
মহামারি কাটেনি এখনও। কিন্তু ঈদের আনন্দ যেন কমতি না পড়ে তাই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে অনেকদিন আগেই। সারা বছর যেমন-তেমন হলেও ঈদের এই উৎসবমুখর পরিবেশে বাঙালি নারীরা ঝুঁকছেন শাড়ির দিকেই। ঈদ বাজার ঘুরে জানা যায়, বিদেশি শাড়ির তুলনায় বরাবরের মতো এবারও দেশি শাড়ির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অধিকাংশ শাড়ির নকশা অনেকটা মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ বলা যায়। ব্লক, এমব্রয়ডারি, কাঁথা, এসিড পেইন্ট- সব ধরনের নকশার মিশেল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ফেব্রিকসে কটনের পাশাপাশি সিল্ক্ক, হাফ সিল্ক্ক, মসলিন, র-সিল্ক্ক, কাতান, সিল্ক্ক কাতান, টিস্যু, জর্জেটের শাড়ি এসেছে। এ ছাড়া বাহারি নকশার জামদানিও রয়েছে। বেনারসির কিছু নতুন কালেকশন এসেছে।
রঙের ক্ষেত্রে আবহাওয়া ও গৃহবন্দিকালীন ঈদকে মাথায় রেখেই হালকা রংকেই প্রাধান্য দিয়েছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। এ ছাড়া পরিস্থিতি বিবেচনায় হালের ফ্যাশনে ট্রেন্ড হিসেবে প্রাধান্য পাচ্ছে ন্যুড কালার। তবে এসব শাড়িতে রং এবং নকশা মিলেই থাকবে চমৎকার এক ফেস্টিভ লুক। ঈদে রঙ বাংলাদেশ থিমনির্ভর কালেকশন তৈরি করেছে। আর এই থিম নকশাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শাড়ির জমিনজুড়ে।
অঞ্জন'স-এর স্বত্বাধিকারী শাহীন আহমেদ জানান, এবারের ঈদে তীব্র গরমের কারণে ক্রেতাদের স্বস্তি ও আরামের কথা মাথায় রেখে সুতি কাপড়কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এন্ডি কটন, হাফ সিল্ক্ক, এন্ডি সিল্ক্ক, ভয়েল, রাজশাহী সিল্ক্ক, জামদানি ও কাতানের বেশ কিছু নতুন কালেকশন এসেছে। রঙের ক্ষেত্রে এবার হালকা রং বেশি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষত সাদা ও নীল রং অধিক প্রাধন্য পেয়েছে। এছাড়া ব্লক প্রিন্ট, এমব্রয়ডারি এবং এপ্লিকের কারুকাজ এসেছে সুতি শাড়িতে।
অনেকেই ভারি কাজের শাড়ি পছন্দ করেন। তাই ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী জমকালো ও আকর্ষণীয় শাড়ি কালেকশন এসেছে এবার ঈদ উপলক্ষে। এ ছাড়া পিওর সিল্ক্ক, হাফ সিল্ক্ক, মসলিন নিয়ে বেশ কিছু নকশায় শাড়ির সমাহার জমে উঠেছে। এখানে হালকা রঙের তুলনায় উজ্জ্বল রংকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন ফ্যাশন ডিজাইনারা। বেশিরভাগ শাড়িই ব্ল্যাক, ইয়েলো, ব্লু, বেগুনি, কমলা, মেজেন্টার মতো উজ্জ্বল রঙের। এ বাহারি রঙের শাড়ির জমিনজুড়ে এমব্রয়ডারি এবং স্প্রিং প্রিন্টের কারুকাজের দ্বারা নান্দনিক রূপ পেয়েছে এবারের প্রতিটি শাড়ি। এ ছাড়া শাড়ির ডিজাইনে নতুনত্ব আনতে গল্গাস, এবং লেইসেরও ব্যবহার করা হয়েছে, যা শাড়িতে আভিজাত্য এবং উৎসবমুখী এক আবহ সৃষ্টি করবে।
রঙ বাংলাদেশ এবারও প্রতিবারের মতোই থিমনির্ভর কালেকশন তৈরি করেছে। শাড়িতে ইসলামিক নকশার পাশাপাশি ফ্লোরাল ও ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল- এ তিন ধরনের থিম রয়েছে। পাশাপাশি প্রকৃতি ও আবহাওয়া আর আন্তর্জাতিক ট্রেন্ডও যোগ হয়েছে। শাড়ির রং হিসেবে আছে লাল, অফ হোয়াইট, মেজেন্টা, রয়েল ব্লু, পেস্ট, নেভাল ব্লু, কফি, লাইট গোল্ডেন, লাইট লেমন, সি-গ্রিন, সি ব্লু, ফিরোজা, অ্যাশ, কমলা ও কালো। শাড়িতে নকশা হয়েছে স্ট্ক্রিনপ্রিন্ট, ব্লকপ্রিন্ট, হ্যান্ডওয়ার্ক, ভরাট কাজ, কারচুপি, মেশিন এমব্রয়ডারি, টাই অ্যান্ড ডাই।
বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের নজর কাড়ছে তৈরি শাড়িগুলো। যারা শাড়ি পরতে ঝামেলা কিংবা খানিকটা অস্বস্তি বোধ করেন তাদের স্বাচ্ছন্দ্যবোধের কথা মাথায় রেখেই নতুন নকশার রেডিমেড শাড়ি এসেছে ঈদ কালেকশনে।
রং হিসেবে হালকা ও উজ্জ্বল রঙের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এ তৈরি শাড়িগুলোতে। সিল্ক্ক, নেট, মসলিন, শিপন ইত্যাদি কাপড়ে পাওয়া যাচ্ছে এই রেডিমেড শাড়ি।
ধানমন্ডি হকার্সে ঘুরেফিরে দেখা গেল সুতি ও জামদানি শাড়ির পাশাপাশি এবার তাঁতের শাড়ির চাহিদাও ব্যাপক। আর তাঁতের শাড়ির মধ্যে নানা ধরনের বৈচিত্র্য আছে। যেমন জুট কটন, সফট কটন, এন্ডি কটন, টাঙ্গাইল তাঁত ইত্যাদি। এ ছাড়া এবারের ঈদে নকশায় প্রাধান্য পাচ্ছে ট্র্যাডিশনাল সব মোটিফ।
এ ছাড়া বিশ্বরঙ এবার নিয়ে আসছে দু'ধরনের শাড়ি- একটি পিওর তাঁত এবং অন্যটি তাঁতের ওপর বিভিন্ন নকশা। এগুলোতে রয়েছে ব্লক প্রিন্ট, স্কিন প্রিন্ট, অ্যামব্রয়ডারি ইত্যাদি। এ ছাড়া বিশ্বরঙ এবার আবহাওয়ার কথা বিবেচনা করে হালকা রঙের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, বিশেষত সি গ্রিন ও সি ব্লু ও ইন্ডিগো ব্লুতে, যা শাড়িতে এনে দিয়েছে এক স্নিগ্ধ আবহ। কোথায় পাবেন
বিভিন্ন ফেব্রিকস, বাহারি রং এবং জমকালো নকশার শাড়ি পাবেন যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স, আজিজ সুপার মার্কেট, হুর নুসরাত, পিংক সিটি, গাউছিয়া, নবরূপা, চাঁদনী চক, ইস্টার্ন পল্গাজাসহ দেশের বিভিন্ন শপিংমল এবং ফ্যাশন হাউসে। এ ছাড়া দেশীয় শাড়ি যেমন তাঁত, কটন, অ্যামব্রয়ডারি, ভরাট কাজের শাড়িগুলো পাবেন কে-ক্রাফট, বিশ্বরঙ, অঞ্জন'স, আড়ং, বসুন্ধরার দেশীদশের মতো ব্র্যান্ডগুলোতে।
দরদাম
সুতি তাঁতের শাড়ি পাবেন ৮০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে, জামদানি পাবেন ১৮০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে, মসলিন পাবেন সর্বনিম্ন ৩০০০ থেকে সর্বোচ্চ ১০-১১ হাজারের মধ্যে। এ ছাড়া সিল্ক্ক জামদানি পাবেন ১৭০০ টাকায়, ব্লক প্রিন্ট সুতি শাড়ি পাবেন ১১৫০ টাকায়, ইন্ডিয়ান কাতান পাবেন ৩০০০-৪০০০ টাকায়, জর্জেট শাড়ি পাবেন ১০০০ টাকায়। এ ছাড়া বিশ্বরঙে তাঁতের শাড়ির ওপর নকশা করা শাড়িগুলোর দাম শুরু হয়েছে ১৫০০ থেকে ৭-৮ হাজারের মধ্যে, আর পিওর তাঁতের শাড়িগুলোর দাম শুরু হয়েছে ১৫০০ থেকে ১০-১১ হাজারের মধ্যে। অঞ্জন'স-এ শাড়ির দাম শুরু হয়েছে ১৮০০-৪০০০ এর মধ্যে। তবে শাড়ির মান, ফ্রেবিকস এবং নকশার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন জায়গায় নানা দামে পাওয়া যাচ্ছে এসব শাড়ি।
ছবি : রঙ বাংলাদেশ, বিশ্বরঙ, অঞ্জন'স ও লারিভ
মন্তব্য করুন