আদিবাসীরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করছে। তারা অনন্য এক সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ভাষা ও জ্ঞানের ধারক-বাহক। আদিবাসী সম্প্রদায় সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো, যা হয়তো অনেকের অজানা।

পৃথিবীর সব ভৌগোলিক অঞ্চলে তাদের বসবাস

৪৭৬ মিলিয়নের বেশি আদিবাসী পৃথিবীর ৯০টি দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করছে এবং তারা পাঁচ হাজারের মতো ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৬.২ শতাংশ আদিবাসী এবং তারা পৃথিবীর সবক'টি ভৌগোলিক অঞ্চলে বাস করছে।

বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ ভাষাই আদিবাসীদের

আদিবাসীদের ভাষাগুলো জ্ঞানের বিস্তৃত ও জটিল ধারা। তাদের পরিচয়ের কেন্দ্রেই থাকে এই ভাষা। এর মাধ্যমেই তারা নিজেদের সংস্কৃতির সংরক্ষণ করে, বিশ্বকে দেখে এবাং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, এমনকি আত্মনিয়ন্ত্রের কেন্দ্রেও এই ভাষা। বর্তমানে বিশ্বের সাত হাজার ভাষার অন্তত ৪০ শতাংশ কোনো না কোনো মাত্রায় হুমকির মুখে আছে। ধারণা করা হয়, প্রতি দুই সপ্তাহে একটি আদিবাসী ভাষা বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

দারিদ্র্য এবং সার্বক্ষণিক ঝুঁকির মুখোমুখি

৮৬ শতাংশের বেশি আদিবাসী অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে কাজ করে এবং সাধারণের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি দরিদ্র জীবনযাপন করে। তারা সব সময় পুষ্টিহীনতায় ভোগে এবং তাদের পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সম্পদ ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। মহামারি কভিড-১৯ তাদের জীবনব্যবস্থাকে আরও বেশি বিপর্যস্ত করে তুলেছে। ফলে তারা আরও বেশি দারিদ্র্য, অসুস্থতা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।

কমছে আয়ু, কমছে শিক্ষার সুযোগ

আদিবাসীদের আয়ু সাধারণ মানুষের চেয়ে অন্তত ২০ বছর কম। তারা পর্যাপ্ত তথ্য ও স্বাস্থ্যসেবার অভাবে থাকে। প্রায়ই ম্যালেরিয়া, যক্ষ্ণা ও এইচআইভির মতো রোগে ভোগে। আর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আদিবাসীদের মধ্যে ৪৭ শতাংশের আনুষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই। নারীদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা আরও বেশি।

আদিবাসী নারীরা সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার

প্রতি তিনজনে একজনেরও বেশি আদিবাসী নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তাদের মধ্যে মাতৃমৃত্যু, কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণ ও যৌনবাহিত রোগ সংক্রমণের হারও বেশি।

ভূমির অধিকার বঞ্চিত আদিবাসীরা

যদিও কিছুসংখ্যক আদিবাসী স্বায়ত্তশাসিত, কিন্তু অধিকাংশ আদিবাসীই কেন্দ্রীয় সরকার প্রেরিত কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকে। ওই কর্তৃপক্ষই আদিবাসীদের ভূমি ও সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করে।

পরিবেশ রক্ষায় রাখছেন অবদান

প্রায় ৭০ মিলিয়ন আদিবাসী জীবিকা নির্বাহের জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া অধিকাংশই কৃষক ও শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা তাদের চারপাশের সঙ্গে অনন্য এক সেতুবন্ধ তৈরি করে চলছে। গবেষণায় দেখা গেছে, আদিবাসীরা যে ভূমির নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বন বেড়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অংশগ্রহণ

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের অবদান যা ভাবা হতো, তার চেয়েও অনেক বেশি। তাদের বনভূমি স্থলভাগের নির্গত কার্বনের এক-চতুর্থাংশ শোষণ করে, যা ২০১৪ সালে বিশ্বের সমগ্র কার্বন নিঃসরণের চার গুণ। া তথ্যসূত্র :ইউএনডিপি

মন্তব্য করুন