নকল পণ্য কিনবো না নকল পণ্য বেচবো না

১২ মার্চ সমকাল কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে 'নকল পণ্য কিনবো না, নকল পণ্য বেচবো না' প্রচারাভিযানের লোগো উন্মোচন করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনসহ অতিথিরা
নকল পণ্য নীরব ঘাতক। নকল পণ্যের কারণে প্রতি বছর সরকারের বড় অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। নকল, মানহীন, অবৈধ ও ভেজাল পণ্যের কারণে ক্রেতারা প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। নিরাপদ পণ্য ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এ অবস্থায় নকল পণ্যের বিরুদ্ধে ভোক্তার সচেতনতা বাড়াতে হবে। এর বিরুদ্ধে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। গত ১২ মার্চ সমকাল কার্যালয়ে 'নকল পণ্য কিনবো না, নকল পণ্য বেচবো না' শিরোনামে প্রচারাভিযান উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে নকল পণ্যবিরোধী বিশেষ প্রচারাভিযানে নেমেছে সমকাল। প্রচারাভিযানে সমকালের সহযোগী হিসেবে পাশে রয়েছে বিএসটিআই, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বার ও জেসিআই-নর্থ। এই আয়োজনের টেলিভিশন পার্টনার হিসেবে রয়েছে চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এবং রেডিও পার্টনার ঢাকা এফএম
মুস্তাফিজ শফি
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সমকাল এবার দেশব্যাপী নকল পণ্যবিরোধী প্রচারাভিযানে নেমেছে। কেননা, শুধু পত্রিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমের দায়বদ্ধতা শেষ হয়ে যায় না। সামাজিক ও দৈনন্দিন জীবনের নানা বিষয়েও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হয়। সমকাল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই রাষ্ট্র, সমাজ ও নাগরিকের প্রতি দায়িত্বশীল। প্রত্যেকে যার যার খাতে একটি দৃষ্টান্ত রাখার মতো ভালো কাজ করলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা শতভাগ বাস্তবায়ন হবে। বছরজুড়েই নকল পণ্যবিরোধী এই কার্যক্রম চালিয়ে যাবে সমকাল। বছর শেষে নকলবিরোধী নানা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য ভূমিকার জন্য বিচারকমণ্ডলীর মাধ্যমে মনোনীত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে একাধিক ক্যাটাগরিতে পুরস্কার ও ক্রেস্ট দেবে সমকাল।
নকল পণ্যের কারণে আর্থিক ক্ষতি কয়েক হাজার কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি তো রয়েছেই। দেশে অনেক পণ্যই নকল হচ্ছে। নামিদামি ব্র্যান্ডের নকল পণ্য ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানির নকল ওষুধও বাজারে বিক্রি হচ্ছে। নকল-ভেজাল ও মানহীন ওষুধ উৎপাদনের মূলে রয়েছে খোলাবাজারে বিক্রি হওয়া কাঁচামাল। অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি বন্ধ না হওয়ার কারণে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি ক্রেতারাও নিম্ন মানের পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। এছাড়া অবৈধ কারখানায় সিগারেট তৈরি, নকল ট্যাক্স স্ট্যাম্প ব্যবহার, একই ট্যাক্স স্ট্যাম্প বারবার ব্যবহার ও চোরাই পথে সিগারেট আমদানি করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সরকারকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। নকল-জাল স্ট্যাম্পের কারণে সরকার ওই খাতেও কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী
নকল পণ্য বর্জনের জন্য সমকাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী উদ্যোগ নিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা প্রশংসনীয়। তাদের এই প্রচারাভিযান চলমান থাকবে বলে জেনেছি। নকল পণ্যের বিষয়টি জনস্বাস্থ্যের বিবেচনায় নিলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা জীবনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। কাজেই সমকালের এমন উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। নকল-ভেজাল পণ্য বন্ধে শুধু অভিযান চালালে হবে না; এজন্য সচেতনতাও জরুরি। সচেতনতা তৈরি হলে ভোক্তা নিজেই নকল পণ্য কিনবে না। নকল পণ্য ঠেকাতে সবার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি থাকা দরকার। যারা পণ্য উৎপাদন করছে তারা পণ্যের গায়ে বিশেষ এমন কিছু ব্যবহার করতে পারে যাতে ভোক্তা সহজেই দেখে বুঝতে পারে কোনটা আসল আর কোনটা নকল। নকল পণ্য নিয়ে যেসব সমস্যা রয়েছে সে ব্যাপারে আমরা সবাই একমত। নকল পণ্য প্রতিরোধে আমাদের আইন রয়েছে। সেটা যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে কিনা এটাই হলো সবচেয়ে জরুরি। অভিযান থাকবে এবং আইনের কঠোরতার পাশাপাশি সমস্যার মূলেও যেতে হবে। নকল পণ্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানো সবচেয়ে জরুরি। এক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে পারে। সমকাল বিভিন্ন ফোরামের সঙ্গে সচেতনতামূলক এই কর্মসূচি চালিয়ে যেতে পারে। সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় নকল পণ্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে পারেন। এই আন্দোলনকে তৃণমূল পর্যন্ত নিতে হবে। সমকাল সচেতনতা বাড়ানোর ওপর বেশি জোর দিয়েছে- এটাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতার মধ্য দিয়ে নকল পণ্য প্রতিরোধ করতে পারলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন
সাধারণত দেখা যায় বড় বড় প্রতিষ্ঠান সব ধরনের পণ্য তৈরি করতে চায়। ফলে ছোট প্রতিষ্ঠানের জন্য বাজারে টিকে থাকা দায় হয়ে যায়। তখন ছোট কোম্পানি কোনো কোনো ক্ষেত্রে নকল পণ্য বানানো শুরু করে। তাই বড় কোম্পানির উচিত সব ধরনের পণ্য প্রস্তুত না করা। কিছু পণ্য ছোট কোম্পানির জন্য ছেড়ে দেওয়া উচিত। অধিক ক্যাশপ্রেম বাদ দিয়ে তাদের দেশপ্রেম বাড়ানো উচিত। বড় কোম্পানি সব পণ্য তৈরি করতে পারবে না- এর জন্য আইন করা দরকার। নকল ও ভেজাল পণ্য ঠেকাতে সরকারের ওপর সব দায়িত্ব ছেড়ে দিলে হবে না। বড় প্রতিষ্ঠানের উচিত নকল প্রতিরোধে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানো এবং নিজস্ব টিম তৈরি করা। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও এক সময় নকল ছিল। এটি সারাতে অনেক সময় লেগেছে। সাদা কাপড় পরা মানুষ মনের দিক থেকে সাদা হলে দেশ থেকেও নকল পণ্য একদিন উঠে যাবে। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করব। ভেজালবিরোধী অভিযান কিন্তু র্যাবের পরিচালনা করার কথা নয়। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো অভিযানে র্যাবের সহযোগিতা চাইলে তখন তারা সহায়তা করতে পারে। তবু অন্য কাজের বাইরে র্যাব নকলবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। এজন্য তারা সাধুবাদ পেতে পারে।
গোলাম রহমান
ভোক্তারা নকল, ভেজাল, নিম্নমান এবং মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ও সেবার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এতে শুধু আর্থিক ক্ষতি হয় তা নয়, স্বাস্থ্যগত ক্ষতিও হয়। যেখানে ভোক্তার প্রাণের ঝুঁকি আছে এমন কাজে আইনে মাত্র দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এটা এক ধরনের দুর্বলতা। আইন সংশোধন করে এই দুর্বলতা দূর করা দরকার। নকল ও ভেজালের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকা থেকে যতদূরে যাবেন ততই নকল বেশি। দেশে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের লোক বেশি। নকল পণ্যের দাম কম হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ তা কিনছে। এজন্য মানুষের সচেতনতাও বাড়াতে হবে। অন্যদিকে নকল প্রতিরোধে সরকার বেশ কিছু আইন করেছে। এসব আইন বাস্তবায়নে কিছু প্রতিষ্ঠানও করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবল ও দক্ষতায় ঘাটতি রয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে এই ঘাটতি দূর করতে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে।
শেখ ফজলে ফাহিম
নকল প্রতিরোধে সমকালের উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। এ উদ্যোগের সঙ্গে এফবিসিসিআই থাকতে চায়। নকল পণ্য তৈরি করতে তো কিছু মেশিন দরকার। কিছু কাঁচামাল দরকার। দেশে কোন মেশিনের বা কাঁচামালের কতটুকু চাহিদা তার সঠিক পরিসংখ্যান দরকার। এক্ষেত্রে সরকারের সংস্থাগুলোর সমন্বয় দরকার। বিশেষ করে শিল্প মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে সমন্বয় জরুরি। নকলকারীদের শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও থাকা দরকার। এজন্য আইন সংশোধন করে কার্যকর করা যায় এমনভাবে আইন প্রণয়ন করতে হবে। এমনভাবে আইন করতে হবে, যাতে নকল কমে আসে। এজন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিএসটিআই, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ঔষধ প্রশাসন বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে। নকল পণ্যের সঙ্গে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) সম্পৃক্ত। যেখানে নকলের প্রবণতা বেশি সেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসেন না। সুষ্ঠুভাবে নকল প্রতিরোধের জন্য জেলা পর্যায়ে বেশি বেশি সচেতনতা দরকার।
ড. বেনজীর আহমেদ
নকল ও ভেজাল পণ্য রোধ করা জাতির জন্য চ্যালেঞ্জ। তবে এরই মধ্যে আমরা অনেক সমস্যা অতিক্রম করে এসেছি। নকল পণ্যের সমস্যাও অতিক্রমযোগ্য। শুধু পণ্য কেন; নকল মানুষ, নকল ডাক্তার, নকল র্যাব, নকল সাংবাদিক, নকল সার্টিফিকেট, নকল ম্যাজিস্ট্রেটও আছে। দেশে এমন কিছু নেই যার নকল নেই! নকল পণ্য প্রতিরোধে দুটি দিক রয়েছে। একটি হলো আইন প্রয়োগ করা, আরেকটি সচেতনতা বাড়ানো। অভিযান ও মামলায় জরিমানার অঙ্ক বাড়াতে হবে। যাতে একবার জরিমানা করলে আর ঘুরে দাঁড়াতে না পারে। বিদেশে এ ধরনের জরিমানার বিধান রয়েছে। নকল ও ভেজাল খাদ্য যারা খাওয়াচ্ছে, তারা নীরব ঘাতক। এই সাইলেন্ট কিলারদের মোকাবিলায় কখনও কখনও আরও নিষ্ঠুর হতে হবে। আর নকল প্রতিরোধে সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও নিজেদের দায়িত্ব নিতে হবে। ভারত থেকে মেয়াদহীন লাইফসেভিং ওষুধ এনে নতুন লেবেল লাগিয়ে ঢাকার অভিজাত হাসপাতালে সরবরাহকারী একটি চক্র রয়েছে। তাদেরও আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে।
মো. মেফতাহ উদ্দিন খান
একটি পণ্য যখন নকল হয়, তখন সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ওই পণ্যে ভ্যাট পায় না। আবার নকলকারী ব্যবসায়ী আয়করও দেয় না। যখন কোনো উৎপাদক আনুষ্ঠানিক ব্যবসায় থাকে না, তখন সরকারই বঞ্চিত হয়। আমি কর কমিশনার ছিলাম। সেই সময় দেখেছি পুরান ঢাকার বাজারে কীভাবে আসল পণ্যের পাশাপাশি বড় কোম্পানির এজেন্টরা নকল পণ্য বাজারজাত করছে। বড় কোম্পানির এজেন্টরা জেনেবুঝে নকল পণ্য বিক্রি করছে। যারা কিনছে তারাও জানে কোন ব্যবসায়ী নকল পণ্য বিক্রি করে। এসব ব্যবসায়ীকে ধরা যায় না, কারণ তাদের কাছে বড় কোম্পানির ডকুমেন্ট থাকে। আবার অন্য ব্যবসায়ীরা এসব নকল পণ্যের বাজারজাতকারীদের ধরতে সহযোগিতাও করছে না। আমি মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতিকে অনুরোধ করেছিলাম, তারা সহযোগিতা করেনি। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে।
সাজ্জাদুল বারী
বিএসটিআইর কাজ মান নির্ধারণ করা। বর্তমানে বিএসটিআই দেশে তৈরি ১৮১টি পণ্যের লাইসেন্স দেয়। আর আমদানি করা ৫৫টি পণ্যে লাইসেন্স দিয়ে থাকে। এসব পণ্যের নমুনা বাজার থেকে সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। কোনো পণ্যে মান বজায় না থাকলে সংশ্নিষ্ট কোম্পানিকে সতর্ক করা, লাইসেন্স স্থগিত করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসব করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে অনেক ধরনের পণ্যই নকল হচ্ছে। নকল প্রতিরোধে বিএসটিআই অভিযান চালিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করছে। কোনো কোনো পণ্যে নিম্নমান পাওয়া যায়। যেমন- বোতলজাত পানি ৩৩টি প্যারামিটারে পরীক্ষা করা হয়। একটি প্যারামিটারও ঠিক না থাকলে ওই কোম্পানিকে জরিমানা করা হয় বা লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। বিএসটিআই এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে সচেতন করার কাজ করছে, যাতে সব পর্যায়ে মান ঠিক থাকে। নকল প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যাদের পণ্য নকল হচ্ছে, তাদেরকেও দায়িত্ব নিতে হবে। তা না হলে সরকারি সংস্থা পুরো কাজ সম্পন্ন করতে পারবে না।
গোলাম মঈন উদ্দিন
সমকালের উদ্যোগটি সময়োপযোগী। তবে মনে রাখতে হবে শুধু আলোচনা করে নকল প্রতিরোধ করা যাবে না। ভোক্তা যদি জানেন কোন পণ্য নকল, তাহলে তা কিনবেন না। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভোক্তারা বুঝতে পারেন না। এজন্য ক্রেতাদের সচেতনতার পাশাপাশি বিক্রেতাদের দিকেও নজর দিতে হবে। আর যারা নকল পণ্য তৈরি করছে তাদের শাস্তি হতে হবে কঠোর। বর্তমানে নকলকারীরা ধরা পড়লেও অনেক সময় জামিন পেয়ে যায়। এ কারণে আইন হওয়া উচিত জামিন অযোগ্য। প্রতি শলাকা সিগারেটের বিক্রয় মূল্যের ৭১ থেকে ৮১ শতাংশ অর্থ সরকার রাজস্ব হিসেবে পেয়ে থাকে। ফলে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সিগারেট বাজারজাত করতে পারলে অনেক লাভ। এজন্য রাতারাতি অনেক কোম্পানি হয়েছে। অনেক জায়গায় নকল কারখানা ধরা পড়ছে। নকল পণ্য বা সিগারেট তৈরিতে যেসব মেশিন ব্যবহার হচ্ছে, সেগুলো ধ্বংস করার উদ্যোগ দরকার। নকল করতেও বিনিয়োগ করতে হয়। সেই বিনিয়োগ নষ্ট হলে নকলকারীরা নিরুৎসাহিত হবে। এক সময় মোট সিগারেটের ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত নকল হচ্ছিল। এখন তা কমে ৭ থেকে ৮ শতাংশে নেমেছে। র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে কাজ করছে। তাদেরকে ধন্যবাদ। সমকাল এগিয়ে এসেছে। সমকালকেও ধন্যবাদ। এই আলোচনায় যেসব সুপারিশ উঠে আসবে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
আহসান খান চৌধুরী
সরকার ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করলে শতভাগ সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। আমরা প্রতিদিন নকল পণ্যের বিরুদ্ধে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করছি। নকল পণ্যের কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি। নকল পণ্যের কারণে অনেক সময় ভালো পণ্য হারিয়ে যাচ্ছে। শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষ নকল পণ্যের মাধ্যমে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারিত হচ্ছেন। আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠানকে পাশে পেলে নকল পণ্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। সমকাল নকল পণ্য প্রতিরোধে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা দেশের জন্য অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এ উদ্যোগের সঙ্গে আমরা সবসময় থাকব।
কেদার লেলে
নকল যারা করেন, তারা মেধাবী। কিন্তু তারা তাদের মেধা খারাপ কাজে ব্যবহার করছেন। এতে দেশ রাজস্ব হারাচ্ছে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে। যদিও বিশ্বব্যাপী এই অবৈধ ব্যবসা রয়েছে। পুরো বিশ্বের ব্যবসার ৫ শতাংশ হয় অবৈধ প্রক্রিয়ায়। ইউনিলিভার এই নকল ঠেকাতে বাংলাদেশে বাজারজাত করা পণ্যের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশই স্থানীয় কারখানায় তৈরি করে। এরপরও বাজারে সরবরাহ করা পণ্যের নকল হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআই এবং আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা নকলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, যা ইতিবাচক। নকল প্রতিরোধে মেধাস্বত্ব সুরক্ষা এবং আমদানি পর্যায়ে কঠোর পর্যবেক্ষণ দরকার। দরকার শাস্তি ও নকলকারীদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা।
সৈয়দ আলমগীর
গবেষণায় উঠে এসেছে, ৩০ শতাংশ কসমেটিক ও অন্যান্য পণ্য নকল হচ্ছে। দেশে মশার কয়েলের দেড় হাজার কোটি টাকার মার্কেট। নকল কোম্পানির দৌরাত্ম্যে এখন আসল মশাল কয়েল তৈরির অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। মানসম্মত কয়েলের কারণে মশা চলে যাবে। মশা মরবে না। কিন্তু ভেজাল কয়েলে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানোর কারণে মশা মরে যাচ্ছে। নকল কোম্পানিগুলোর ভ্যাট ও ট্যাক্স দিতে হয় না। নকলের কারণে প্রচুর রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আর ভোক্তারা পাচ্ছেন খারাপ পণ্য। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তো কেউ পণ্য কিনে না। তবে নিরাপদ পণ্য কিনতে পারা ভোক্তার অধিকার। এটা কেনার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
এস এম শফিউজ্জামান
সমকাল খুবই ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের দেশে এ বিষয়ে আলোচনা কম হয়। অন্যান্য পণ্যের চেয়ে ওষুধ নকল হওয়া বিপজ্জনক। এক্ষেত্রে ওষুধ কোম্পানিগুলোরও সমস্যা আছে। অধিকাংশ কোম্পানি ওষুধ বাজারে ছেড়ে দিয়ে বসে আছে। কোনো তদারকি নেই। ঔষধ প্রশাসনের এতদিন লোকবল কম ছিল। এখন লোকবল হয়েছে। বাজারে কিছু অভিযানও চলছে। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোক আছে, এমন ঘোষণার পর মাস্ক ও স্যানিটাইজারের দাম বেড়ে গেছে। ৫ টাকার মাস্ক ১০০ টাকায় বিক্রি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটি চক্র আছে, যারা জনপ্রিয় পণ্য নকল করে। এই চক্র ভাঙতে হবে। এজন্য উৎপাদক ও ভোক্তার সচেতনতার পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার।
জেসমিন জামান
নকল পণ্যের কারণে ভোক্তা, প্রকৃত উৎপাদক ও সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভোক্তারা একদিকে মানহীন পণ্য পাচ্ছেন, অন্যদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। উৎপাদকরা বাজার হারাচ্ছেন। আর সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। প্রসাধন পণ্যে অনেক বেশি নকল হয়। স্থানীয় ও আমদানি করা উভয় ধরনের প্রসাধন পণ্যই নকল হচ্ছে। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মীরা দোকানে দোকানে গিয়ে নকল পণ্য পাচ্ছেন। আর আমদানি করা প্রসাধনের প্রায় অর্ধেকই নকল। এসব পণ্য পাইকারি বাজারের মাধ্যমে খুচরা পর্যায়ে আসছে। নকল প্রতিরোধে ব্যবহূত পণ্যের মোড়ক ধ্বংস করা একটি উপায় হতে পারে। এতে প্লাস্টিক ও নকল দুটোই কমবে। মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নকল পণ্য প্রতিরোধে খুবই আন্তরিক। তবে এসব সংস্থার সক্ষমতা আরও বাড়ানো দরকার। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে এসব সংস্থা কাজ করছে।
মেজবাহ উদ্দিন
নকল মোবাইল ফোন ব্যবহারের একাধিক খারাপ দিকের একটি হলো, ওই ফোন ব্যবহার করে অপরাধ ঘটতে পারে। মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে অবৈধ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা স্থানান্তর হতে পারে। মোবাইলের আইএমইআই নম্বর চেক করতে পারার কারণে নকলের ব্যবহার অনেকাংশে কমছে।
শাহাদাত হোসেন
অনেক আগে থেকেই অ্যামচেম নকল প্রতিরোধে কথা বলে আসছে। বিশেষ করে মেধাস্বত্ব রক্ষায় এটা জরুরি। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব রক্ষা খুবই জরুরি। নকল প্রতিরোধে বর্তমানে যে আইন আছে তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি সংস্থা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। এক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতিও রয়েছে। আবার শাস্তিও পর্যাপ্ত নয়। আইন কার্যকরে সংশ্নিষ্টদের মধ্যে সমন্বয় ও শাস্তি বাড়াতে হবে। আবার ঢাকায় নকলবিরোধী অনেক কার্যক্রম হলেও ঢাকার বাইরে কম। কিন্তু ঢাকার বাইরেই বেশি জনগণ বাস করছে এবং সেখানে বেশি পণ্য বিক্রি হচ্ছে। নকল পণ্যও বেশি যাচ্ছে। এজন্য নকল প্রতিরোধে ঢাকার বাইরেও তদারকি বাড়াতে হবে।
এন কে এ মবিন
নকলের কারণে মানুষের জীবন যেমন ঝুঁকিতে পড়ে, তেমনি একটি সমাজও পেছনে পড়ে যায়। এজন্য নকল করার শাস্তি বাড়ানো দরকার। কখনও কখনও রেভিনিউ স্ট্যাম্পের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। অতিরিক্ত চাহিদার কারণে একশ টাকার স্টাম্প পাঁচশ টাকায়ও বিক্রি হয়। এজন্যই নকল হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের যে সংস্থা রেভিনিউ স্ট্যাম্প সরবরাহ করছে তাদেরকে সরবরাহ ঠিক রাখার দায়িত্ব নিতে হবে। স্ট্যাম্পের সরবরাহ বাড়ানো কঠিন কাজ নয়। আমরা ব্যবসায়ীরা বারবার বলার পরও তা হচ্ছে না। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি নকলের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারও বাড়াতে হবে এবং নকলকারীদের সৎ ব্যবসার সুযোগ দিতে হবে।
সারওয়ার আলম
নকল পণ্য প্রতিরোধে দু-একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কারও নিজেদের সার্ভিলেন্স টিম নেই। নামিদামি প্রতিষ্ঠানের নকল পণ্য জব্দ হলে এর সঙ্গে জড়িতরা যাতে শাস্তি পায় তা নিশ্চিত করতে ওই কোম্পানির পক্ষ থেকেও আইনি সাপোর্ট দেওয়া উচিত। অনেক সময় জব্দ মালপত্র নেওয়ার ক্ষেত্রে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ট্রাক ভাড়াও রাষ্ট্রকে বহন করতে হয়। নকল পণ্য প্রতিরোধের দায় রাষ্ট্রের একার নয়।
নাহিদা আক্তার
সমকালের উদ্যোগ অত্যন্ত ইতিবাচক। এতে তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে। সামগ্রিকভাবে নকল প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তবে আমি একটা বিষয় জোর দিয়ে বলতে চাই, যারা নকল পণ্য তৈরি বা বাজারজাত করেন তাদের শাস্তির পরিবর্তে মূলধারার ব্যবসায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। কারণ তারা প্রকৃত ব্যবসার সুযোগ পেলে ভালো করবে। তাতে দেশের লাভ হবে।
মনিরুল বাশার
স্বর্ণের পরেই চোরাইপথে অবৈধ মোবাইল দেশে আসে। এর কারণ হচ্ছে অল্প পরিসরে বেশি পণ্য আনা যায়। আবার এতে লাভ বেশি। এর একটা কারণ আছে, বৈধ পথে মোবাইল আমদানিতে শুল্ক্ক অনেক বেশি। তবে অবৈধ মোবাইল চেনা সহজ। আইএমই নম্বর দিয়ে এটা চেনা যায়। সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে চোরাই পথে মোবাইল ফোন আসা কমে এসেছে। তবে আইএমই নম্বর নিবন্ধনের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ মোবাইলের মাধ্যমে অনেক অপরাধ হয়ে থাকে। এই নিবন্ধন থাকলে তা হবে না।
দেশে নকল ও অবৈধ পণ্যের প্রধান প্রধান খাত
প্রসাধনী : বাজারে বিক্রি হওয়া প্রসাধনীর একটি বড় অংশই নকল। অভিযানে সবচেয়ে বেশি ধরা পড়ছে নকল প্রসাধনী। পুরান ঢাকার গলি-ঘুপচিতে বহুতল আবাসিক ভবনে গড়ে তোলা হয়েছে নকল প্রসাধনীর কারখানা।
ওষুধ : নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রির বিরুদ্ধে গত বছর ভ্রাম্যমাণ আদালত দুই হাজার ১৪৫টি মামলা দায়ের করেন। জব্দ করা হয় প্রায় ৩২ কোটি টাকা মূল্যের নকল ওষুধ। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় ৪৭ কোটি টাকা মূল্যের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়।
সিগারেট : রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে দেশের বিভিন্ন কাস্টম হাউস ও ভ্যাট কমিশনারেটের আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক কোটি ৪১ লাখ ৯৪ হাজার শলাকা সিগারেট আটক করা হয়। এসব সিগারেটের মোট মূল্য ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
মোবাইল হ্যান্ডসেট : বিটিআরসির অভিযান আর বৈধ আমদানিকারকদের সচেতনতামূলক প্রচার সত্ত্বেও অবৈধ এবং নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না। অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেটের বাজার প্রায় চার হাজার কোটি টাকার। সরকার বছরে রাজস্ব হারাচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।
রেভিনিউ স্ট্যাম্প : নকল স্ট্যাম্পের কারণে বছরে কমপক্ষে ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সব ধরনের স্ট্যাম্পই কমবেশি নকল হচ্ছে। যারা জাল স্ট্যাম্প তৈরি করে তাদের অনেকের নিজস্ব ছাপাখানা আছে।
সঞ্চালক
মুস্তাফিজ শফি
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
সমকাল
আলোচকবৃন্দ
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী
স্পিকার
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন
শিল্পমন্ত্রী, শিল্প মন্ত্রণালয়
গোলাম রহমান
সভাপতি, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন
অব বাংলাদেশ (ক্যাব)
শেখ ফজলে ফাহিম
সভাপতি, এফবিসিসিআই
ড. বেনজীর আহমেদ
মহাপরিচালক, র্যাব
(বর্তমানে পুলিশ মহাপরিদর্শক)
মো. মেফতাহ উদ্দিন খান
সদস্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
সাজ্জাদুল বারী
পরিচালক, বিএসটিআই
গোলাম মঈন উদ্দিন
চেয়ারম্যান, ব্রিটিশ আমেরিকান
টোব্যাকো বাংলাদেশ
আহসান খান চৌধুরী
চেয়ারম্যান
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ
কেদার লেলে
চেয়ারম্যান ও সিইও
ইউনিলিভার বাংলাদেশ
সৈয়দ আলমগীর
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
এসিআই কনজুমার ব্র্যান্ড
এস এম শফিউজ্জামান
মহাসচিব
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি
জেসমিন জামান
প্রধান বিপণন কর্মকর্তা
স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড
মেজবাহ উদ্দিন
যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ মোবাইল
ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন
শাহাদাত হোসেন
নির্বাহী পরিচালক, আমেরিকান চেম্বার
অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম)
এন কে এ মবিন
সিনিয়র সহসভাপতি
ঢাকা চেম্বার
সারওয়ার আলম
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র্যাব
নাহিদা আক্তার
সহসভাপতি, জুনিয়র চেম্বার
অব কমার্স (বাংলাদেশ) নর্থ
মনিরুল বাশার
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ মোবাইল
ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন
অনুলিখন
সাহাদাত হোসেন পরশ
বিশেষ প্রতিনিধি, সমকাল
শেখ আবদুল্লাহ
সিনিয়র রিপোর্টার, সমকাল
আলোকচিত্র
মাহবুব হোসেন নবীন
মুস্তাফিজ শফি
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সমকাল এবার দেশব্যাপী নকল পণ্যবিরোধী প্রচারাভিযানে নেমেছে। কেননা, শুধু পত্রিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমের দায়বদ্ধতা শেষ হয়ে যায় না। সামাজিক ও দৈনন্দিন জীবনের নানা বিষয়েও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হয়। সমকাল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই রাষ্ট্র, সমাজ ও নাগরিকের প্রতি দায়িত্বশীল। প্রত্যেকে যার যার খাতে একটি দৃষ্টান্ত রাখার মতো ভালো কাজ করলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা শতভাগ বাস্তবায়ন হবে। বছরজুড়েই নকল পণ্যবিরোধী এই কার্যক্রম চালিয়ে যাবে সমকাল। বছর শেষে নকলবিরোধী নানা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য ভূমিকার জন্য বিচারকমণ্ডলীর মাধ্যমে মনোনীত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে একাধিক ক্যাটাগরিতে পুরস্কার ও ক্রেস্ট দেবে সমকাল।
নকল পণ্যের কারণে আর্থিক ক্ষতি কয়েক হাজার কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি তো রয়েছেই। দেশে অনেক পণ্যই নকল হচ্ছে। নামিদামি ব্র্যান্ডের নকল পণ্য ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানির নকল ওষুধও বাজারে বিক্রি হচ্ছে। নকল-ভেজাল ও মানহীন ওষুধ উৎপাদনের মূলে রয়েছে খোলাবাজারে বিক্রি হওয়া কাঁচামাল। অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি বন্ধ না হওয়ার কারণে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি ক্রেতারাও নিম্ন মানের পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। এছাড়া অবৈধ কারখানায় সিগারেট তৈরি, নকল ট্যাক্স স্ট্যাম্প ব্যবহার, একই ট্যাক্স স্ট্যাম্প বারবার ব্যবহার ও চোরাই পথে সিগারেট আমদানি করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সরকারকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। নকল-জাল স্ট্যাম্পের কারণে সরকার ওই খাতেও কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী
নকল পণ্য বর্জনের জন্য সমকাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী উদ্যোগ নিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা প্রশংসনীয়। তাদের এই প্রচারাভিযান চলমান থাকবে বলে জেনেছি। নকল পণ্যের বিষয়টি জনস্বাস্থ্যের বিবেচনায় নিলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা জীবনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। কাজেই সমকালের এমন উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। নকল-ভেজাল পণ্য বন্ধে শুধু অভিযান চালালে হবে না; এজন্য সচেতনতাও জরুরি। সচেতনতা তৈরি হলে ভোক্তা নিজেই নকল পণ্য কিনবে না। নকল পণ্য ঠেকাতে সবার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি থাকা দরকার। যারা পণ্য উৎপাদন করছে তারা পণ্যের গায়ে বিশেষ এমন কিছু ব্যবহার করতে পারে যাতে ভোক্তা সহজেই দেখে বুঝতে পারে কোনটা আসল আর কোনটা নকল। নকল পণ্য নিয়ে যেসব সমস্যা রয়েছে সে ব্যাপারে আমরা সবাই একমত। নকল পণ্য প্রতিরোধে আমাদের আইন রয়েছে। সেটা যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে কিনা এটাই হলো সবচেয়ে জরুরি। অভিযান থাকবে এবং আইনের কঠোরতার পাশাপাশি সমস্যার মূলেও যেতে হবে। নকল পণ্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানো সবচেয়ে জরুরি। এক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে পারে। সমকাল বিভিন্ন ফোরামের সঙ্গে সচেতনতামূলক এই কর্মসূচি চালিয়ে যেতে পারে। সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় নকল পণ্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে পারেন। এই আন্দোলনকে তৃণমূল পর্যন্ত নিতে হবে। সমকাল সচেতনতা বাড়ানোর ওপর বেশি জোর দিয়েছে- এটাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতার মধ্য দিয়ে নকল পণ্য প্রতিরোধ করতে পারলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন
সাধারণত দেখা যায় বড় বড় প্রতিষ্ঠান সব ধরনের পণ্য তৈরি করতে চায়। ফলে ছোট প্রতিষ্ঠানের জন্য বাজারে টিকে থাকা দায় হয়ে যায়। তখন ছোট কোম্পানি কোনো কোনো ক্ষেত্রে নকল পণ্য বানানো শুরু করে। তাই বড় কোম্পানির উচিত সব ধরনের পণ্য প্রস্তুত না করা। কিছু পণ্য ছোট কোম্পানির জন্য ছেড়ে দেওয়া উচিত। অধিক ক্যাশপ্রেম বাদ দিয়ে তাদের দেশপ্রেম বাড়ানো উচিত। বড় কোম্পানি সব পণ্য তৈরি করতে পারবে না- এর জন্য আইন করা দরকার। নকল ও ভেজাল পণ্য ঠেকাতে সরকারের ওপর সব দায়িত্ব ছেড়ে দিলে হবে না। বড় প্রতিষ্ঠানের উচিত নকল প্রতিরোধে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানো এবং নিজস্ব টিম তৈরি করা। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও এক সময় নকল ছিল। এটি সারাতে অনেক সময় লেগেছে। সাদা কাপড় পরা মানুষ মনের দিক থেকে সাদা হলে দেশ থেকেও নকল পণ্য একদিন উঠে যাবে। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করব। ভেজালবিরোধী অভিযান কিন্তু র্যাবের পরিচালনা করার কথা নয়। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো অভিযানে র্যাবের সহযোগিতা চাইলে তখন তারা সহায়তা করতে পারে। তবু অন্য কাজের বাইরে র্যাব নকলবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। এজন্য তারা সাধুবাদ পেতে পারে।
গোলাম রহমান
ভোক্তারা নকল, ভেজাল, নিম্নমান এবং মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ও সেবার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এতে শুধু আর্থিক ক্ষতি হয় তা নয়, স্বাস্থ্যগত ক্ষতিও হয়। যেখানে ভোক্তার প্রাণের ঝুঁকি আছে এমন কাজে আইনে মাত্র দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এটা এক ধরনের দুর্বলতা। আইন সংশোধন করে এই দুর্বলতা দূর করা দরকার। নকল ও ভেজালের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকা থেকে যতদূরে যাবেন ততই নকল বেশি। দেশে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের লোক বেশি। নকল পণ্যের দাম কম হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ তা কিনছে। এজন্য মানুষের সচেতনতাও বাড়াতে হবে। অন্যদিকে নকল প্রতিরোধে সরকার বেশ কিছু আইন করেছে। এসব আইন বাস্তবায়নে কিছু প্রতিষ্ঠানও করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবল ও দক্ষতায় ঘাটতি রয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে এই ঘাটতি দূর করতে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে।
শেখ ফজলে ফাহিম
নকল প্রতিরোধে সমকালের উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। এ উদ্যোগের সঙ্গে এফবিসিসিআই থাকতে চায়। নকল পণ্য তৈরি করতে তো কিছু মেশিন দরকার। কিছু কাঁচামাল দরকার। দেশে কোন মেশিনের বা কাঁচামালের কতটুকু চাহিদা তার সঠিক পরিসংখ্যান দরকার। এক্ষেত্রে সরকারের সংস্থাগুলোর সমন্বয় দরকার। বিশেষ করে শিল্প মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে সমন্বয় জরুরি। নকলকারীদের শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও থাকা দরকার। এজন্য আইন সংশোধন করে কার্যকর করা যায় এমনভাবে আইন প্রণয়ন করতে হবে। এমনভাবে আইন করতে হবে, যাতে নকল কমে আসে। এজন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিএসটিআই, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ঔষধ প্রশাসন বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে। নকল পণ্যের সঙ্গে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) সম্পৃক্ত। যেখানে নকলের প্রবণতা বেশি সেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসেন না। সুষ্ঠুভাবে নকল প্রতিরোধের জন্য জেলা পর্যায়ে বেশি বেশি সচেতনতা দরকার।
ড. বেনজীর আহমেদ
নকল ও ভেজাল পণ্য রোধ করা জাতির জন্য চ্যালেঞ্জ। তবে এরই মধ্যে আমরা অনেক সমস্যা অতিক্রম করে এসেছি। নকল পণ্যের সমস্যাও অতিক্রমযোগ্য। শুধু পণ্য কেন; নকল মানুষ, নকল ডাক্তার, নকল র্যাব, নকল সাংবাদিক, নকল সার্টিফিকেট, নকল ম্যাজিস্ট্রেটও আছে। দেশে এমন কিছু নেই যার নকল নেই! নকল পণ্য প্রতিরোধে দুটি দিক রয়েছে। একটি হলো আইন প্রয়োগ করা, আরেকটি সচেতনতা বাড়ানো। অভিযান ও মামলায় জরিমানার অঙ্ক বাড়াতে হবে। যাতে একবার জরিমানা করলে আর ঘুরে দাঁড়াতে না পারে। বিদেশে এ ধরনের জরিমানার বিধান রয়েছে। নকল ও ভেজাল খাদ্য যারা খাওয়াচ্ছে, তারা নীরব ঘাতক। এই সাইলেন্ট কিলারদের মোকাবিলায় কখনও কখনও আরও নিষ্ঠুর হতে হবে। আর নকল প্রতিরোধে সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও নিজেদের দায়িত্ব নিতে হবে। ভারত থেকে মেয়াদহীন লাইফসেভিং ওষুধ এনে নতুন লেবেল লাগিয়ে ঢাকার অভিজাত হাসপাতালে সরবরাহকারী একটি চক্র রয়েছে। তাদেরও আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে।
মো. মেফতাহ উদ্দিন খান
একটি পণ্য যখন নকল হয়, তখন সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ওই পণ্যে ভ্যাট পায় না। আবার নকলকারী ব্যবসায়ী আয়করও দেয় না। যখন কোনো উৎপাদক আনুষ্ঠানিক ব্যবসায় থাকে না, তখন সরকারই বঞ্চিত হয়। আমি কর কমিশনার ছিলাম। সেই সময় দেখেছি পুরান ঢাকার বাজারে কীভাবে আসল পণ্যের পাশাপাশি বড় কোম্পানির এজেন্টরা নকল পণ্য বাজারজাত করছে। বড় কোম্পানির এজেন্টরা জেনেবুঝে নকল পণ্য বিক্রি করছে। যারা কিনছে তারাও জানে কোন ব্যবসায়ী নকল পণ্য বিক্রি করে। এসব ব্যবসায়ীকে ধরা যায় না, কারণ তাদের কাছে বড় কোম্পানির ডকুমেন্ট থাকে। আবার অন্য ব্যবসায়ীরা এসব নকল পণ্যের বাজারজাতকারীদের ধরতে সহযোগিতাও করছে না। আমি মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতিকে অনুরোধ করেছিলাম, তারা সহযোগিতা করেনি। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে।
সাজ্জাদুল বারী
বিএসটিআইর কাজ মান নির্ধারণ করা। বর্তমানে বিএসটিআই দেশে তৈরি ১৮১টি পণ্যের লাইসেন্স দেয়। আর আমদানি করা ৫৫টি পণ্যে লাইসেন্স দিয়ে থাকে। এসব পণ্যের নমুনা বাজার থেকে সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। কোনো পণ্যে মান বজায় না থাকলে সংশ্নিষ্ট কোম্পানিকে সতর্ক করা, লাইসেন্স স্থগিত করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসব করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে অনেক ধরনের পণ্যই নকল হচ্ছে। নকল প্রতিরোধে বিএসটিআই অভিযান চালিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করছে। কোনো কোনো পণ্যে নিম্নমান পাওয়া যায়। যেমন- বোতলজাত পানি ৩৩টি প্যারামিটারে পরীক্ষা করা হয়। একটি প্যারামিটারও ঠিক না থাকলে ওই কোম্পানিকে জরিমানা করা হয় বা লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। বিএসটিআই এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে সচেতন করার কাজ করছে, যাতে সব পর্যায়ে মান ঠিক থাকে। নকল প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যাদের পণ্য নকল হচ্ছে, তাদেরকেও দায়িত্ব নিতে হবে। তা না হলে সরকারি সংস্থা পুরো কাজ সম্পন্ন করতে পারবে না।
গোলাম মঈন উদ্দিন
সমকালের উদ্যোগটি সময়োপযোগী। তবে মনে রাখতে হবে শুধু আলোচনা করে নকল প্রতিরোধ করা যাবে না। ভোক্তা যদি জানেন কোন পণ্য নকল, তাহলে তা কিনবেন না। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভোক্তারা বুঝতে পারেন না। এজন্য ক্রেতাদের সচেতনতার পাশাপাশি বিক্রেতাদের দিকেও নজর দিতে হবে। আর যারা নকল পণ্য তৈরি করছে তাদের শাস্তি হতে হবে কঠোর। বর্তমানে নকলকারীরা ধরা পড়লেও অনেক সময় জামিন পেয়ে যায়। এ কারণে আইন হওয়া উচিত জামিন অযোগ্য। প্রতি শলাকা সিগারেটের বিক্রয় মূল্যের ৭১ থেকে ৮১ শতাংশ অর্থ সরকার রাজস্ব হিসেবে পেয়ে থাকে। ফলে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সিগারেট বাজারজাত করতে পারলে অনেক লাভ। এজন্য রাতারাতি অনেক কোম্পানি হয়েছে। অনেক জায়গায় নকল কারখানা ধরা পড়ছে। নকল পণ্য বা সিগারেট তৈরিতে যেসব মেশিন ব্যবহার হচ্ছে, সেগুলো ধ্বংস করার উদ্যোগ দরকার। নকল করতেও বিনিয়োগ করতে হয়। সেই বিনিয়োগ নষ্ট হলে নকলকারীরা নিরুৎসাহিত হবে। এক সময় মোট সিগারেটের ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত নকল হচ্ছিল। এখন তা কমে ৭ থেকে ৮ শতাংশে নেমেছে। র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে কাজ করছে। তাদেরকে ধন্যবাদ। সমকাল এগিয়ে এসেছে। সমকালকেও ধন্যবাদ। এই আলোচনায় যেসব সুপারিশ উঠে আসবে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
আহসান খান চৌধুরী
সরকার ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করলে শতভাগ সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। আমরা প্রতিদিন নকল পণ্যের বিরুদ্ধে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করছি। নকল পণ্যের কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি। নকল পণ্যের কারণে অনেক সময় ভালো পণ্য হারিয়ে যাচ্ছে। শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষ নকল পণ্যের মাধ্যমে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারিত হচ্ছেন। আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠানকে পাশে পেলে নকল পণ্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। সমকাল নকল পণ্য প্রতিরোধে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা দেশের জন্য অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এ উদ্যোগের সঙ্গে আমরা সবসময় থাকব।
কেদার লেলে
নকল যারা করেন, তারা মেধাবী। কিন্তু তারা তাদের মেধা খারাপ কাজে ব্যবহার করছেন। এতে দেশ রাজস্ব হারাচ্ছে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে। যদিও বিশ্বব্যাপী এই অবৈধ ব্যবসা রয়েছে। পুরো বিশ্বের ব্যবসার ৫ শতাংশ হয় অবৈধ প্রক্রিয়ায়। ইউনিলিভার এই নকল ঠেকাতে বাংলাদেশে বাজারজাত করা পণ্যের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশই স্থানীয় কারখানায় তৈরি করে। এরপরও বাজারে সরবরাহ করা পণ্যের নকল হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআই এবং আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা নকলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, যা ইতিবাচক। নকল প্রতিরোধে মেধাস্বত্ব সুরক্ষা এবং আমদানি পর্যায়ে কঠোর পর্যবেক্ষণ দরকার। দরকার শাস্তি ও নকলকারীদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা।
সৈয়দ আলমগীর
গবেষণায় উঠে এসেছে, ৩০ শতাংশ কসমেটিক ও অন্যান্য পণ্য নকল হচ্ছে। দেশে মশার কয়েলের দেড় হাজার কোটি টাকার মার্কেট। নকল কোম্পানির দৌরাত্ম্যে এখন আসল মশাল কয়েল তৈরির অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। মানসম্মত কয়েলের কারণে মশা চলে যাবে। মশা মরবে না। কিন্তু ভেজাল কয়েলে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানোর কারণে মশা মরে যাচ্ছে। নকল কোম্পানিগুলোর ভ্যাট ও ট্যাক্স দিতে হয় না। নকলের কারণে প্রচুর রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আর ভোক্তারা পাচ্ছেন খারাপ পণ্য। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তো কেউ পণ্য কিনে না। তবে নিরাপদ পণ্য কিনতে পারা ভোক্তার অধিকার। এটা কেনার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
এস এম শফিউজ্জামান
সমকাল খুবই ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের দেশে এ বিষয়ে আলোচনা কম হয়। অন্যান্য পণ্যের চেয়ে ওষুধ নকল হওয়া বিপজ্জনক। এক্ষেত্রে ওষুধ কোম্পানিগুলোরও সমস্যা আছে। অধিকাংশ কোম্পানি ওষুধ বাজারে ছেড়ে দিয়ে বসে আছে। কোনো তদারকি নেই। ঔষধ প্রশাসনের এতদিন লোকবল কম ছিল। এখন লোকবল হয়েছে। বাজারে কিছু অভিযানও চলছে। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোক আছে, এমন ঘোষণার পর মাস্ক ও স্যানিটাইজারের দাম বেড়ে গেছে। ৫ টাকার মাস্ক ১০০ টাকায় বিক্রি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটি চক্র আছে, যারা জনপ্রিয় পণ্য নকল করে। এই চক্র ভাঙতে হবে। এজন্য উৎপাদক ও ভোক্তার সচেতনতার পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার।
জেসমিন জামান
নকল পণ্যের কারণে ভোক্তা, প্রকৃত উৎপাদক ও সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভোক্তারা একদিকে মানহীন পণ্য পাচ্ছেন, অন্যদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। উৎপাদকরা বাজার হারাচ্ছেন। আর সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। প্রসাধন পণ্যে অনেক বেশি নকল হয়। স্থানীয় ও আমদানি করা উভয় ধরনের প্রসাধন পণ্যই নকল হচ্ছে। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মীরা দোকানে দোকানে গিয়ে নকল পণ্য পাচ্ছেন। আর আমদানি করা প্রসাধনের প্রায় অর্ধেকই নকল। এসব পণ্য পাইকারি বাজারের মাধ্যমে খুচরা পর্যায়ে আসছে। নকল প্রতিরোধে ব্যবহূত পণ্যের মোড়ক ধ্বংস করা একটি উপায় হতে পারে। এতে প্লাস্টিক ও নকল দুটোই কমবে। মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নকল পণ্য প্রতিরোধে খুবই আন্তরিক। তবে এসব সংস্থার সক্ষমতা আরও বাড়ানো দরকার। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে এসব সংস্থা কাজ করছে।
মেজবাহ উদ্দিন
নকল মোবাইল ফোন ব্যবহারের একাধিক খারাপ দিকের একটি হলো, ওই ফোন ব্যবহার করে অপরাধ ঘটতে পারে। মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে অবৈধ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা স্থানান্তর হতে পারে। মোবাইলের আইএমইআই নম্বর চেক করতে পারার কারণে নকলের ব্যবহার অনেকাংশে কমছে।
শাহাদাত হোসেন
অনেক আগে থেকেই অ্যামচেম নকল প্রতিরোধে কথা বলে আসছে। বিশেষ করে মেধাস্বত্ব রক্ষায় এটা জরুরি। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব রক্ষা খুবই জরুরি। নকল প্রতিরোধে বর্তমানে যে আইন আছে তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি সংস্থা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। এক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতিও রয়েছে। আবার শাস্তিও পর্যাপ্ত নয়। আইন কার্যকরে সংশ্নিষ্টদের মধ্যে সমন্বয় ও শাস্তি বাড়াতে হবে। আবার ঢাকায় নকলবিরোধী অনেক কার্যক্রম হলেও ঢাকার বাইরে কম। কিন্তু ঢাকার বাইরেই বেশি জনগণ বাস করছে এবং সেখানে বেশি পণ্য বিক্রি হচ্ছে। নকল পণ্যও বেশি যাচ্ছে। এজন্য নকল প্রতিরোধে ঢাকার বাইরেও তদারকি বাড়াতে হবে।
এন কে এ মবিন
নকলের কারণে মানুষের জীবন যেমন ঝুঁকিতে পড়ে, তেমনি একটি সমাজও পেছনে পড়ে যায়। এজন্য নকল করার শাস্তি বাড়ানো দরকার। কখনও কখনও রেভিনিউ স্ট্যাম্পের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। অতিরিক্ত চাহিদার কারণে একশ টাকার স্টাম্প পাঁচশ টাকায়ও বিক্রি হয়। এজন্যই নকল হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের যে সংস্থা রেভিনিউ স্ট্যাম্প সরবরাহ করছে তাদেরকে সরবরাহ ঠিক রাখার দায়িত্ব নিতে হবে। স্ট্যাম্পের সরবরাহ বাড়ানো কঠিন কাজ নয়। আমরা ব্যবসায়ীরা বারবার বলার পরও তা হচ্ছে না। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি নকলের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারও বাড়াতে হবে এবং নকলকারীদের সৎ ব্যবসার সুযোগ দিতে হবে।
সারওয়ার আলম
নকল পণ্য প্রতিরোধে দু-একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কারও নিজেদের সার্ভিলেন্স টিম নেই। নামিদামি প্রতিষ্ঠানের নকল পণ্য জব্দ হলে এর সঙ্গে জড়িতরা যাতে শাস্তি পায় তা নিশ্চিত করতে ওই কোম্পানির পক্ষ থেকেও আইনি সাপোর্ট দেওয়া উচিত। অনেক সময় জব্দ মালপত্র নেওয়ার ক্ষেত্রে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ট্রাক ভাড়াও রাষ্ট্রকে বহন করতে হয়। নকল পণ্য প্রতিরোধের দায় রাষ্ট্রের একার নয়।
নাহিদা আক্তার
সমকালের উদ্যোগ অত্যন্ত ইতিবাচক। এতে তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে। সামগ্রিকভাবে নকল প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তবে আমি একটা বিষয় জোর দিয়ে বলতে চাই, যারা নকল পণ্য তৈরি বা বাজারজাত করেন তাদের শাস্তির পরিবর্তে মূলধারার ব্যবসায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। কারণ তারা প্রকৃত ব্যবসার সুযোগ পেলে ভালো করবে। তাতে দেশের লাভ হবে।
মনিরুল বাশার
স্বর্ণের পরেই চোরাইপথে অবৈধ মোবাইল দেশে আসে। এর কারণ হচ্ছে অল্প পরিসরে বেশি পণ্য আনা যায়। আবার এতে লাভ বেশি। এর একটা কারণ আছে, বৈধ পথে মোবাইল আমদানিতে শুল্ক্ক অনেক বেশি। তবে অবৈধ মোবাইল চেনা সহজ। আইএমই নম্বর দিয়ে এটা চেনা যায়। সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে চোরাই পথে মোবাইল ফোন আসা কমে এসেছে। তবে আইএমই নম্বর নিবন্ধনের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ মোবাইলের মাধ্যমে অনেক অপরাধ হয়ে থাকে। এই নিবন্ধন থাকলে তা হবে না।
দেশে নকল ও অবৈধ পণ্যের প্রধান প্রধান খাত
প্রসাধনী : বাজারে বিক্রি হওয়া প্রসাধনীর একটি বড় অংশই নকল। অভিযানে সবচেয়ে বেশি ধরা পড়ছে নকল প্রসাধনী। পুরান ঢাকার গলি-ঘুপচিতে বহুতল আবাসিক ভবনে গড়ে তোলা হয়েছে নকল প্রসাধনীর কারখানা।
ওষুধ : নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রির বিরুদ্ধে গত বছর ভ্রাম্যমাণ আদালত দুই হাজার ১৪৫টি মামলা দায়ের করেন। জব্দ করা হয় প্রায় ৩২ কোটি টাকা মূল্যের নকল ওষুধ। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় ৪৭ কোটি টাকা মূল্যের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়।
সিগারেট : রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে দেশের বিভিন্ন কাস্টম হাউস ও ভ্যাট কমিশনারেটের আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক কোটি ৪১ লাখ ৯৪ হাজার শলাকা সিগারেট আটক করা হয়। এসব সিগারেটের মোট মূল্য ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
মোবাইল হ্যান্ডসেট : বিটিআরসির অভিযান আর বৈধ আমদানিকারকদের সচেতনতামূলক প্রচার সত্ত্বেও অবৈধ এবং নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না। অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেটের বাজার প্রায় চার হাজার কোটি টাকার। সরকার বছরে রাজস্ব হারাচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।
রেভিনিউ স্ট্যাম্প : নকল স্ট্যাম্পের কারণে বছরে কমপক্ষে ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সব ধরনের স্ট্যাম্পই কমবেশি নকল হচ্ছে। যারা জাল স্ট্যাম্প তৈরি করে তাদের অনেকের নিজস্ব ছাপাখানা আছে।
সঞ্চালক
মুস্তাফিজ শফি
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
সমকাল
আলোচকবৃন্দ
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী
স্পিকার
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন
শিল্পমন্ত্রী, শিল্প মন্ত্রণালয়
গোলাম রহমান
সভাপতি, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন
অব বাংলাদেশ (ক্যাব)
শেখ ফজলে ফাহিম
সভাপতি, এফবিসিসিআই
ড. বেনজীর আহমেদ
মহাপরিচালক, র্যাব
(বর্তমানে পুলিশ মহাপরিদর্শক)
মো. মেফতাহ উদ্দিন খান
সদস্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
সাজ্জাদুল বারী
পরিচালক, বিএসটিআই
গোলাম মঈন উদ্দিন
চেয়ারম্যান, ব্রিটিশ আমেরিকান
টোব্যাকো বাংলাদেশ
আহসান খান চৌধুরী
চেয়ারম্যান
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ
কেদার লেলে
চেয়ারম্যান ও সিইও
ইউনিলিভার বাংলাদেশ
সৈয়দ আলমগীর
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
এসিআই কনজুমার ব্র্যান্ড
এস এম শফিউজ্জামান
মহাসচিব
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি
জেসমিন জামান
প্রধান বিপণন কর্মকর্তা
স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড
মেজবাহ উদ্দিন
যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ মোবাইল
ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন
শাহাদাত হোসেন
নির্বাহী পরিচালক, আমেরিকান চেম্বার
অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম)
এন কে এ মবিন
সিনিয়র সহসভাপতি
ঢাকা চেম্বার
সারওয়ার আলম
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র্যাব
নাহিদা আক্তার
সহসভাপতি, জুনিয়র চেম্বার
অব কমার্স (বাংলাদেশ) নর্থ
মনিরুল বাশার
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ মোবাইল
ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন
অনুলিখন
সাহাদাত হোসেন পরশ
বিশেষ প্রতিনিধি, সমকাল
শেখ আবদুল্লাহ
সিনিয়র রিপোর্টার, সমকাল
আলোকচিত্র
মাহবুব হোসেন নবীন