সম্পত্তিতে অধিকারবঞ্চিত হিন্দু নারী
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮
স্মৃতি চক্রবর্তী
আমাদের দেশে নারী সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়ে মামলা আদালতে আসে না। কারণ অধিকাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষই জানেন না পারিবারিক অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ অনুযায়ী এখতিয়ার রয়েছে এ ব্যাপারে হিন্দু নারীদের আদালতে যাওয়ার। বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক রিপোর্টে দেখা যায়, গত আট মাসে এই সংস্থায় মোট অভিযোগ এসেছে ৯২৬টি। অধিকারবঞ্চিত হিন্দু নারীদের অভিযোগ এসেছে মাত্র ২৭টি। এর মধ্যে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কারণে ভরণ-পোষণ না দেওয়ার অভিযোগই বেশি।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চিত্রটা কিন্তু আমাদের সমাজ বাস্তবতা থেকে পুরোপুরি ভিন্ন। সেখানে হিন্দু আইনে বিভিন্ন সময় এমন কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে, যাতে এ জন্য যুগান্তকারী পরিবর্তন হয়েছে এবং এর সুফল ভোগ করছে এই দেশের হিন্দু নারীরা। ১৯৪৭ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ কিংবা দেশ ভাগের পর ভারতে হিন্দু আইনে আরও সংস্কার সাধিত হয়েছে, যা হিন্দু নারীর সম্পত্তি অধিকারের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে বিবেচিত। নাবালকের সম্পত্তিবিষয়ক আইন ১৯৫৬, হিন্দু উত্তরাধিকার আইন ১৯৫৬ এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু বাংলাদেশে ১৯৪৭ সালের পর হিন্দু আইনের ক্ষেত্রে কোনো সংস্কার হয়নি। বাংলাদেশে হিন্দু আইনে নারীর সম্পত্তির অধিকার প্রশ্নে আজও প্রাচীন ও রক্ষণশীল ধ্যান-ধারণাই প্রচলিত রয়েছে। আমাদের দেশে হিন্দু নারীদের পারিবারিক প্রায় ক্ষেত্রেই অধিকারের পথটি এখনও সংকুচিত। তারা বাবার, ভাইয়ের, সন্তান এমনকি স্বামীর সম্পত্তিতেও কোনো অধিকার রাখেন না। নানা প্রথার দোহাই দিয়ে হিন্দু নারীদের সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে- এই অভিযোগ নতুন নয়। হিন্দু নারীদের অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রচলিত পারিবারিক আইনে মামলা করা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে পথটা মসৃণ নয় এবং আইনের স্পষ্টতার কিংবা যথাযথ আইনের অভাবে সেই মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে যাচ্ছে না। এর ফলে সুফল পাচ্ছেন না অধিকারবঞ্চিত হিন্দু নারী। ভারতে ২০০৫ সালে সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকার আইন পাস হয়েছে। কিন্তু আজও বাংলাদেশের হিন্দু নারীরা এ ক্ষেত্রে অন্ধকারের অতলেই রয়েছেন। নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে নারীর সব অধিকারই আইনের কাঠামোবদ্ধ হওয়া উচিত। যুগ পাল্টাচ্ছে এবং এর আলোকে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টানো উচিত। সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিলে নিরসন হতে পারে বৈষম্যের।