া একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন একেবারে সাদামাটাভাবে। মাথা গোঁজার জন্য এক চিলতে জমিও নেই তাদের। তাই পরিবারটি থাকত পূর্বাচলের ১১ নম্বর সেক্টর কুমারটেকের ৩৪ নম্বর প্লটে, অন্যের জমিতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো শুক্রবারও সারাদিন কাজ শেষে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন মাছুম মিয়া। মেয়ে শিলা বেড়াতে এসেছেন। স্ত্রী রাতের খাবর রান্না করছিলেন। এমন সময় তাদের ঘরের ওপর দিয়ে যাওয়া পল্লী বিদ্যুতের ১১ হাজার ভোল্টের খোলা তারে ডেসকোর ৩৩ হাজার ভোল্টের সঞ্চালন লাইন ছিঁড়ে পড়ে। এতে মুহূর্তেই বিকট শব্দ হয় এবং ঝুপড়ি ঘরটিতে আগুন ধরে যায়। মেয়ে শিলা কোনোমতে বাইরে বের হতে পারলেও শিকলবন্দি দুই ছেলেকে উদ্ধার করতে মাছুম মিয়া ও স্ত্রী সীমা ঘরেই থেকে যান। ফলে সবাই দগ্ধ হন। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনজন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মাছুমের স্ত্রী। পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায় ভাগ্য বদলে দেওয়ার জন্য কেনা অটোরিকশাটিও। ফলে পরিবারটির ভাগ্য বদলের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ নুশরাত জাহান বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ডেসকোর হাই ভোল্টেজের তার ছিঁড়ে পল্লী বিদ্যুতের তারের ওপর পড়ে। সেখান থেকে তারগুলো ঘরের চালে পড়ে। এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে পূর্বাচল ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার কাজ শুরু করে। নারায়ণগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের ডিউটি অফিসার জানান, দুর্ঘটনার পর রাত পৌনে ৯টায় খবর পেয়ে পূর্বাচলের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সাড়ে ৯টায় তারা আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন বলেন, 'আমাদের কোনো গাফিলতি বা তারের সমস্যা ছিল না। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।'
তদন্ত কমিটি গঠন :দুর্ঘটনার জন্য স্থানীয় সালাউদ্দিন, নজরুল ইসলাম, আলমাস মিন্টুসহ অনেকে ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) কর্মকর্তাদের অবহেলাকে দায়ী করে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। ডেসকোর ত্রুটিপূর্ণ বিদ্যুৎ লাইনের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। এছাড়া বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী শনিবার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ দাবি করে তিনশ ফুট সড়কে মানববন্ধন করেছে।
গতকাল সকালে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসে। এ সময় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর পরিচালক খালেদা পারভীনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এদিকে ফায়ার সার্ভিস ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধনকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল বিকেলে এলাকায় লাশ আনা হলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। স্বজন ও এলাকাবাসীর কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। মাগরিবের নামাজের পর জানাজা শেষে বাড়িয়ারটেক এলাকার গোরস্তানে লাশ দাফন করা হয়।
পূর্বাচল ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার উদ্দীপন ভক্ত বলেন, মূলত ওই পরিবারটির সদস্যরা বিদ্যুৎস্পর্শে মারা গেছেন। আগুনের ঘটনা পরে ঘটেছে। পল্লী বিদ্যুতের পরিচালক ও তদন্ত কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ডেসকোর ৩৩ হাজার ভোল্টের তার পবিসের ১১ হাজার ভোল্টের ওপর পড়ে। এতে দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে ডেসকোর এমডি কাওসার আমীর আলী সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনায় তাদের দায় আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে নির্বাহী পরিচালকের (অপারেশন) নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ডেসকোর এমডি দুর্ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তাদের সঞ্চালন লাইনটি ইনসুলেট করা। ওই এলাকায় তাদের যে গ্রাহক রয়েছে তাদেরও বৈদ্যুতিক গোলযোগ ঘটেনি। ফলে দুর্ঘটনা কেন ঘটল তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ওই এলাকায় ব্যাটারি চার্জিংয়ের জন্য অনেকে বিদ্যুতের লাইনগুলোতে হুকিং করে বলে জানা গেছে। এমন কোনো ঘটনা থেকে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে কিনা তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।