
তরুণদের হাতেই আগামীর বিশ্ব। নতুন নতুন ভাবনা, সৃষ্টিশীল কাজে প্রকাশ পাচ্ছে তাদের তৎপরতা। দৃঢ় মনোভাব ও ইচ্ছাশক্তিকে পুঁজি করে শত প্রতিকূলতা আর বাধা-বিপত্তিকে পাশ কাটিয়েও তারা এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে, জয় করছে কঠিনতম স্বপ্নকেও। দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে যার প্রমাণ রেখে চলেছে তারা বারবার। আর সেসব স্বপ্নবাজ তরুণের অদম্য ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিভিন্ন সময়েই আয়োজন করা হয় 'ব্যবসায়িক ও করপোরেট আইডিয়া উদ্ভাবন' শীর্ষক নানা ধরনের প্রতিযোগিতা। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দেশের একমাত্র আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় টেক্সটাইলভিত্তিক বিজনেস কেস (ব্যবসা ধারণা) প্রতিযোগিতা 'ডাইসিন টেক্সবিজ-২০১৮'। বুটেক্স বিজনেস ক্লাবের আয়োজনে প্রতিযোগিতায় দেশের ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটের ১০৬টি দল অংশগ্রহণ করে। তবে যৌক্তিক নতুনত্ব আইডিয়া, সেগুলো বাস্তবায়নে সৃষ্ট নানা সমস্যা ও সমাধানের পথ পাওয়ার পয়েন্টে দৃষ্টিনন্দনভাবে উপস্থাপন করে ফাইনাল রাউন্ডে চ্যাম্পিয়নশিপে জায়গা করে নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) টিম 'লাজুক'। পাশাপাশি প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার্স আপ ও দ্বিতীয় রানার্স আপ হয় যথাক্রমে বুয়েটের দল 'টাইকুনস' এবং বুটেক্সের দল 'ভ্যারেলিয়ান স্টিলার্স'। প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য ছিল প্রযুক্তির উন্নয়নের এই যুগে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বস্ত্রশিল্পের বাস্তবধর্মী যাবতীয় ব্যবসায়িক সমস্যা অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা করতে তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করা। প্রতিযোগিতার শুরুটা হয়েছিল অনলাইন রাউন্ড দিয়ে। এই রাউন্ড শেষে ১০৬টি দল থেকে ২৯টি হয়ে সর্বশেষ ফাইনালে প্রেজেন্টেশনের জন্য ডাকা হয় মোট ৭টি দলকে। বিজয়ী তিনটি দল ছাড়াও ফাইনাল রাউন্ডে অংশগ্রহণকারী অন্য দলগুলো হলো দ্য ব্রিজ, টিম ডায়নামো, টিম নেভার স্যাটেল ও নো ব্রেইনার।
বিজয়ী টিম লাজুকের সদস্যরা হলেন- মুসাররাত হোসেন মারিহা, সারাহ্ জামান, কাজী মো. জুলকারনাইন ও মীর সাকলাইন ইকবাল।
টিম প্রধান সারাহ্ জামান তাদের সাফল্য নিয়ে বলেন, আমাদের আইডিয়াটা ছিল আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাউজিং গড়ে তুলব। অলটারনেটিভ ছিল শ্রমিকদের গার্মেন্টসের লাভের অংশীদার করা। আমাদের যে তথ্য দেওয়া হয়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গার্মেন্টসের লাভের খাতা অক্ষত রেখে শ্রমিকদের এক হাজার টাকার ভেতর পূর্ণাঙ্গ আবাসন ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। আমরা থিওরিটিক্যালি যা করে দেখিয়েছি গার্মেন্টস মালিক ও শিল্পপতিরা তা বাস্তবে রূপদান করলে আশা করি স্বল্প বিনিয়োগেই তারা বেশি লাভের মুখ দেখতে পারবেন। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির সূচকও একধাপ এগোবে।
প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে কম ধকল সইতে হয়নি টিম লাজুককে। একদিকে যেমন নিজের ভার্সিটির পরীক্ষায় বসতে হয়েছে তেমনি নিজেদের যোগ্যতারও জানান দিয়েছেন টেক্সবিজে। এ বিষয়ে মুসাররাত হোসেন মারিহা জানান, আমরা টিমমেটরা ভেবেছিলাম সেমিফাইনালেই বোধহয় হেরে যাব। কিন্তু ফাইনালের আগের রাত সাড়ে ১১টায় জানতে পারলাম আমরা ফাইনালে উঠেছি। একে তো যেদিন বিকেলে ফাইনাল আবার সেইদিন সকালেই ভার্সিটির প্রথম সেমিস্টারের মিড পরীক্ষা। তাই উত্তেজনার পারদ কমিয়ে রাতভর ভিডিওকলে টিমমেটদের সঙ্গে প্রদত্ত কেসের পলিসি তৈরি করি। পাশাপাশি সারতে হয়েছিল একাডেমিক স্টাডিজও। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল দুই পরীক্ষাই আবার না খারাপ হয়ে যায়! তবে সার্থকতা আসে জয় লাভের পর।
এরকম একটা প্ল্যাটফর্মে অংশ নিয়ে নিজেদের সাহস ও অভিজ্ঞতা একধাপ এগিয়ে গেছে বলে মনে করেন টিমের ২ সদস্য কাজী মো. জুলকারনাইন ও মীর সাকলাইন ইকবাল। বলেন, আমাদের কোনো মেন্টর ছিলেন না। এ ধরনের প্রতিযোগিতায় জয়ের স্বাদ নেওয়া সত্যিই অবিশ্বাস্য। টিমের নাম লাজুক সিলেক্ট করার পেছনে কারণ জানতে চাইলে সারাহ্ হেসে বলেন, বিষয়টা একটু হাস্যকর। টিমের তিন বন্ধু কলেজজীবনে পড়তাম রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে। মূলত রাজউক থেকেই নামটা এভাবে আনা হয়েছে।
মাত্র দুই বছর আগে বিজনেস ক্লাবের খাতায় নাম লেখায় বুটেক্স। এই সংক্ষিপ্ত পথচলায় তাদের সাফল্যও কিন্তু কম নয়। ক্লাবের বর্তমান সভাপতি মো. ইমরানুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি ও যোগ্য মানুষ গড়তেই আমাদের ক্লাবের যাত্রা। এ ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশের টেক্সটাইল সেক্টরে তরুণ উদ্যোক্তাদের সাফল্য বয়ে আনবে। ফাইনাল রাউন্ডে প্রধান অতিথি ছিলেন বুটেক্সের উপাচার্য অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার মাসউদ আহমেদ। তিনি বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। এ ছাড়া চ্যাম্পিয়ন দলকে ৭৫ হাজার, প্রথম রানার্স আপকে ৫০ হাজার ও দ্বিতীয় রানার্স আপকে ৩৫ হাজার টাকার চেক পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন