নারীরা, বিশেষত শিক্ষিত নারীরা ব্যবসায় ঝুঁকছেন। অনেকে চাকরির চেয়ে নিজে উদ্যোগ নিয়ে স্বাধীনভাবে উপার্জন করার দিকে আগ্রহী হচ্ছেন। তারা বলছেন, এতে নিজের পরিকল্পনা ও সুবিধামতো কাজ করা যায়। অন্যদিকে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজে ও অর্থনীতিতে অবদান রাখা যায়।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায়ও দেখা গেছে, দেশের নারী উদ্যোক্তাদের ২৬ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত। ওই গবেষণায় অংশ নেওয়া উদ্যোক্তারাও জানিয়েছেন, স্বাধীনভাবে কাজ করা ও নিজের স্বপ্নপূরণের জন্যই তারা চাকরির পরিবর্তে উদ্যোক্তা হয়েছেন।

নাবিলা নওরীন ও নাহিদ শারমিন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় লেখাপড়া শেষ করে ব্যবসায় নেমেছেন। যাদের নিজস্ব অফিস নেই অথবা স্থায়ীভাবে অফিস ভাড়া নেওয়া সম্ভব নয়, তাদের জন্য অফিস সুবিধা দেওয়ার ব্যবসা করেন এই দুই বন্ধু। গত পাঁচ বছরে তাদের এ উদ্যোগ বেশ এগিয়েছে। রাজধানীর বনানী ও ধানমন্ডিতে নাবিলা ও নাহিদের উদ্যোগ 'মোড়'-এর অফিস প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ জন ব্যবহার করছেন। নাবিলা নওরীন সমকালকে বলেন, নিজের মতো কাজ করার জন্যই তিনি এমন কাজে যুক্ত হয়েছেন।

বিআইডিএসের গবেষণায় দেখা গেছে, ২৬ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা উচ্চশিক্ষিত, যাদের স্নাতক ডিগ্রি রয়েছে। আর ২৪ শতাংশ উদ্যোক্তা উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়া জানেন। উচ্চশিক্ষিত নারীরা তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ, চামড়া, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যবসা করছেন। তবে যেসব নারী উদ্যোক্তার লেখাপড়া মাধ্যমিক পর্যায়ের, তাদের বড় অংশ কৃষিভিত্তিক পণ্য ও পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবসা করছেন। এই গবেষণায় দেখা গেছে, নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা শুরুর জন্য অভিজ্ঞতার বিশেষ প্রয়োজন হয়নি। ৬৭ ভাগ নারী উদ্যোক্তা ব্যবসা শুরুর আগে গৃহিণী ছিলেন। কোনো কোনো নারী উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠানে ৭০ জন পর্যন্ত কর্মী রয়েছেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কমবেশি ১০ জন করে কর্মী কাজ করছেন। কর্মীদের বড় অংশ নারী। ফলে সামগ্রিক কর্মসংস্থান তথা নারী কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নারী উদ্যোক্তারা বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো ২৫ শতাংশ মুনাফা করে।

প্রধানত ১১টি খাতে নারী উদ্যোক্তারা কাজ করছেন। এগুলো হচ্ছে ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল, সফটওয়্যার উন্নয়ন, হালকা প্রকৌশল ও ধাতব পণ্যের কারবার, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। নিটওয়্যার ও তৈরি পোশাক নিয়ে ব্যবসা করছেন অনেকে। আবার প্লাস্টিক ও সিনথেটিক পণ্য, হেলথকেয়ার ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শিক্ষা সেবা ব্যবসায় রয়েছেন নারীরা। ফ্যাশন পণ্যের ব্যবসা করছে নারী উদ্যোক্তাদের বড় অংশ। ফার্মাসিউটিক্যালস ও প্রসাধনী পণ্যের ব্যবসায়ও রয়েছেন অনেকে। এ ছাড়া কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাতে অনেক উদ্যোক্তা রয়েছেন। এ খাতে সরাসরি কৃষি খামার, বিশেষায়িত ফার্ম, হাঁস-মুরগি গবাদিপশু ও মাছ চাষ, মধু উৎপাদন, টিস্যু কালচারসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগে আছেন নারীরা। এসব খাতে ২০১৫ সালে এসএমই ফাউন্ডেশনে ৭ হাজার ৬৪ জন নারী উদ্যোক্তা নিবন্ধন নিয়েছেন। গত পাঁচ বছরে এই সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৫ হাজার হয়েছে বলে ধারণা এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের।

নারী উদ্যোক্তাদের বাধাও কম নয়। ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা এখনও পিছিয়ে রয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাব, সঠিক ব্যবসায়ী পরিকল্পনা উপস্থাপনে অদক্ষতা এবং জামানত না থাকার কারণে ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের বিশেষ ঋণ কর্মসূচির সুবিধা নিতে পারছেন না। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও এনজিও নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের আয়োজন করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এসব প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সাধারণত শহরকেন্দ্রিক। ফলে মফস্বলের উদ্যোক্তারা অনেক সময় অংশ নেওয়ার সুযোগ পান না।

মন্তব্য করুন