আড়াইহাজারে ব্রহ্মপুত্র নদ নাব্য হারিয়ে এখন মরা খালে রূপ নিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা ও অবৈধ দখলের কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। নদের নাব্য ফিরিয়ে আনা এবং নদ দখলমুক্ত করার জন্য প্রশাসন নিচ্ছে না কার্যকর কোনো ব্যবস্থা। এ অভিযোগ স্থানীয়দের। প্রশাসন বলছে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আড়াইহাজার ও পার্শ্ববর্তী থানা মাধবদীতে ডাইং, স্পিনিংসহ ছোট-বড় ৫৫টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে গত কয়েক বছরে ৪৫টি কারখানা তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) তৈরি করেছে। বাকি ১০টির ইটিপি নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, কারখানাগুলোতে ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশিরভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশ কিছু কারখানার ইটিপি যন্ত্র প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলায় নদটির পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।
রোকনউদ্দিন মোল্লা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, কলকারখানার বর্জ্যমিশ্রিত পানি পরিশোধন ছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলায় পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন চাহিদা (বিওডি) বেড়ে যাচ্ছে এবং নদের তলদেশে মারাত্মকভাবে অক্সিজেনের ঘাটতির সৃষ্টি হয়ে মাছ মারা যাওয়াসহ জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে।
সরেজমিন পরিদর্শন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদটি এক সময় আড়াইহাজার এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল চালিকাশক্তি ছিল। যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা ছিল নদটির। পাশাপাশি নদীপারের কৃষি জমিগুলো যেমন ছিল ফসলে ভরা, তেমনি নদীর পানিতে ছিল প্রচুর দেশীয় প্রজাতির মাছের সমাহার। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নদীর তীর দখল করে প্রকাশ্যে ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য, ময়লা-আবর্জনা। শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে নদের পানি দূষিত হয়ে লাল ও কালচে বর্ণ ধারণ করেছে। ফলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে নদের জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্ব। নদ থেকে শুধু কৃষি ফসল বা মাছের প্রাচুর্য হারিয়ে গেছে এমন নয়। অব্যাহত দখল ও বিষাক্ত বর্জ্যে দূষণের ফলে এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে নদটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আড়াইহাজারসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রায় ১০ লাখের বেশি মানুষের প্রতিদিনের ব্যবহৃত পানি, পায়খানার ট্যাঙ্কের দূষিত পানি পয়ঃনালার মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদে পড়ছে। কসাইখানা, মৎস্য প্রক্রিয়াজাত কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানার রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো পানি ও বর্জ্য সরাসরি নদে ফেলা হচ্ছে।
ইউএনও সুরাইয়া খান বলেন, 'আমাদের এলাকার যেসব কারখানা থেকে রঙমিশ্রিত পানি নদে ফেলা হচ্ছে, প্রথমে ওইসব কারখানাকে আইনের আওতায় এনে বন্ধ কর দিতে হবে। পরে পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর কারখানাগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'নদ রক্ষা বিষয়ে উপজেলা পরিষদের সভায় আমরা আলোচনা করেছি এবং তাতে জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।' নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ডাইং কারখানাগুলোতে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) আছে। তবে কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানাগুলো নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা সুনির্দিষ্টভাবে জানালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন