রাজনীতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে। তাদের মধ্যে মতবিরোধও বেশ পুরোনো। তবে ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে সেই বিরোধ চরমে পৌঁছায়। এ রাজ্যে ওই নির্বাচনে তৃণমূলকে হটাতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছিলেন মোদিসহ বিজেপির শীর্ষ ও রাজ্য নেতারা। ওই নির্বাচনের প্রচারের সময় মমতাকে দি-দি বলেও বারবার কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে শেষ হাসি হাসে মমতার দল। এরপর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েও কলাইকুণ্ডায় তৃণমূল নেত্রীর বিশেষ সাক্ষাৎ পাননি মোদি। তাদের মধ্যে কার্যত গত দুই বছরে সরাসরি কোনো বৈঠক হয়নি। এরই মধ্যে পেগাসাস কেলেঙ্কারি প্রকাশের পর মোদির প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা। এদিকে, আগামী লোকসভা নির্বাচনের মাধ্যমে বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে হটানোর ডাক দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। বর্তমানে মোদিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জোট করতে দিল্লিতে পাঁচ দিনের সফরে আছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা। বৈরিতার আবহের মধ্যে তাদের এমন সৌজন্য সাক্ষাৎকে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্নেষকরা।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার জন্য তার বাসভবনে যান। দুই নেতা আধা ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। আলোচনায় পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন, টিকা প্রাপ্তি, রাজ্যের উন্নয়নে বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা হয় তাদের। সাড়ে ৪টায় সেখান থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের মমতা বলেন, 'অনেক দিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল নিয়ে কথা হচ্ছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, এবার বিষয়টি দেখতে।'

এ ছাড়া এদিন টিকা নিয়েও তাদের মধ্যে কথা হয়। তৃণমূল নেত্রী বলেন, 'অনেক রাজ্য থেকে কম টিকা পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এ রাজ্যের জনসংখ্যার তুলনায় এই সরবরাহ যথেষ্ট নয়। আমাদের টিকাকরণের হার ভালো। ইতোমধ্যে সংক্রমণ ৩৩ শতাংশ থেকে কমে ১ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে আমরা চাই করোনার তৃতীয় ঢেউ আসার আগে পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেকের টিকাকরণ সম্পন্ন করতে। প্রধানমন্ত্রীকে সে কথা জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন তিনি।'

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ভালো হয়েছে দাবি করেন মমতা। তিনি বলেন, মোদি তার সব কথা শুনেছেন এবং দাবিগুলো খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে উপনির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি।

মমতা বলেন, 'এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। জয়ের পর এই সাক্ষাৎ করতেই হতো। তাই এসেছি। তবে এর সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেছি।'

এর আগে চলতি বছর পশ্চিমবঙ্গের কলাইকুণ্ডায় মোদির সঙ্গে দেখা হয়েছিল মমতার। তবে সেই সাক্ষাৎ ঠিক পাঁচ মিনিটের হয়েছিল। ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দিয়েই সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন মমতা। তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছিল বিস্তর।

সোমবার দিল্লি গেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে ২১ জুলাই শহীদ দিবসে মোদিকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বিরোধী শক্তিকে ঐক্যের ডাক দেন তিনি। তারপর বিজেপিবিরোধী আন্দোলনে মমতার রণকৌশলে সমর্থন দেয় কংগ্রেসসহ বিরোধী প্রায় সব দল। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে

সাক্ষাতের আগে কংগ্রেস নেতা কমলনাথের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা। দেখা করেন কংগ্রেসের আরেক নেতা আনন্দ শর্মার সঙ্গে। আজ সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে মমতার বৈঠক হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম দিল্লি সফর করছেন মমতা। তৃণমূলের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বিরোধী শক্তিগুলোকে একজোট করাই এই সফরের লক্ষ্য। বিরোধী শক্তিগুলো সুসংহত করে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য করে মাঠে নামবে তারা। এ কারণে পার্লামেন্টে ও বাইরে বিজেপিকে আক্রমণ বাড়িয়েছে তারা। খবর এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকার।

মন্তব্য করুন