চারদিকে নীল জলরাশি। সঙ্গে ঝকঝকে সাদা বালু আর সবুজ গাছে ভরা ছোট ছোট দ্বীপ। এটা সত্যিই নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। নয়নাভিরাম এ প্রকৃতিকন্যা বিশ্বজোড়া মানুষকে মুগ্ধ করে চলেছে। শান্ত ও মনোরম পরিবেশের টানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটক ভারত মহাসাগরের বুকের এ দ্বীপরাজ্যে ছুটে আসেন। মোট আয়তনের ৯৯ শতাংশ জলবেষ্টিত দ্বীপরাষ্ট্রের নাম মালদ্বীপ।

৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটিতে সহস্রাধিক দ্বীপ রয়েছে। ১৬০টিরও বেশি বিলাসবহুল রিসোর্ট পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাশ্চর্য উপকূলীয় দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত।

রাজধানী মালের ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্পিডবোটে মাত্র ১৫ মিনিটেই দ্বীপগুলোয় পৌঁছে যাওয়া যায়। প্রকৃতির সুশোভিত সুধা পান করতে চাওয়া আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় উভয় পর্যটকদের আকর্ষণ করতেই গন্তব্যগুলোকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশটিতে সবকিছুর মতো উল্টো পিঠও আছে। প্রত্যন্ত দ্বীপগুলোয় খাবারের বৈচিত্র্য সীমিত। মালদ্বীপের চিত্তাকর্ষক ইতিহাস এবং বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশটি যে ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে এ অবস্থায় এসেছে, সে সম্পর্কে জানার সুযোগও কম। অত্যাশ্চর্য সাদা বালু ও নীল জল পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য হলেও দেশটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না।

দেশটির জনপ্রিয় রিসোর্ট ক্রসরোডস দর্শকদের কিছুটা ইতিহাস জানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। যিশু খ্রিষ্টের জন্মেরও দুই হাজার বছর আগে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল মালদ্বীপ। এটিই দেশটির আবিষ্কারের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত। পর্যটকরা ক্রসরোডসের রঙিন ডিসপ্লেতে দেশটির সংস্কৃতি, মানুষ, ইতিহাস ও জলবায়ুর সংগ্রাম বিষয়ে কিছুটা জানতে পারেন।
দেশটির ইতিহাসের অন্তরালে থাকা নিয়ে ক্রসরোডস মালদ্বীপের বিপণন ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফিরাশ বলেন, এটির প্রধান কারণ মালদ্বীপকে সর্বদা একটি বিলাসবহুল গন্তব্য হিসেবে দেখা হয়, এর বেশি কিছু নয়। এটি যে একটি সমৃদ্ধ ইতিহাসেরও দেশ, তা আজ বিস্মৃতপ্রায়। বহু বছর ধরে এই ইতিহাস আলোচনার বাইরে থেকে গেছে। আমরা এখন পর্যটন ও স্থানীয় সংস্কৃতির মধ্যে সেই যোগসূত্র পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি।

ক্রসরোডস মালদ্বীপের ঐতিহাসিক ভূমিকা দ্বারা অনুপ্রাণিত। প্রাচীন যুগে পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিমকে সংযোগকারী ব্যবসায়িক রুটে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিরতিকেন্দ্র ছিল মালদ্বীপ। এটি দেশটির খাবারের ঐতিহ্যকেও ইঙ্গিত করে। স্থানীয় খাবারের জন্য নিবেদিত দেশের প্রথম এবং একমাত্র রেস্তোরাঁ হলো কালহু ওডি।
ফিরাশ বলেন, এখানে পর্যটকদের জন্য স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেওয়ার ভালো রেস্তোরাঁ নেই। সারাদেশে পাওয়া যায় এমন নানা ধরনের খাবার পরিবেশন করছে শুধু কালহু ওডি। এ অভিজ্ঞতা অবিশ্বাস্য।

বিশ্বব্যাংকের মতে, দেশটির জিডিপির দুই-তৃতীয়াংশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পর্যটন খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ জন্য দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি পর্যটকদের স্বাগত জানানোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা মালদ্বীপের প্রধান একটি সমস্যা। পরিবেশ সংরক্ষণে নিজস্ব প্রতিশ্রুতি পূরণ চেষ্টার অংশ হিসেবে ক্রসরোডস সম্প্রতি একটি কঠোর টেকসইবিষয়ক নিরীক্ষার পর গ্রিন গ্লোব সার্টিফিকেশন পেয়েছে। সূত্র: সিএনএন।