- অন্যান্য
- ফের কপিরাইট বিতর্ক
অন্যান্য
ফের কপিরাইট বিতর্ক
গুগল প্লেস্টোর থেকে ইউনিবিজয় ও রিদ্মিক অপসারিত

আর এ ঘটনায় অভ্র-বিজয় কাণ্ডের পর আবারও উত্তাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বিতর্কটি মূলত সফটওয়্যার নিয়ে নয়, বাংলা কিবোর্ড লেআউট নিয়ে। আর অভ্র ঘটনার পর নিজের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ করতে গিয়ে আবারও তরুণ প্রজন্মের তোপের মুখে মোস্তাফা জব্বার। প্লেস্টোর থেকে রিদ্মিক এবং ইউনিবিজয় অপসারণের পর ভার্চুয়াল জগতে নানাভাবে অপদস্থ হচ্ছেন বিজয় কিবোর্ডের স্বত্বাধিকারী। তবে আসলেই কি তরুণ প্রজন্মের কটূক্তি শোনার মতো কাজ করেছেন তিনি? সমকাল খুঁজতে চেষ্টা করেছে সেই প্রশ্নের উত্তর।
গুগল কেন রিদ্মিক ও ইউনিবিজয় প্রত্যাহার করল
গুগল প্লেস্টোরে রিদ্মিক এবং ইউনিবিজয়ের বিরুদ্ধে কপিরাইট এবং পেটেন্ট ভাঙার অভিযোগ দায়ের করেন। কপিরাইট এবং পেটেন্ট বিষয়ে সব নথিপত্র গুগল কর্তৃপক্ষের কাছে সাবমিট করেন তিনি। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের ডিজিটাল মিলেনিয়াম কপিরাইট অ্যাক্ট [ডিএমসিএ] আইন অনুসারে অ্যাপ দুটি অপসারণ করে গুগল। মূলত কপিরাইটের ব্যাপারে খুবই সেনসেটিভ প্রযুক্তি বিশ্ব। অ্যাপ দুটি না সরাতে চাইলে মোস্তাফা জব্বার গুগলের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ মামলা করতে পারতেন। কেননা কপিরাইট মামলায় ফেঁসে একাধিকবার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছে গুগল!
রিদ্মিক এবং ইউনিবিজয় ডেভেলপাররা যা বললেন
রিদ্মিক কিবোর্ডের নির্মাতা শামীম হাসনাত জানান, রিদ্মিক অ্যাপ্লিকেশনে আমরা 'ইউনিজয়' লেআউট ব্যবহার করেছি। এই লেআউটের কপিরাইট একুশে ডট অর্গ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের। ই-মেইলে বিষয়টি আমরা গুগলকে জানিয়েছি। আশা করছি, গুগল নিশ্চয়ই এ নিয়ে বক্তব্য দেবে। রিদ্মিক প্লেস্টোর থেকে ১৬ লাখেরও বেশি বার ডাউনলোড হয়েছিল।
'ইউনিবিজয় বাংলা টাইপিং' অ্যাপের ডেভেলপার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ রহমান সমকালকে বলেন, বিজয় লেআউট কম্পিউটারে ব্যবহারের জন্য কপিরাইট করা হয়েছে। এই কপিরাইট সেলফোনের লেআউটের জন্য কীভাবে প্রযোজ্য হবে? তবে পেটেন্ট এবং কপিরাইট নিয়ে কারও সঙ্গে ঝামেলায় যেতে চাই না। এত আর্থিক সঙ্গতিও নেই উল্লেখ করে তিনি ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে বলেন, প্লেস্টোরে 'পার্বতী' নামের নতুন কিবোর্ড ছেড়েছেন। আগামীতে আরও ব্যবহারকারীবান্ধব কিবোর্ড ছাড়ার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
কপিরাইট বোর্ডের সদস্য মোস্তাফা জব্বার প্রসঙ্গ
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত ৭ সদস্য বিশিষ্ট কপিরাইট বোর্ডের অন্যতম সদস্য মোস্তাফা জব্বার। মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই বোর্ডের চেয়ারম্যান। রিদ্মিক এবং ইউনিবিজয়ের উভয় ডেভেলপারই বললেন, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করব, তিনিই তো কপিরাইট বোর্ডের অন্যতম বিচারক! সুবিচার পাবো কীভাবে? এ প্রসঙ্গে মোস্তাফা জব্বার বললেন, বোর্ডের সদস্য হলেও আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে কিংবা আমি নিজে অভিযোগ করলে তখন বিচার কার্যক্রমে আমি থাকতে পারি না। যেমনটি অভ্রর বিরুদ্ধে অভিযোগের পর এ সংশ্লিষ্ট একটি সভাতেও আমি উপস্থিত ছিলাম না। সরকারের তৈরি জাতীয় কিবোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরও একইভাবে আমি কপিরাইট বোর্ডের সভায় উপস্থিত থাকতে পারিনি। এর পরও উভয় ক্ষেত্রেই আমার বিজয় হয়েছি। অভ্র বাংলা কিবোর্ড প্রত্যাহার করেছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল 'জাতীয় কিবোর্ডের' কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
বিজয় কপিরাইট এবং পেটেন্ট প্রসঙ্গে মোস্তাফা জব্বার যা বললেন
বিজয় কিবোর্ডের লেআউট কপিরাইট নেওয়ার পর ১৯৮৯ সালে বিজয় কিবোর্ড দেশে পেটেন্ট করা হয়। পেটেন্ট ইস্যুতে বিজয় কিবোর্ডে আমি পদ্ধতিগত বিষয়টিতে জোর দেব। দুটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা যায়, প্রথমত যুক্ত অক্ষর তৈরির ক্ষেত্রে। যুক্ত অক্ষর লিখতে বিজয় কিবোর্ডে 'হসন্ত' [ইংরেজি জি বোতাম] ব্যবহৃত হয়। এখন নতুন কিবোর্ডের নামের যারাই এই হসন্তকে যুক্ত অক্ষর হিসেবে ব্যবহার করবেন, তারা অবশ্যই আমার পেটেন্ট ভাঙার দায়ে অভিযুক্ত হবেন। দ্বিতীয়ত, মহাপ্রাণ এবং অল্পপ্রাণ ধ্বনির বিন্যাস। আমার কিবোর্ডে ক, খ একই বোতামে, গ, ঘ একটি বোতামে এভাবে চ,ছ; ত, থ; দ, ধ প্রভৃতি মহাপ্রাণ ও অল্পপ্রাণ ধ্বনি একই বোতামে ব্যবহৃত হয়েছে। অন্য কোনো কিবোর্ডের দুই সেট, চার সেট বোতামও যদি আমার এই অল্পপ্রাণ-মহাপ্রাণ পদ্ধতি ব্যবহার করে, তবে সেটিও আমার পেটেন্ট ভাঙার দায়ে অভিযুক্ত হবে। অভ্রর বিরুদ্ধেও আমার পদ্ধতিগত পেটেন্ট ভাঙার অভিযোগ ছিল। ফলে অভ্র তার লেআউট প্রত্যাহারে বাধ্য হয়। আমি এখানে স্পষ্ট করে বলতে চাই, দুই-চারটা বোতাম বদলে বিজয় কিবোর্ড নকল করে নিজের বলে চালানো যাবে না। কেউ নতুন করে লেআউট করতে চাইলে স্বতন্ত্র কিছু করুক। তাতে তো আমি বাধা দিচ্ছি না। অনেকেই অভিযোগ করছেন আমি ভাষা নিয়ে ব্যবসা করছি। দেখুন পেটেন্ট করার পরও চার বছর আমি বিনামূল্যে কিবোর্ড বিতরণ করেছি। তবে কলেবর এবং খরচ বেড়ে যাওয়ায় ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ বিজয় কিবোর্ড বিক্রি শুরু করি। আর বাংলা সফটওয়্যার বিক্রির চল আমি প্রথম শুরু করিনি। আমার আগেও অনেকেই বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে শহীদলিপি, প্রবর্তন, প্রশিকা প্রভৃতি সফটওয়্যারের কথা উল্লেখ করা যায়। চীন কিংবা রাশিয়ার মতো দেশ সমাজতান্ত্রিক দেশ হলে ভিন্ন কথা ছিল কিন্তু গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে আমার কপিরাইট এবং পেটেন্ট সংরক্ষণের অধিকার আমাকে দিতে হবে। এই অধিকারে কেউ হস্তক্ষেপ করলে আমি তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতেই পারি। না-কি সে অধিকারও আমার নেই! তবে এটি বলে রাখি, পেটেন্ট কিংবা কপিরাইট কিন্তু সারাজীবনের জন্য নয়। নিয়মমাফিক ২০২৪ সালের পর বিজয়ের পেটেন্ট বাতিল হয়ে যাবে। তখন সবার জন্য উন্মুক্ত হবে বিজয় লেআউট। আর কপিরাইট স্বত্বাধিকারীর মৃত্যুর ৭ বছর অতিক্রান্ত হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। ফলে আমার বিজয় নিয়ে অনুমতি ছাড়া কিছু করতে চাইলে এই সময়টুকু আমাকে দিতেই হবে!
মন্তব্য করুন