জাবি শিক্ষককে ডেকে নিয়ে প্রহার, বিচার দাবিতে মানববন্ধন

জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২২ | ০৮:০২ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২২ | ০৯:৪৫
নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে ডেকে নিয়ে ‘মারধর করেছে’ বলে অভিযোগ উঠেছে। জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার জাবি ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার বেলা একটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়কে পরিসংখ্যান বিভাগের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন এই মানববন্ধনে।
এ সময় তারা দাবি করেন, একটি ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগে তাদের শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
মারধরের শিকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আতিকুর রহমান। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়েও খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করতেন।
তার অভিযোগ,গত রোববার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি কফিশপে তাকে ডেকে নিয়ে মারধর করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, ওই শিক্ষককে বেধড়ক মারধর ও হুমকি দিচ্ছেন কয়েকজন তরুণ।
আতিকুর রহমান জানান, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী পড়াশোনার বিষয়ে তার কের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতেন। একপর্যায়ে ওই ছাত্রী ওই শিক্ষককে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি কফি হাউসে ডাকেন। পরে সেখানে ওই ছাত্রীর বন্ধুরা দল বেঁধে তাকে মারধর করেন।
মানববন্ধনে পরিসংখ্যান বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভির আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই মারধর করা হয়েছে। ফেসবুকে ওই শিক্ষকের ছবিসহ পোস্ট করে তাঁকে অপমানিত করা হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা ছিল এবং স্পষ্ট যে এটি একটি সাজানো নাটক।’
বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাসলিমা আকতার বলেন, ‘পুরো ঘটনা সবার সামনে নিয়ে আসা হোক। আর এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। কোনো তথ্য ছাড়াই তাঁরা ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ দিয়ে একটা নাটক সাজিয়ে পোস্ট দিল। শিক্ষক দোষী হলেও তাঁর গায়ে হাত তোলার অধিকার কোনো শিক্ষার্থীর নেই। যে শিক্ষককে মিথ্যা অভিযোগে হেনস্তা করা হলো, তিনি এর আগে সুনামের সঙ্গে আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।’
ফেসবুকে ওই শিক্ষককে মারধরের ভিডিওটি ছড়ানো ব্যক্তিদের একজন অরিন্দম বর্ধন। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা।
অরিন্দম বলেন, ‘একজন ছাত্রী গণিত বুঝতে আতিকুর রহমানের কাছে সহযোগিতা চাইলে তিনি জাহাঙ্গীরনগরে গিয়ে শিখে আসতে বলেন। এরপর থেকে তিনি ওই ছাত্রীকে দেখা করার প্রস্তাব এবং আইফোনসহ বিভিন্ন দামি উপহার দেওয়ার প্রস্তাব দেন। পরে ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সহযোগিতা নিয়ে আতিকুরকে ডেকে নিয়ে ধাওয়া দেন।’
শিক্ষক আতিকুর রহমান বলেন, ‘ওই ছাত্রী আমাকে বিভিন্ন সময়ে ফোন দিয়ে বিরক্ত করত। তার একাডেমিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসে। কয়েকবার সমাধানও করে দিই। তিনি আবার আমাকে ফোন করে পড়ানোর কথা বললে আমি পরীক্ষার আগে নর্থ সাউথে যাব না বলে জানাই। তারপরও বারবার অনুরোধ করলে তাকে পড়াতে রাজি হই এবং নর্থ সাউথে আমার অফিস কক্ষে আসতে বলি। কিন্তু তিনি অফিসে না গিয়ে আমাকে কফি হাউসে ডাকেন। সেখানে ওই ছাত্রীর সঙ্গে থাকা কয়েকজন যুবক কিছু বুঝে ওঠার আগেই বেধড়ক মারধর করেন। তাঁরা আমার মানিব্যাগ বের করে সব টাকা নিয়ে যান।’
এ বিষয়ে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে যোগযোগ করে কাউকে পাওয়া যায়নি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ–উল–হাসান বলেন, ‘আতিকুর রহমান যদি দোষ করেও থাকেন অভিযোগকারী তা বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করতে পারতেন। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। এখন অভিযোগকারী ডেকে নিয়ে যেভাবে আতিকুরকে হেনস্তা ও মারধর করেছেন, তা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।’