আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে খুব অল্প দামের ফিচার ফোন দিয়ে বিকাশের লেনদেনের সুযোগ বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনে বিরাট রূপান্তরের সূচনা করে। সময়ের ব্যবধানে প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও সহজলভ্যতার কল্যাণে আর্থিক লেনদেন একেবারে সহজ করতে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্য 'বিকাশ অ্যাপ' উদ্বোধন করা হয়। দ্রুততার সঙ্গে আরও নির্ভুল, নিরাপদ ও সহজ আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বিকাশ অ্যাপ।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন আঙ্গিকে ভিন্ন এক 'বিকাশ অ্যাপ'-এর সঙ্গে গ্রাহকদের পরিচয় করিয়ে দেয় বিকাশ। দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেন সেবার পাশাপাশি আরও অনেক জীবনমুখী ও নাগরিক জীবনের সেবা সংযুক্ত করে আধুনিকতম প্রযুক্তির মাধ্যমে বিকাশ অ্যাপকে করে তোলা হয় আরও পারসোনালাইজড, ইউজার-সেন্ট্রিক, ডাটা-ড্রাইভেন এবং ইন্টারঅ্যাকটিভ। অ্যাপে লগইন থেকে শুরু করে প্রতি সেবার প্রতি পদক্ষেপে নেওয়া হয়েছে গ্লোবাল সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ডস এবং রেগুলেটরের সব কমপ্লায়েন্স মেনে।

বিকাশের নিজস্ব ইঞ্জিনিয়ারদের তত্ত্বাবধানে অ্যাপের ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট এবং টেস্টিং হয়ে থাকে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত বিকাশ অ্যাপ সাম্প্রতিক সময়ে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ ডেটা সুরক্ষা নিশ্চিত করায় 'পেমেন্ট কার্ড ইনডাস্ট্রি ডেটা সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ডস (পিসিআই ডিএসএস)-ভার্সন ৩.২.১' অর্জন করেছে। বাংলাদেশে মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকাশই প্রথম এ সনদ অর্জন করেছে। পিসিআই ডিএসএসের নীতিমালা অনুযায়ী শক্তিশালী সিস্টেম, উন্নত নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি ব্যবস্থা, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিকাশ এ সনদ অর্জন করেছে। সেরা প্রযুক্তি, গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষা দেওয়ার সক্ষমতা এবং 'প্রসেস পলিসি কমপ্লায়েন্স' থাকার কারণে বিকাশের জন্য এ সনদ অর্জন করা সহজ হয়েছে।

বিকাশ অ্যাপে যারা বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলতে আগ্রহী তাদের জন্য রেগুলেটরের কমপ্লায়েন্স মেনে যুক্ত হয়েছে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ। ২৪ ঘণ্টার যে কোনো সময়ে যে কোনো স্মার্টফোন ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। গ্রাহক যেসব সেবা ব্যবহার করছেন বা যে এলাকায় আছেন তার ওপর ভিত্তি করে বিকাশ অ্যাপে যুক্ত হয়েছে সাজেশন বক্স। নিয়মিত নেওয়া সেবাগুলো অ্যাপের 'মাই বিকাশ' কন্টেইনারে প্রতিনিয়ত যুক্ত হয়, যাতে খুব দ্রুত গ্রাহক তার প্রয়োজনীয় সেবা নিতে পারেন। যেমন কেউ হয়তো তার মাকে নিয়মিত টাকা পাঠান। ওই গ্রাহকের 'মাই বিকাশ'-এ থাকে মায়ের নম্বরের শর্টকাট। ফলে পরেরবার আরও সহজে হয় গ্রাহকের টাকা পাঠানো। বিকাশের কখন কী অফার চলছে তা আরও সংগঠিত করে উপস্থাপিত হচ্ছে বিকাশ অ্যাপের হোম স্ক্রিনের নিচের অংশে। গ্রাহক বিদ্যুৎ বিল বা অন্য যে কোনো বিল পরিশোধের যে সেবা নেন, সেই অ্যাকাউন্টের তথ্যগুলোও অ্যাপে সংযুক্ত করে রাখতে পারেন, যা পরেরবার তার সব ধরনের বিল পরিশোধ সহজ করে দেয়।

বিকাশের সেন্ডমানি, মোবাইল রিচার্জ, ক্যাশ আউট, পেমেন্ট, অ্যাড মানি, পে বিল, টিকিট, ট্রান্সফার মানি, ইন্স্যুরেন্স, খাবারের অর্ডার, বেড়ানো, পণ্য কেনাসহ সব সেবাই হোম স্ক্রিনে যুক্ত। বিকাশ অ্যাপে যুক্ত আছে বিকাশ ম্যাপ। ম্যাপ দেখে গ্রাহক তার নিকটস্থ কাস্টমার কেয়ার, এজেন্ট ও মার্চেন্ট পয়েন্ট খুব সহজেই খুঁজে বের করতে পারেন।

দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি যে কোনো ধরনের অনুদান দেওয়া, সংবাদ পড়া, অবসর সময়ে গেম খেলাসহ নানান সেবায় বিকাশ অ্যাপ হয়ে উঠছে নাগরিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। করোনাকালে বহুল ব্যবহূত এ অ্যাপের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে করোনা ইনফো এবং করোনা ভ্যাক্সিনের নিবন্ধন অ্যাপ 'সুরক্ষা'ও বিকাশ অ্যাপে সংযোজিত হয়েছে। বিকাশ অ্যাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টু-ফ্যাক্টর এবং থ্রি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন যুক্ত হয়েছে। বিকাশ অ্যাপের কিউআর কোড স্ক্যান করে পেমেন্ট পদ্ধতি ও পেমেন্টের ধারণাই বদলে দিয়েছে।

এত সুবিধার কারণেই বিকাশ অ্যাপের ডাউনলোড সংখ্যা কোটি ছাড়িয়েছে বহু আগে। অ্যাপটি হয়ে উঠেছে দেশের অন্যতম বহুল ব্যবহূত। বিকাশের মোট লেনদেনের প্রায় ৪০ শতাংশ হচ্ছে এখন বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে। দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনসহ প্রতিদিনের নানান প্রয়োজন পূরণ করে আরও জীবনমুখী অ্যাপে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সেবা ও ফিচার যুক্ত করা অব্যাহত আছে।

মন্তব্য করুন