- শেষের পাতা
- ওমিক্রন সংক্রমণ ৪০ দেশে বিধিনিষেধের আওতায় ৭
শেষের পাতা
স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন
ওমিক্রন সংক্রমণ ৪০ দেশে বিধিনিষেধের আওতায় ৭

গত ২৪ নভেম্বর আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানায় করোনার নতুন ধরনটি শনাক্ত হয়। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে 'কনসার্ন অব ভ্যারিয়েন্ট' বা উদ্বেগজনক ধরন বলে আখ্যায়িত করে। তবে সর্বশেষ গতকাল ওমিক্রন নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
দেশে ব্যাপক সংক্রমণের ক্ষমতাসম্পন্ন ধরনটির সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্য বিভাগ কিছু পদক্ষেপ নিলেও তাদের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কয়েকদিন ধরে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য-বিবৃতি ছাড়া তেমন কোনো জোরালো তৎপরতা চোখে পড়েনি। সরকারি নির্দেশনায়ও এর প্রমাণ মিলেছে।
বিশ্বের ৪০ দেশে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়লেও বাংলাদেশ কেবল সাতটি দেশ থেকে আগতদের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। অন্য দেশগুলোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। একইসঙ্গে বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টাইনের জন্য হোটেলের তালিকাও প্রকাশ করা হয়নি।
এ অবস্থায় সরকারের প্রস্তুতি ও সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রতিদিনই নতুন নতুন দেশ সংক্রমণের তালিকায় যুক্ত হবে। সেক্ষেত্রে সরকারি আদেশে সাতটি দেশের নাম না বলে ওমিক্রন সংক্রমিত দেশ থেকে আসা সবার ক্ষেত্রে ওই বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হবে বলে উল্লেখ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে কোয়ারেন্টাইনের জন্য হোটেলগুলোর তালিকা প্রকাশ করা জরুরি।
গতকাল পর্যন্ত ওমিক্রন শনাক্ত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে আফ্রিকা অঞ্চলের দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, ঘানা, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, তিউনেসিয়া, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে, আমেরিকা অঞ্চলের যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, কানাডা ও মেক্সিকো, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অস্ট্রেলিয়া, ভারত, হংকং, জাপান, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও শ্রীলঙ্কা, ইউরোপের অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, আইসল্যান্ড, ইতালি, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পর্তুগাল, স্পেন, সুইডেন. সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্যের ইসরায়েল, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাম এসেছে।
তবে গত বৃহস্পতিবার এক নির্দেশনায় সরকার আফ্রিকার সাতটি দেশ থেকে আগতদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করেছে। কোয়ারেন্টাইন করতে হবে হোটেলে নিজ খরচে। এই সময়ে দুইবার নিজ খরচে আরটিপিসিআর টেস্ট করতে হবে। এই দেশগুলো হলো- দক্ষিণ
আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি, লেসোথো ও ঘানা। এর মধ্যে নামিবিয়া, এসওয়াতিনি ও লেসোথোয় এখনও সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি। কিন্তু এই তিন দেশ থেকে আগতদের বিধিনিষেধ মানতে হবে। কিন্তু সংক্রমিত ৩৬ দেশের বিষয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম সমকালকে বলেন, কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি, স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও জনস্বাস্থ্যবিদদের সুপারিশের আলোকে ওই সাতটি দেশ থেকে আগতদের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নতুন করে কোনো পরামর্শ এলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টাইন করার হোটেলের তালিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, আগে কোয়ারেন্টাইন করা হোটেলের তালিকা তাদের কাছে রয়েছে। সংক্রমণ কমে আসায় হোটেলগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি পরিবর্তন হওয়ায় নতুন করে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। দ্রুতই এ তালিকা প্রকাশ করা হবে।
জোরালো প্রস্তুতির তাগিদ বিশেষজ্ঞদের :ওমিক্রন ঠেকাতে সরকারের প্রস্তুতির সমালোচনা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতির যে ঘাটতি ছিল তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সংশ্নিষ্টদের কর্মকাণ্ড তা প্রমাণ করে। সংক্রমণ ছড়িয়েছে এমন দেশের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। যে আদেশটি জারি করা হয়েছে, সেখানে যদি বলা হতো; যেসব দেশে ওমিক্রন সংক্রমণ শনাক্ত হবে, সেসব দেশ থেকে আগতদের এই বিধিনিষেধ মানতে হবে। সেটি না করে নির্দিষ্ট করে সাতটি দেশের নাম উল্লেখ করা হলো। এটি সংশ্নিষ্টদের সমন্বয়হীনতার প্রমাণ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ বলেন, যেসব হোটেলে কোয়ারেন্টাইন করা হবে, সেগুলোর তালিকা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তাহলে যারা বিদেশ থেকে আসবেন তারা কোথায় থাকবেন? একইসঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে, তাও জানা যায়নি। গত দেড় বছরে চিকিৎসা নিয়ে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা গেছে। সংক্রমণ যখন চূড়ায় উঠে তখন স্বাস্থ্য বিভাগ নিরুপায় হয়ে যায়। সুতরাং সঠিক প্রস্তুতি গ্রহণ করলে এ ধরনের সংকটে পড়তে হতো না। অতএব স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান থাকবে, জোরালো প্রস্তুতি নিন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেন, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে ওমিক্রন সংক্রমিত দেশগুলোর বিষয়ে দ্রুতই নির্দেশনা জারি করা হবে। কোয়ারেন্টাইনের জন্য হোটেলের তালিকাও হালনাগাদ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিষয় : স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা করোনাভাইরাস
মন্তব্য করুন