বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স এসোসিয়েশন এর আয়োজনে দ্বিতীয় বারের মত হয়ে গেল ট্র্যাভেল কার্নিভাল।  ৩রা সেপ্টেম্বর উত্তরায় অবস্থিত ফেইত ওভারসিস লিমিটেড এর অফিসে এ আয়োজন অনু্ষ্ঠিত হয়। গতবারের মতো এবারের আয়োজনেও লেখকদের কাছ থেকে ব্যপক সাড়া পাওয়া গেছে। তাই  ভবিষ্যতে এই আয়োজন আরো বড় পরিসরে হবে এমনটা জানালেন ট্র্যাভেল রাইটার্স এসোসিয়েসনের সভাপতি আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল । 

শুরুতে পরিচয় পর্ব দিয়ে অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন ট্র্যাভেল রাইটার্স এসোসিয়েশন এর নির্বাহী কমিটির সদস্য শাকিল বিন মুস্তাক। এরপর একে একে আংশগ্রহনকারী লেখ্করা তাদের পরিচয়পর্বের সাথে সাথে বিস্তর অভিজ্ঞতার ঝাপি খুলেন সবার সামনে। এত দেশ-দেশান্তরে ঘুরার অভিজ্ঞতা আর বই এর সংকলন সমেত আলোচনা সবাইকে সমৃদ্ধ করেছে। 

কার্নিভালে উপস্থিত ছিলেন, ড. এস এম ইলিয়াস, জেসমিন মুন্নি, মাজেদুল হাসান, আনিসুর রহমান, ফারিদুর রহমান, রেজাউল হায়দার খান, জাকারিয়া মন্ডল, শাহীন চৌধুরী, মউদুদুল আলম, মাহবুব আলম, আশিক সারওয়ার, ডাক্তার নিবেদিতা নারগিস পান্না, জাহাঙ্গীর আলম শোভন, হিমেল, কাজি জিয়াউল বাপ্পী, হোমায়েদ মুন- প্রমুখ ।

পরিচয় পর্বের পরে সভাপতি আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল সবাইকে এই ট্র্যাভেল কার্নিভালের ব্যাপারে বিস্তারিত এবং অনেক তথ্যবহুল আলোচনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতিকালে ভ্রমণের বইয়ের বিশাল এক তালিকা তৈরি করছেন, যেখানে বাংলা ভাষায় ভ্রমণ বিষয়ক প্রায় ১৩০০ বই রয়েছে।  এই তালিকা করতে গিয়ে তিনি বিস্মিত হয়েছেন যে, বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া শঙ্কু মহারাজ (ছদ্দ নাম)  নামে একজন ভ্রমণ লেখকের প্রায় ৪০টির উপরে বই রয়েছে যা কিনা ভূ-পর্যটক রামনাথ বিশ্বাস কেও ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়াও সৈয়দ মুজতবা আলীর উপরে কাজ করছেন আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল । তার উপর পিএইচডি ডিগ্রী নিয়েছেন ৪জন শিক্ষার্থী, তার মধ্যে তিনজন পশ্চিমবঙ্গ থেকে আর একজন বাংলাদেশে থেকে। ভবিষ্যতে ভ্রমণ বিষয়ক একটি বই মেলার আয়োজন করা এবং আগামী বছর ট্র্যাভেল বিষয়ক এওয়ার্ড প্রদান করার পরিকল্পনার কথা তিনি সবাইকে অভহিত করেন। 

অনুষ্ঠানের শুরুতে লেখক এবং গবেষক জাকারিয়া মন্ডল ভ্রমণ বিষয়ক লেখালিখি করতে কি কি বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোকপাত করেন। তিনি ইবনে বতুতা থেকে শুরু করে র্যালফ ফিচ, নিকোলাই মানুচ্চি, বিশপ হেবার এর মত পৃথিবী ঘুরে দেখা পরিব্রাজকদের সবার সামনে  উপস্থাপন করেন। ভ্রমণের সাথে সাথে ইতিহাস ঐতিহ্যকে জানা, এ বিষয়ে পড়াশোনা করা এবং তা নিয়ে লিখার ব্যাপারেও সকলকে উদ্ভুদ্ধ করা হয়। 

এরপর বই নিয়ে আলোচনা করেন ভ্রমণ লেখক ফরিদুর রহমান।‘বার্লিনে বসন্তের দিন’ – বইটি নিয়ে লেখক আলোচনা করেন। বার্লিনে ঘুরাঘুরি নিয়ে তাঁর নানা অভিজ্ঞতা সবার সামনে তুলে ধরেন। এছাড়াও ‘নানা রঙের আফ্রিকা’ ও ‘দূরদেশে’ বইগুলো নিয়েও আলোচনা করেন লেখক। 

নিজের ভ্রমণ নিয়ে আলোচনা করেন ভ্রমণ লেখক আনিসুর রহমান। তার বই ‘তেঁতুলিয়া থেকে টেঁষনফ’ নিয়ে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। 

লেখক ডক্টর এস এম ইলিয়াস শিক্ষকতা করেন । তিনি বেশ রসিক মেজাজে  তাঁর ইরান সফরের গল্প বলেছেন। তাঁর ভ্রমণের বইগুলোর মধ্যে আছে ‘দূরদেশ’, ‘জ্ঞানের দেশ চীন’, ‘স্বপ্নের স্বর্গ যুক্তরাজ্য’, ‘নয়ন ভরে দেখা’। এই বই গুলো নিয়ে তিনি আলোচনা করেন।  

বই নিয়ে কথা বলেন সাংবাদিক লেখক শাহীন চৌধুরী।তার লেখা ভ্রমণ সাহিত্যের মধ্যে রয়েছে ‘গ্রেট ওয়াল থেকে নায়াগ্রা’ ও ‘সিউল থেকে লং আইল্যন্ড’। সাংবাদিকতার সুবাধে দেশ-বিদেশে বিস্তর ঘুরাঘুরির সুযোগ হয়েছে তাঁর, আর এইসব অভিজ্ঞতার কথাই তিনি বলেছেন সবার সাথে। 

মউদুদুল আলম একজন চিত্রশিল্পি ও আলোকচিত্রি। তার ৬৬তম জন্মদিনে কেক কেটে তা উদযাপন করা হয়। তিনি বলেন, ‘ছবি তোলার সাথে ঘোরাঘুরির বিস্তর সম্পর্ক রয়েছে। আর চারুকলার ছাত্র হওয়ার সুবাধে আমার মনে সবসময় রঙ ঘুরে বেড়ায়, আলোর খেলা দেখতে পাই। মনের আলোটাই সবচেয়ে বড় আলো বলে আমার কাছে মনে হয়। মানুষের কাছাকাছি গেলে তার দেখা পাওয়া যায়। এখানে যুক্ত হতে পেরে আমি আনন্দিত’ । তিনি তাঁর কাশ্মীর ভ্রমণের মজার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। 

কথা বলেন বইপিডিয়ার প্রকাশনীর প্রকাশক আশিক সারোয়ার। রামনাথের লিখা ‘অন্ধকারে আফ্রিকা’ নতুন করে আবার প্রকাশ করেছেন। প্রকাশকের কাছে অনেকে প্রশ্ন করেছেন নতুন লেখকদের বই বের করতে তারা কি ধরনের পদক্ষেপ নিবেন? 

সাংবাদিক এবং ভ্রমণ লেখক মাহবুব আলম বলেন, লেখার জন্য অন্যরকম একটি চোখ থাকতে হয়। তিনি ৮০দশকের প্রথম দিকে প্রথম থাইল্যন্ড ভ্রমণ করছেন, সেই সময়কার থাইল্যন্ড নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা বললেন। ৯১সালে তিনি সরকারি সফরে উত্তর কোরিয়া গেলে মাউন্ট কুমগন-এর যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল্ এবং তাঁকে সর্বোকনিষ্ট হওয়ায় টিম লিডার করা হয় সেই সব বিচিত্র অভিজ্ঞতা সবার সামনে উপস্থাপন করেন। 

কার্নিভালে ভ্রমণ লেখকদের বইগুলো প্রদর্শনী ও বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। ভ্রমণ লেখকদের নিয়ে এধরনের প্রানবন্ত আয়োজনে সবাই আয়োজকদের সাধুবাদ জানায়।