- লোকালয়
- চানাচুর বিক্রেতা শিবুর উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প
লোকালয়
চানাচুর বিক্রেতা শিবুর উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
মশিউল হক মিটু, কালিয়া (নড়াইল)
শিবুপদ রায় জানান, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে বাবা কুমুদ রায় শহীদ হন। তাই মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাধ্য হয়ে ৫ সদস্যের পরিবারের দায়িত্ব তুলে নিতে হয় তার কাঁধে। কিশোর শিবু কোনো কাজ না পেয়ে কালিয়া-খুলনা রুটের লঞ্চে ফেরি করে চানাচুর বিক্রি করতে শুরু করেন। চানাচুর বিক্রি করে ভালো চলছিল না সংসার। সাত বছর চানাচুর বিক্রির পর একদিন লঞ্চে দেখা মেলে উপজেলার বাণিজ্যিক বন্দর খ্যাত বড়দিয়া বাজারের তৎকালীন গৌরাঙ্গ বাণিজ্য ভান্ডারের মালিক নিত্যানন্দ সাহার সঙ্গে। তিনি শিবুর দুরবস্থার কথা শুনে তাকে নিয়ে যান এবং নিজের দোকানে কর্মচারীর কাজ দেন। দোকানে কাজ করে যে পারিশ্রমিক পেতেন, তা দিয়ে সংসার খরচ বাদে প্রতি মাসে সামান্য টাকা তিনি জমাতে শুরু করেন। প্রায় ১০ বছর দোকান কর্মচারীর কাজ করে তিনি ১৬ হাজার টাকা জমান। ওই টাকা নিয়ে কালিয়া সদর বাজারে ভুসির ব্যবসা শুরু করেন। তাতেও সংসারে খরচ সংকুলান কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি বাড়ির পাশে ছোটকালিয়ার বিলে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ১০ একর জমি লিজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। ১৫ বছরেই তিনি ৪২৭ একর জমির ওপর গড়ে তুলেছেন বৃহৎ বাণিজ্যিক মৎস্য খামার। বর্তমানে খামারে মাছ চাষসহ টমেটো, উচ্ছে, করোলা, লাউসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি ও কলা চাষ করছেন তিনি। খামারটিতে থাইল্যান্ডের শীতকালীন লাভলি টমেটো এলাকাবাসীর নজর কাড়ে। প্রতিদিন দুই টনের বেশি টমেটো এবং করোলা ও উচ্ছে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় দেড় টন। এসব পণ্য নিজের ট্রাকে করে পৌঁছে যাচ্ছে রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ আশপাশের জেলায়। প্রতিদিন খামারটিতে শতাধিক শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
শ্রমিকরা জানান, তারা এখানে নিয়মিত কাজ করতে পারায় কোথাও ঘুরতে হয় না। করোনা মহামারিতেও তাদের বেকার থাকতে হয়নি। তাই তারা ভালোই আছেন।
শিবুপদ রায় বলেন, সরকারি সহায়তা পেলে খামারটিকে একটি বৃহৎ খামারে পরিণত করতে চাই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবির কুমার বিশ্বাস বলেন, শিবুপদ রায় একজন সফল খামারি। তার বাণিজ্যিক খামার থেকে যেমন পুষ্টির জোগান হচ্ছে, তেমনি স্থানীয় শ্রমিকদের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। তাই তার সফলতার বিবরণ সরকারের সংশ্নিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।