- ভ্রমণ
- চার বছরেও শেষ হয়নি এক বছরের কাজ
চার বছরেও শেষ হয়নি এক বছরের কাজ
বেলাবতে গঙ্গাঋদ্ধি জাদুঘর নির্মাণে মন্থরগতি

মন্থরগতিতে চলছে প্রাচীন দুর্গনগরী উয়ারী-বটেশ্বরের গঙ্গাঋদ্ধি জাদুঘরের নির্মাণকাজ। এ কারণে জীবদ্দশায় জাদুঘরটি দেখে যেতে পারবেন কিনা, সন্দিহান উয়ারী-বটেশ্বরকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করে দেওয়া প্রত্নতত্ত্ববিদ হাবিবুল্লাহ পাঠানের। এক বছরের কাজ চার বছরেও শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খননকাজে নেতৃত্ব দেওয়া ঐতিহ্য অন্বেষণের পরিচালক সুফি মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক।
অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কাছে উয়ারী-বটেশ্বর এলাকায় গঙ্গাঋদ্ধি জাদুঘর নির্মাণের আবেদন করেন। পরে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জাদুঘরটি নির্মাণে ৭ কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার ২৪৩ টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন জাদুঘরটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। পরে জেলা পরিষদের মাধ্যমে জাদুঘরটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্পের জন্য ১৬ হাজার বর্গফুট জায়গা নেওয়া হয়। নকশায় তিন তলা জাদুঘর ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও বরাদ্দ কম হওয়ায় ইস্টিমেট হয় দুই তলার। ভবনটির প্রথম ও দ্বিতীয় তলা হবে গ্যালারি। তৃতীয় তলায় গ্যালারির পাশাপাশি হওয়ার কথা ছিল গবেষকদের থাকার কক্ষ।
প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী, উদ্বোধনের পর থেকে এক বছরের মধ্যে জাদুঘরটির নির্মাণকাজ শেষ করার কথা। এর মধ্যে দুই দফা বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ। এর পর চলে গেছে আরও কয়েক বছর; কিন্তু এখনও শেষ হয়নি কাজ।
উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান উয়ারী-বটেশ্বর। বটেশ্বর গ্রামের শিক্ষক হানিফ পাঠান প্রথমে সংগ্রহ শুরু করেন আড়াই হাজার বছর আগের প্রত্নসামগ্রী। তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান প্রত্নসম্পদ সংগ্রহ ও গবেষণা শুরু করেন। ২০০০ সাল থেকে অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে খননকাজ শুরু হয়। উয়ারী-বটেশ্বর নামের গ্রাম দুটি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে আড়াই হাজার বছর আগের ধাতব চুড়ি, কাচের পুঁতি, উত্তর ভারতীয় মসৃণ কালো মৃতপাত্রের নমুনা, বৌদ্ধদের ব্যবহূত বর্শা, লোহার বল্লম, বাটখারা, পোড়ামাটির চাকতি, ছাপাঙ্কিত রোপ্য মুদ্রাভান্ডারসহ অনেক প্রাচীন নিদর্শন। মূল্যবান এই প্রত্নসামগ্রী সংরক্ষণের কথা গঙ্গাঋদ্ধি জাদুঘরে।
সরেজমিন দেখা যায়, ৫-৬ জন মিস্ত্রি টুকটাক জাদুঘরের কাজ করছেন। প্রকল্প এলাকায় জাদুঘর নির্মাণের তথ্যসংবলিত নেই কোনো সাইনবোর্ড। মিস্ত্রিদের মধ্যে একজন শাহিনুর রহমান শাহিন। রডের কাজ করেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, তাঁরা কয়েকজন এসেছেন সপ্তাহ দু-এক আগে। এর আগে জাদুঘরের নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। এখন পর্যন্ত জাদুঘরের দোতলার প্রায় অর্ধেক কাজ হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, অনেক ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে জাদুঘরের। বেশিরভাগ সময়ই কাজ বন্ধ থাকে। মাসের পর মাস কাজ বন্ধ থাকলেও সংশ্নিষ্ট দপ্তরের কোনো মাথাব্যথা নেই।
প্রত্নতত্ত্ববিদ মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান বলেন, ঐতিহ্য অন্বেষণের তত্ত্বাবধানে সরকার গঙ্গাঋদ্ধি জাদুঘর নির্মাণের জন্য ১০ বছর আগে টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখনও জাদুঘর নির্মাণ হয়নি।
জানতে চাইলে অধ্যাপক্ষ সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'আমি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না। শুধু এতটুকু বলছি, গঙ্গাঋদ্ধি জাদুঘর নির্মাণে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে আমাকে রাখা হয়নি। বাস্তবায়ন কমিটির কোনো পেপারসও আমাকে দেওয়া হয়নি। এক বছরেই জাদুঘর নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ এখানও নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।'
জাদুঘর নির্মাণে কাজ করছে আরসিসি আরই জেবি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী তপন কুমার পালের দাবি, জাদুঘর নির্মাণের শুরুতে ড্রয়িং ডিজাইনসহ বেশ কিছু সমস্যা ছিল। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সংশ্নিষ্ট দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার পরিবর্তন, সমন্বয়হীনতার অভাব, রড-সিমেন্টসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে জাদুঘর নির্মাণ সঠিক সময়ে করা সম্ভব হয়নি। তবে জেলা পরিষদের নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। এখন দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে নিতে পারবেন বলে প্রত্যাশা তাঁর।
নরসিংদী জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী নূর-ই-ইলহাম বলেন, জাদুঘরটি নির্মাণে প্রকল্পের ইস্টিমেটে কিছুটা ভুল ছিল। প্রাক্কলন ব্যয়েও সমস্যা ছিল। প্রাক্কলন সংশোধন ও করোনার কারণে কাজের গতি কম ছিল।
মন্তব্য করুন