ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

স্লিপ পেয়েছেন, মজুরি পাননি

স্লিপ পেয়েছেন, মজুরি পাননি

মামুন রেজা, খুলনা

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২০ | ১৩:৪৫

মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করায় খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলকে সপ্তাহে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি গুনতে হবে প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকা। মজুরি স্লিপ দেওয়ার এক সপ্তাহ পরও স্থায়ী শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি দেওয়া হয়নি। মজুরি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শ্রমিক ও পাটকলের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের পর বদলি শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন দুই হাজার ৫১২ শ্রমিক। ফলে আর্থিক কষ্টে জীবনযাপন করছেন তারা।

বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, মজুরি স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলে মজুরি বেড়েছে দ্বিগুণ। আগে নয়টি পাটকলের নয় হাজার ৩৯৭ জন স্থায়ী শ্রমিকের সাপ্তাহিক মজুরি ছিল তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা। নতুন মজুরি স্কেল অনুযায়ী এখন সাপ্তাহিক মজুরি ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সপ্তাহে মজুরি বেড়েছে সোয়া তিন কোটি টাকা।

গত ১৬ জানুয়ারি স্থায়ী শ্রমিকদের নতুন মজুরি স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী মজুরি স্লিপ দেওয়া হয়। কিন্তু মজুরির টাকা মেলেনি। পাটকল শ্রমিকদের আট সপ্তাহের মজুরি বাবদ বকেয়া রয়েছে ৩০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন বাবদ বকেয়া রয়েছে আট কোটি ৬৯ লাখ টাকা। সব মিলে মোট বকেয়ার পরিমাণ ৩৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন, আলিম, জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলে বর্তমানে ২৮ হাজার ৪৩৩ টন পাটজাত পণ্য বিক্রির অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ২২৭ কোটি টাকা। মজুদ পণ্য দ্রুত বিক্রি না হলে সরকারের ভর্তুকি ছাড়া এ অর্থ পরিশোধের সামর্থ্য নেই পাটকলগুলোর।

আলিম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম লিটু বলেন, নতুন মজুরি স্কেল অনুযায়ী স্লিপ পেলেও শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। এই মিলে সাত সপ্তাহের মজুরি বকেয়া পড়েছে। অন্যান্য মিলেও সাত-আট সপ্তাহের মজুরি বকেয়া। টাকা না পেয়ে আর্থিক সংকটে রয়েছেন শ্রমিকরা। নতুন বছরে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ অন্যান্য ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এদিকে খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিল বাদে অন্য সাতটি পাটকলে আগে দুই হাজার ৫১২ জন বদলি শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন হওয়ার পর বিজেএমসির নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে তারা বিপাকে পড়েছেন।

প্লাটিনাম জুট মিলের বদলি শ্রমিক মো. পলাশ বলেন, আমাদের কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছি। এখন চাকরি খুঁজছি। বাধ্য হয়ে পরিবারের অন্যদের ওপর নির্ভর করে চলতে হচ্ছে। কিছু ভালো লাগে না।

একই মিলের বদলি শ্রমিক ইসলাম বলেন, ২০০৯ সালে বদলি শ্রমিক হিসেবে যোগদান করি। কিন্তু মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন হওয়ার পর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে চলব? বাধ্য হয়ে অন্যত্র কাজ খুঁজছি।

প্লাটিনাম জুট মিল সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, সম্প্রতি একটি চিঠির মাধ্যমে বদলি শ্রমিকদের

কাজ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বদলি শ্রমিকরা স্থায়ী শ্রমিকের অবর্তমানে কাজ করতেন। তাদের অধিকার রয়েছে মিলে কাজ করার। তাদের কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

প্লাটিনাম জুট মিলের মহাব্যবস্থাপক মো. গোলাম রব্বানী জানান, উৎপাদন কম থাকায় সম্প্রতি বিজেএমসি থেকে চিঠি দিয়ে বদলি শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়। সে অনুযায়ী বদলি শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, টাকা জোগাড় হলে স্থায়ী শ্রমিকদের বকেয়া টাকা দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমন্বয়কারী বনিজ উদ্দিন মিঞা জানান, নিজস্ব ফান্ডে টাকা না থাকায় মিলগুলো শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না। পাটকলে মজুদ থাকা পণ্য বিক্রি করতে পারলে মজুরি পরিশোধ করা সম্ভব হবে। অন্যথায় সরকারি অর্থায়নের কোনো বিকল্প নেই। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বদলি শ্রমিকদের আর কাজে নেওয়া হবে কিনা তা তার জানা নেই।

আরও পড়ুন

×