মেডিকেল সায়েন্সের গবেষণা, নিউরোপ্যাথি নিয়ে কাজ করছি। নিউরোলজির পেশেন্ট ড্যানিয়েল, বয়স ত্রিশের কাছাকাছি; কেসটা খুব ভোগাচ্ছে। তার সমস্যাটা একটু ভিন্ন ধরনের। তাকে জিজ্ঞেস করলাম_
তুমি সারাক্ষণ ট্রাউজারের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে রাখ কেন?
নির্বিকারভাবে উত্তর দিল_
খুঁজে দেখি আছে কি-না?
মানে? কী খুঁজে দেখ?
বুঝলে না? পেনিসটা আছে কি-না?
কেন, ওটা যাবে কোথায়?
কোথাও যাবে না কিন্তু খুঁজে দেখতে ইচ্ছে করে।
খুঁজে পাও?
হুঁ, পাই। তবে সারাক্ষণ ধরে রাখি।
কেন?
আমার খালি মনে হয়, জিনিসটা বোধ হয় হারিয়ে ফেলেছি।
বলো কী!
হুঁ, ঠিকই বলছি।
তাই তুমি ধরে রাখ?
হুঁ।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে কত ঘণ্টা ধরে রাখ?
প্রায় ২৪ ঘণ্টাই...।
তুমি কোনো কাজকর্ম...মানে চাকরি-বাকরি করো না?
করি, তবে তোমাদের মতো হোয়াইট কলার জব না। মাঝারি ধরনের গায়ে-খাটা কাজ।
কাজের জায়গায় কেমন কর?
প্যান্টের সাইড পকেটের ভেতরে কেটে নিয়েছি। কিন্তু তুমি এত অবাক হচ্ছ কেন?
না, অবাক হচ্ছি না; বোঝার চেষ্টা করছি।
তুমি কোনোদিন ট্রাউজারের মধ্যে হাত ঢোকাওনি? নেড়েচেড়ে দেখনি? রুমের মধ্যে কিংবা বাথরুমে?
কী বিপদ! সত্য উত্তর দেওয়া তো বেশ কঠিন হয়ে গেল। হাই স্কুলের কিছু সহপাঠীর কথা মনে পড়ল। ওদের প্যান্টের সাইড পকেটের ভেতরেও ছেঁড়া ছিল। সারাক্ষণ বাম পকেটে হাত ঢুকিয়ে রাখত। পরীক্ষার হলে হাকিম স্যার নকল ধরার জন্য একজনের পকেটে হাত ঢুকিয়ে তো বেকায়দায়। স্যার শুধু কয়েকবার বললেন, 'হারামজাদা কোথাকার! তোর বাপেরে খবর দিতে হবে...দাঁড়া বদমাইশ...।' স্যার কটমট করতে করতে হাত ধুতে গিয়েছিলেন। আমি একবার সেই সহপাঠীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম_
তুই পকেটের মধ্যে হাত দিয়ে সারাক্ষণ কী এত নাড়াচাড়া করিস?
পয়সা গুনি, খুচরা পয়সা...হা-হা হি-হি...।
তোর কত পয়সা?
চোখেমুখে একধরনের বিকৃত আনন্দের ভঙ্গি করে বলল_
তুই বুঝবি না। পয়সা গোনার মজা আছে...অনেক মজা...হা-হা হি-হি...।
অনেক শিশুও প্যান্টের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে রাখে। মা-বাবা নিষেধ করলেও খুব একটা কাজ হয় না। সুযোগ পেলেই হাত ঢুকিয়ে দেয়। এ ধরনের বদ অভ্যাস ছাড়ানো খুব কঠিন। ড্যানিয়েলকে আবার জিজ্ঞেস করলাম_
তুমি কত বছর বয়স থেকে ট্রাউজারের মধ্যে হাত দেওয়া শুরু করেছ?
যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, শরীরের এই অঙ্গটি দিয়ে মূত্র ত্যাগ করা ছাড়াও আরও কিছু করার আছে।
কখন থেকে তুমি তোমার পুরুষাঙ্গটি হারিয়ে ফেলার অনুভূতিতে ভুগছ?
অনেক দিন হলো, চার-পাঁচ বছর তো হবেই।
অনেক সময় পেরিফেরিয়াল নিউরোপ্যাথির কারণে কিংবা নার্ভ সিস্টেম ড্যামেজ হলে শরীরের কোনো না কোনো অংশে নাম্বনেস সমস্যা হতে পারে। ডায়াবেটিস ও মাল্টিপ্ল স্কেলেরোসিসের কারণে নার্ভ ড্যামেজ হয়। ফলে পুরুষাঙ্গ হারিয়ে ফেলা কিংবা না থাকার অনুভূতি হতে পারে। তাই জানতে চাইলাম_
তোমার ডায়াবেটিস আছে?
না।
তুমি নিয়মিত কোনো ওষুধ খাও?
হুঁ। ঘুমের ওষুধ।
সাধারণত নারীদের মধ্যে মাল্টিপ্ল স্কেলেরোসিস সমস্যা দেখা যায়। সুতরাং ড্যানিয়েলের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য না-ও হতে পারে। তবে আরও অনেক কারণে নার্ভ সিস্টেম অকার্যকর হতে পারে। কেসটা নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করা দরকার। ফ্যামিলি হিস্ট্রিসহ আরও কিছু তথ্য জানতে চাইলাম_
তোমার মা-বাবা কারও কি এ ধরনের সমস্যা আছে?
মায়ের এ সমস্যা ছিল না।
বাবার?
বাবার এ সমস্যা থাকলেও থাকতে পারে।
মায়ের ছিল না বলছ। তার মানে কি এখন আছে?
আরে না; মা তো বেঁচেই নেই।
ও আচ্ছা, সরি। মা মারা গেছেন তোমার কত বছর বয়সে?
আমার বয়স তখন ৭ বছর।
আচ্ছা, তোমার বাবার থাকলেও থাকতে পারে, বলছ কেন?
কারণ মা পরকীয়ায় জড়িয়েছিলেন।
তুমি তো তখন অনেক ছোট, জানলে কীভাবে?
বিভিন্নভাবে। মায়ের মৃত্যুর পরে ব্যাপারটি সবাই জেনে গেছে।
তোমার মা কীভাবে মারা গেছেন?
সড়ক দুর্ঘটনায়।
সড়ক দুর্ঘটনার সাথে তোমার মায়ের মাল্টিপ্ল স্কেলেরোসিসের সম্পর্ক কী?
ওই যে তুমি জিজ্ঞেস করলে, মায়ের পরকীয়ার কথা জানলাম কীভাবে?
আচ্ছা, আরেকটু বলবে?
মা মারা গেছেন এক লোকের কোলের ওপর মুখ রেখে। গাড়িটা একটা দুধের ট্রাকের সাথে একেবারে সামনাসামনি হিট, ছিটকে গিয়ে একটা ওক গাছের কাছে পড়েছিল। দুমড়ে-মুচড়ে প্রায় ভর্তা। একেবারে লাল রঙের পাপড় ভাজা হয়ে গিয়েছিল। যদিও ডেভিড তার একটি অঙ্গ হারিয়েছে, কিন্তু আমি তো হারিয়েছি মা। তখন থেকেই আমার ভাগ্য আমার সম্ভাবনাকে তিরস্কার করছে।
আচ্ছা! বলো কী?
গাড়িটা ছিল উজ্জ্বল লাল রঙের মার্সিডিস; মায়ের খুব শখের গাড়ি। যদিও নতুন ছিল না, সেকেন্ডহ্যান্ড। এই গাড়িটা নিয়েই মা চলে গিয়েছিলেন; দোতলার জানালায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মায়ের চলে যাওয়া দেখেছি। আমি তাকিয়েই ছিলাম, যতক্ষণ মায়ের গাড়িটা দেখা যায়। কিন্তু ইভানাদের বাড়ির গোলাপ বাগান আর বারো বিড়ালের বাড়িটার পর গাড়িটা আর দেখা যায়নি।
তারপর?
তারপর আর কী? আমি কখনও বুঝতেই পারিনি, মায়ের সাথে আমার জগৎটা কত দ্রুত দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাচ্ছে! দোতলার সেই জানালার কাছে গিয়ে কতদিন যে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। আমার অপেক্ষা ধীরে ধীরে প্রতীরায় পরিণত হয়েছে; কিন্তু মা আর ফিরে আসেননি। আমার স্বপ্ন, সব সুখ সেই অসহায় বালকের পুরনো সোয়েটারের গল্পের মতো হয়ে গেল। একদিন সোয়েটারটির হাতা ছিঁড়ে গেল, আরেক দিন কাঁধের কাছে ছিদ্র, তারপর পিঠের কাছে, যতই ছিঁড়ে-ফেটে যাক, তার পরও বালক সোয়েটারটি ফেলে দেয়নি, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে নগ্ন হয়ে গিয়েছিল।
খুবই ব্যতিক্রমী ঘটনা।
মা কীভাবে মারা গেছেন, পরবর্তী সময়ে তা খালামণির কাছে একটু শুনেছি।
একটু কেন?
কারণ, খালামণি সবটুকু বলেননি। আমার বয়স তখন মাত্র ৭। আস্ত একটা পুরুষাঙ্গ মুখের মধ্যে নিয়ে মা মারা গেছেন, তা আবার ডেভিডের। এ কথা একটা ৭ বছরের সন্তানের কাছে বলা যায়?
না, বলা যায় না।
মৃত্যুরও একটা মাহাত্ম্য আছে। কোনো কোনো মৃত্যু লজ্জার, অপমানের...। আবার কোনো কোনো মৃত্যু গৌরবের। তাই না?
হুঁ, তাই।
পাড়া-প্রতিবেশী, কফিশপ, পানশালায় আমাকে দেখিয়ে একে অপরকে কুৎসিতভাবে ইঙ্গিত করে চাপা গলায় বলত, 'ওই যে আসছে...মুখের মধ্যে...।' তারপর অট্টহাসি, কেউবা চাপা হাসির মজা নিত। বুঝতেই পারছ, মায়ের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে চারদিকে কী রকম মুখরোচক গল্প রটে গিয়েছিল! গল্পের ডালপালাও গজিয়েছিল অনেক। কোনো এক অদ্ভুত কারণে, বড়রা এ রকম গল্প শুনতে এবং বিশ্বাস করতে খুব ভালোবাসে। আর জানোই তো, সেক্স স্ক্যান্ডাল ভূতের গল্পের চেয়েও জনপ্রিয়, বিবিসির চেয়েও বিশ্বাসযোগ্য। কারণ, ঘটনাটি একেবারে পর্নো ছবির মতো, চলন্ত গাড়িতে...ডেভিড ড্রাইভ করছিল, মা তার পাশেই। তাই সমাজের কারও আগ্রহের কোনো কমতি ছিল না। জীবনটা বিভীষিকাময় হয়ে গেল।
সমাজের মানুষ এমনই। কী করবে বলো?
সমাজের মানুষের আচরণ প্রথম প্রথম বুঝিনি। আস্তে আস্তে বুঝেছি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অপমানবোধটা প্রকট হতে লাগল। একটা সময় আর নিতে পারিনি। সমাজের প্রতি ঘৃণায় ঘর ছেড়ে পথে নেমেছিলাম। অচেনা জায়গায় চলে এসেছি। যেখানে কেউ আমাকে চেনে না, বুলিং করে না।
তুমি হোমলেস হয়ে গিয়েছিলে?
হুঁ। কী করব? আরও কত কিছু হয়েছি!
যেমন?
খেতে পাইনি, ঘুমানোর একটু জায়গা ছিল না। কত রাত স্টেশনে ঘুমিয়েছি! সিডনি শহরের হরেকৃষ্ণ মিশন চেনো?
হুঁ, চিনি।
হোমলেসদের ওরা ফ্রি খাবার দেয়; স্যালভেশন আর্মি জামা-কাপড় দেয়। ওরা ছিল বলেই বেঁচে আছি। এই শহরে আমার মতো মানুষদের একটু খাবার, জামা-কাপড় কিংবা চিকিৎসা দেওয়ার কিছু মানুষ হয়তো এখনও আছে। কিন্তু এতটুকু মায়া-মমতা দেখানো কিংবা ভালোবাসা দেওয়ার মানুষ নেই।

ড্যানিয়েলের চোখে অশ্রু টলমল। টিস্যু বাড়িয়ে দিলাম। ওর জন্য এখন বেশ খারাপ লাগছে, মায়াও লাগছে। টিস্যু হাতে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে সে বলল_
অনেক দিন পর আবার কাঁদলাম। একটা সময় অনেক কেঁদেছি। এখন আর সহজে কান্না পায় না। সবার চোখের তলদেশেই লুকানো একটা নদী আছে। আমার সেই নদীর পানি বোধ হয় শেষের দিকে।
একটু পর পরিবেশ হাল্কা করার জন্য ভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে জিজ্ঞেস করলাম_
তুমি কোন ক্লাস পর্যন্ত লেখাপড়া করেছ?
সেভেন পর্যন্ত।
আর পড়নি কেন?
স্কুলের ছেলে-মেয়েরা বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করত। অনেকেই আমাকে 'ভেড়া' ডাকত; 'ভেড়া ড্যানিয়েল'। অবস্থা এ রকম হয়ে গেল, 'ভেড়া ড্যানিয়েল' না বললে কেউ আমাকে চিনতই না। তা ছাড়া মায়ের মৃত্যুর ঘটনাটি আমার আগেই স্কুলের প্রায় সবাই জানত। আমার থেকে বয়সে বড় ছেলেদের মধ্যে ঘটনাটি আমাকে বলার জন্য তর সইত না। শুনেছি, মেয়েরাও আমাকে নিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হাসাহাসি করত। লজ্জা, অপমানে স্কুল ছেড়ে দিয়েছি। আর কোনোদিন যাইনি।
তোমার কখনও কোনো স্পোর্টস ইনজুরি কিংবা কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল?
না। সে রকম কোনো খেলাধুলাই তো করিনি, ইনজুরি হবে কীভাবে? অ্যাক্সিডেন্টও হয়নি।
খেলাধুলা করনি কেন?
খেলার মাঠেও স্কুলের মতো সমস্যায় পড়তে হতো। তাই খেলতে যেতাম না।
তোমার কখনও কোনো সার্জারি হয়েছে?
না।
তোমার মায়ের মৃত্যু নিয়ে তোমার বাবার সাথে কখনও কথা হয়েছে?
না, হয়নি। তবে ইজি চেয়ারে বসে বাবা কী যেন বিড়বিড় করতেন। মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় সমাজে বাবাকেও কম হেনস্তা হতে হয়নি! তাই তিনি কোথাও খুব একটা যেতেন না। পুরুষ জীবনের বিপন্নতা কিংবা অসহায়ত্ব আমি তখনও বুঝি না। তবে আমার কাছে মা হারানোর বেদনাই তখনও অনেক বড়। একদিন আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম_
মা এখন কোথায় আছেন?
নরকে।
নরক তো খারাপ মানুষের জন্য...।
সেটাই তো তার প্রাপ্য...।
যদিও আমি সব সময় ধারণা করতাম, ডেভিড নরকে গেছে। কিন্তু অনেক পরে জেনেছি, সে মরেনি। তবে তার পেনিসটা পরবর্তী সময়ে জোড়া লাগানো সম্ভব হয়েছিল কি-না, জানতে পারিনি।
শৈশবজুড়েই ছিল এসবের ভাবনা। একটা সময় বড় হয়েছি। কিন্তু যে বয়সে একটা ছেলে পুশ-আপ দেয়, মাসল বানায়; বুকের ছাতি, হাতের পেশি, পুরুষাঙ্গ মাপে, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে অ্যাডাল্ট জোকস বলাবলি করে হাসাহাসি করে; সেই বয়সে আমি ছিলাম প্রভুহীন পথের কুকুর। যে বয়সে ইভানাকে বলতে চেয়েছি, 'প্রেমে-পড়া মুখখানি দেখতে যাব তোমার; তুমি জানালার ধারে এসো'_ বলতে পারিনি।

ড্যানিয়েল একটু থেমে নিজে নিজেই আবার বলা শুরু করল_
একটা সময় পথের ধারের ঘাসের মতো বড় হতে হতে আমার ভাবনাগুলো মরে গেছে। কিন্তু এখনও মাঝেমধ্যে স্মৃতিগুলো বিষধর সাপের মতো ফণা তুলে দংশন করে। শরতের নীল আকাশে সাদা চক দিয়ে কত কত মেঘ এঁকেছি! কত বেদনা ও বিষণ্নতা নিয়ে পৃথিবীর পথে পথে হেঁটেছি! তার হিসাব কেউ রাখেনি।
সময় নিয়ে, থেমে থেমে, চারদিক দেখে দেখে হেঁটেছি। ভেড়া, গরু, পাখি, ঘোড়ার মতো শব্দ করেছি। ভেড়া দেখলেই অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকেছি। বোঝার চেষ্টা করেছি, ভেড়া আসলে কেমন? স্কুলে আমাকে 'ভেড়া' ডাকত কেন? ভেড়াগুলো কেমন জানি পরোক্ষ টাইপের জীব, তাই না? ভীষণ অবহেলিত একটি প্রাণী। প্রাণীটির চোখে কোনো ধরনের বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ নেই। এক্সপ্রেশনলেস। আচ্ছা, আমার চোখে কোনো বুদ্ধিমত্তা দেখা যায়? ব্যক্তিত্ব? নিজেকে খুঁজে পাই না, হারিয়ে ফেলি। ডুবে যাই, ভেসে যাই। কোথায় যাই, জানি না!

শুরু থেকেই ড্যানিয়েলকে পর্যবেক্ষণ করছি। কেমন জানি অতীতাশ্রয়ী চোখ। সত্যিই এক্সপ্রেশনলেস। এক সময় হয়তো অনেক আবেদন ছিল, এখন আর নেই। একটু ভেবে বললাম_
অভিজ্ঞতার সাথে তোমার ব্যক্তিত্বের সম্পর্ক আছে।
হুঁ, তা আছে। সবারই থাকে। সব পথই যে রকম কোনো না কোনো পথের বাঁকে হারিয়ে যায়। সে রকম কোনো পথের বাঁকে অপেক্ষা করতেই আমার ভালো লাগে। অচেনা পথিকের মতো কোনো এক অচিন বৃক্ষের গায়ে হেলান দিয়ে অপেরা করি। কারণ, কোনো কাজ না থাকা মানে তো অপেক্ষা করা নয়। আমরা জন্মের জন্য, বড় হওয়ার জন্য অপেক্ষা করি। অনেকে মৃত্যুর জন্যও অপেরা করে। চৈত্রের দুপুরের নিদারুণ নিঃসঙ্গতা, কোনো না কোনো বিষণ্ন ঘুঘুর ডাকের জন্যও অপেক্ষা করে। চিরদিনই করবে। আমি সুদিনের জন্য অপেক্ষা করি। পূর্ণ একটা জীবনের জন্য অপেরা করি। ভালোবাসাময় একটা সকালের জন্য সারারাত জেগে বসে থাকি।
ডেভিডের নামটি সারাজীবন ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছি, পারিনি। ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করতে করতে আবার মনে করে ফেলি। কখন জানি নিজের অজান্তেই ট্রাউজারের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিই। নাড়াচাড়া করি। কিন্তু কেন জানি মনে হতে থাকে, আমার জিনিসটা আমার সাথে নেই। কোথায় যেন হারিয়ে ফেলেছি! কেমন জানি একটা অজানা আশঙ্কায় দ্রুত হাত বের করে ফেলি। নিজের হাতের দিকে, আঙুলের দিকে তাকিয়ে থাকি। নিজের গায়ে, গাছের পাতায় চিমটি কাটি। আনমনে পথের পানে, দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকি। মাঠের মধ্যে ঘাসের ওপর শুয়ে শুয়ে আকাশকে জিজ্ঞেস করি, মা যদি ওইভাবে মারা না যেতেন, তাহলে আমার জীবনটা কেমন হতো?
মাঝেমধ্যে অমাবস্যার রাতে শহর থেকে অনেক দূরে চলে যাই, যেখানে কোনো সভ্যতা-সংস্কৃতি, মানুষজন নেই। শুধুই বনজঙ্গল আর পাহাড়; নিকষ কালো অন্ধকার। যে অন্ধকারে নিজেকেও দেখা যায় না, কিন্তু নিজের ভেতরটা দেখা যায়। আমার ভেতরের মানুষটাকে আমি জিজ্ঞেস করি_
বাকি জীবনটা কেমন যাবে?
সোজাসুজি কোনো উত্তর দেয় না, মুচকি হাসে। প্রতিবারই শুধু বলে_
তুমি এখানে একা; তোমার জীবন অন্য কোনোখানে। ি

মন্তব্য করুন