
রাজধানীতে হরকাতুল জিহাদ ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পাঁচজনকে বিস্ফোরকসহ গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ সমকাল
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুই সক্রিয় সদস্যের মোবাইল ফোনের মেসেজ (বার্তা)। এভাবে বার্তা পাঠিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও একে অন্যকে জিহাদে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করে। বার্তা বিনিময়কারী ওই দুই সদস্যকে গ্রেফতারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বুধবার রাতে রাজধানীর পৃথক স্থান থেকে গ্রেফতার করা ওই দুই যুবক হলো আসিফ আদনান ও ফজলে এলাহী তানজিল। তাদের মধ্যে আসিফ আদনানের বাবা সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এবং তানজিলের মা যুগ্ম সচিব। ডিবির দাবি, তারা ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক উগ্রপন্থি সংগঠন ইসলামী স্টেটে (আইএস) যোগ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল। একই রাতে ডিবির আরেকটি দল অত্যাধুনিক দূরনিয়ন্ত্রিত বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ হরকাতুল জিহাদের (হুজি) তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
জঙ্গিদের গ্রেফতার উপলক্ষে গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এ দেশে 'আকিস' বা আল কায়দা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের নেটওয়ার্ক গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। এই টিমের সক্রিয় সদস্য আসিফ ও তানজিল। তারা সিরিয়ায় 'নুসরা ব্রিগেডে' প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে সশস্ত্র যুদ্ধ করার পরিকল্পনা করেছিল। এ লক্ষ্যে তারা তবলিগ জামায়াতের মাধ্যমে প্রথমে তুরস্ক ও পরে সিরিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। এ-সংক্রান্ত কিছু দালিলিক প্রমাণ ডিবির কাছে রয়েছে।
ডিবি কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতার হওয়া আসিফ আদনান সুপ্রিম কোর্টের একজন সাবেক বিচারপতির ছেলে। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছে। উচ্চতর পড়ালেখার জন্য তার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা ছিল। গ্রেফতার ফজলে এলাহী তানজিল ইংরেজি মাধ্যমে এ-লেভেল পাস করেছে। তার মা একজন যুগ্ম সচিব।
সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম জানান, এর আগে গ্রেফতার জেএমবির সাত জঙ্গির সঙ্গে এ দু'জনের যোগাযোগ ছিল। সে সূত্র ধরেই বুধবার রাতে সেগুনবাগিচা ও ইস্কাটন থেকে আসিফ ও তানজিলকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পলাতক অন্য সহযোগীদের নাম জানিয়েছে। তাদের মধ্যে একজন হলো যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এক বাংলাদেশি। তার নেতৃত্বেই জঙ্গিরা আইএসে যোগ দিয়ে জিহাদ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল। গ্রেফতারকৃতরা বাংলাদেশে জঙ্গি নেটওয়ার্ক তৈরি করে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে বর্তমান সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা করছিল।
তদন্ত সূত্র জানায়, আইএসের জন্য বাংলাদেশ থেকে কর্মী সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ওই বাংলাদেশি। এ জন্য ছয় মাস ধরে সে দেশে অবস্থান করছে। সিলেটে চার বিঘা জমিতে তার আলিশান বাড়ি রয়েছে। ফেসবুকে তার সঙ্গে যোগাযোগ হয় আসিফের। এর পর তিনি আসিফ, তানজিল ও আগে গ্রেফতার সাত জঙ্গির সঙ্গে গুলশানের আজাদ মসজিদ ও শাহজালাল মাজার এলাকায় দুটি বৈঠক করে।
হুজির তিন জঙ্গি গ্রেফতার :রামপুরা থেকে বুধবার হুজির সদস্য খাইরুল ইসলাম, সফিকুল ইসলাম সফিক ও মোহাম্মদ আহসান উল্লাহকে গ্রেফতার করে ডিবি। তাদের মধ্যে খায়রুল গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইলেকট্রনিকসের শেষ বর্ষের ছাত্র। সে দূর থেকে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য একটি রিমোট কন্ট্রোলের নকশা করেছে। সেটি ২০০ গজ দূর থেকেও বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম। এর আগে দেশে কখনও ১০০ গজের বেশি দূর থেকে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রযুক্তি পাওয়া যায়নি। গ্রেফতার জঙ্গিরা জানিয়েছে, তাদের টার্গেট ছিল ৫০০ গজ পর্যন্ত এর কার্যপরিধি বাড়ানো।
এদিকে, গত ৯ আগস্ট গাজীপুর থেকে সাদা পোশাকধারীরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে খায়রুলকে তুলে নিয়ে যায়। এর পর গত ২৫ আগস্ট ও ১৩ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল থেকে আহসান ও শফিককে একইভাবে তুলে নিয়ে যাওয়ার দু'দিন পর তিনজনকেই ছেড়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতারকৃতরা এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
মন্তব্য করুন