
সামাজিক দায়বদ্ধতায় ও সক্রিয় নাগরিকত্ব চর্চায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় তরুণদের নেতৃত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে সরকার তানভীর আহমেদ তানিম। তিনি মূলত জাতীয় সংসদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইয়ুথ পার্লামেন্ট চর্চায় আগ্রহী তরুণদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন। বর্তমানে কেবল বাংলাদেশই নয়; বিভিন্ন দেশের হাজারো তরুণ শক্ত নেটওয়ার্কিং স্থাপন ও মূল সংসদ কক্ষে ইয়ুথ পার্লামেন্ট চর্চার পাঠ নিচ্ছেন তানভীরের ইয়ুথ পার্লামেন্ট থেকে। চলতি বছর ভারতে অনুষ্ঠিত ইয়ুথ পার্লামেন্ট আয়োজিত তৃতীয় মডেল যুব সার্ক সম্মেলনে মরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. আমিনাথ ফেরদাউস গুরিব ফাকিম, মালদ্বীপের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুনিয়া মামুন, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত অনিল ত্রিগুনায়েতসহ অনেকেই উপস্থিতি ছিলেন ইয়ুথ পার্লামেন্টের এই ছায়া সার্ক সম্মেলনে। এ ছাড়া তানভীর ডি-৮ ভুক্ত দেশের যুবকদের নিয়ে ইয়ুথ কনফারেন্স আয়োজন করা, নারীদের নেতৃত্ব বিকাশে ইয়ুথ পার্লামেন্ট উইমেন হাব ও ভারত-বাংলাদেশের তরুণদের জন্য নিয়মিত বিভিন্ন অধিবেশন আয়োজন করেন।
ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড ২০২১
বিশ্বের উদীয়মান তরুণদের বিশেষ স্বীকৃতিস্বরূপ দেওয়া হয় দ্য ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড। দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক প্রভাব, কাজের মাধ্যমে অন্যকে অনুপ্রাণিত করা, তরুণ নেতৃত্ব এবং পরিষেবা যাত্রার ওপর ভিত্তি করে তরুণদের নির্বাচিত করা হয় ডায়ানা অ্যাওয়ার্ডের জন্য। ২০২১ সালে নিজের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন সরকার তানভীর আহমেদ তানিম। ব্রিটেনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১২ সদস্যবিশিষ্ট ও ব্রিটেনের বাইরে তিন সদস্যবিশিষ্ট বিচারক প্যানেলের মূল্যায়ন ও নম্বরের ওপর ভিত্তি করে দ্য ডায়ানা অ্যাওয়ার্ডের জন্য তরুণদের নির্বাচিত করা হয়। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ডায়ানা বিশ্বাস করতেন, তরুণদের মাঝে বিশ্ব পরিবর্তন করার ক্ষমতা রয়েছে। তার স্মরণে ২০ বছর ধরে দেওয়া হচ্ছে দ্য ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড। এই অ্যাওয়ার্ড প্রদানের ২০ বছর পূর্তিতে ২০১৭ থেকে প্রবর্তন করা হয় মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার 'ডায়ানা লিগ্যাসি অ্যাওয়ার্ড', যা ডিউক অব কেমব্রিজ ও ডিউক অব সাসেক্স এসটি জেমস প্যালেসে এই অ্যাওয়ার্ডের প্রবর্তন করেন।
তানভীরের ইয়ুথ পার্লামেন্ট
সেই এইটুকুন বয়স থেকেই উদ্যমী ও নতুন কিছু জানার আগ্রহ তাড়িয়ে বেড়ায় তানভীরকে। ২০১৬ সালে হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ফায়াজ আইয়াজ হোসেনের সততা ও দৃঢ়তা তাকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। তানভীর দেখলেন, তরুণদের যদি সামাজিক দায়বদ্ধতায় ও সক্রিয় নাগরিক চেতনা সমৃদ্ধ করা যায়, তাহলে তারা জঙ্গিবাদে ধাবিত হবে না। সেই ভাবনা থেকেই ইয়ুথ পার্লামেন্ট চর্চায় মনোযোগী হন তানভীর। ২০১৬ সালে গড়ে তোলা তানভীরের ইয়ুথ পার্লামেন্ট এখন আন্তর্জাতিক যুব প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে উঠেছে। তরুণদের নিয়ে এসডিজি-১৬-এ অবদান রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতীকীভাবে তরুণদের জন্য জাতীয় সংসদ চর্চার মাধ্যমে গণতন্ত্র, সংবিধান চর্চায় আগ্রহী করছে। মূলত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সংসদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়তেই নেতৃত্ব চর্চার সুযোগ করে দিচ্ছে ইয়ুথ পার্লামেন্ট। শুধু তাই নয়, ইয়ুথ পার্লামেন্ট নেতৃত্ব চর্চার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি দেশের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের তরুণদেরও সক্রিয় অবদান রাখতে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন। বর্তমানে ২৫টি দেশের তরুণরা ইয়ুথ পার্লামেন্টের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। দক্ষিণ এশিয়া ও ডি-৮ ভুক্ত দেশের তরুণদের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলছে। ইয়ুথ পার্লামেন্টের কার্যক্রমকে পাঁচটি শাখায় ভাগ করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর সবই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অবদান রাখবে।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
তানভীরের জন্ম ও বেড়ে ওঠা জয়পুরহাটে। বাবার চাকরি সূত্রে জয়পুরহাট চিনিকলের আবাসিক এলাকাতেই কাটে তার শৈশব। পড়াশোনা শুরু হয় জয়পুরহাট চাইল্ড হোম স্কুলে। তারপর ভর্তি হন চিনিকল কেজি এবং উচ্চ বিদ্যালয়ে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেন জয়পুরহাট রামদেও বাজলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। উচ্চ মাধ্যমিক জয়পুরহাট সরকারি কলেজ থেকে। এরপর অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে।
যত অর্জন
অর্জনের কথা জানতে চাইলে তানভীর বলেন, পথচলার এ অল্প সময়ে কিছু সফলতা পেয়েছি বটে; তা অবশ্য প্রত্যাশাই করিনি। তবু আমার অর্জনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইয়ুথ পার্লামেন্ট এখন একটি আন্তর্জাতিক যুব প্ল্যাটফর্ম হিসেবে যুবকদের নিয়ে এসডিজি-১৬তে অবদান রাখতে কাজ করছে। এ ছাড়া কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড, জেনেভায় অনুষ্ঠিত ঙঐঈঐজ-এর গণহত্যাবিষয়ক অধিবেশনে জাতিসংঘ থেকে অফিসিয়াল পাস ও শ্রীলঙ্কার সানফো গ্লোবালের অ্যাওয়ার্ড। একটু পেছনে ফিরে তাকালে মনে পড়ে ২০১৮ সালের কথা। সে বছর কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর পুরস্কার অর্জন করেছিলাম। যেখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ পুরস্কার প্রদান করেন। এ ছাড়া তৃতীয় আন্তর্জাতিক যুব সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশনের সাবেক সভাপতি ও কর্মকর্তাদের ২৪ জনের একজন হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ। ২০১৯ সালে জাতীয়ভাবে শ্রেষ্ঠ যুব বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির বিজয়ী এবং ২০১৯ সালে মালদ্বীপ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক গ্লোবাল পিস মেডেল অর্জন।
আগামীর স্বপ্ন
আগামীর স্বপ্ন নিয়ে তানভীর বলেন, তরুণদের কাছে এক সময় ইয়ুথ পার্লামেন্ট বিষয়টি অজানাই ছিল। কিন্তু বর্তমানে আমাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে তরুণরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মূল সংসদ কক্ষে ইয়ুথ পার্লামেন্ট চর্চা হয়। আমার আগামীর স্বপ্ন হচ্ছে, একদিন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষেও ইয়ুথ পার্লামেন্ট চর্চা হবে এবং জাতীয় সংসদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হিসেবে তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। তানভীরের মতো এমন স্বপ্ন আমরাও দেখতে পারি!
মন্তব্য করুন