ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫

ব্যতিক্রমী

ভাসমানদের পাশে 'সেহরিওয়ালা'

ভাসমানদের পাশে 'সেহরিওয়ালা'

চট্টগ্রামে এক তরুণের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ 'সেহরিওয়ালা' -সমকাল

শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২২ | ১৪:০৬

সেহরির সাইরেন বাজতে তখনও বাকি কিছুটা সময়। কাটেনি অন্ধকারও। তখনই দেখা মেলে তাদের। অন্ধকার ফুঁড়ে সাইকেল চালিয়ে ছুটে আসছেন তারা। প্রতিটি সাইকেলের সামনে প্ল্যাকার্ডে লেখা 'সেহরিওয়ালা'।

সাইকেলে করে এই সেহরিওয়ালা তরুণরা প্রতিদিন সেহরির প্যাকেট পৌঁছে দিচ্ছেন চট্টগ্রাম মহানগরের অলিগলিতে সুবিধাবঞ্চিত ভাসমান মানুষ, ছিন্নমূল, গরিব ও অসহায়দের মধ্যে। আর এই সেহরি পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন অসহায় মানুষগুলো। দুই হাত তুলে দোয়া করছেন সেহরিওয়ালাদের জন্য।

চট্টগ্রাম মহানগরের ভাসমান মানুষের মধ্যে রান্না করা সেহরি বিতরণের অনন্য এ উদ্যোগ নিয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা তোসাদ্দেক নূর চৌধুরী তপু। তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগে যুক্ত আছেন এরশাদুল আলম, সোহেল বড়ুয়া, ইকবাল হোসেন, ইসমাইল হোসেন, আবরার রাফি, হাসান রাজা, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ শামীম। এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ চট্টগ্রামে এটিই প্রথম। প্রতিদিন চট্টগ্রামের দুই শতাধিক মানুষের হাতে সেহরির এই প্যাকেট তুলে দেওয়া হচ্ছে। রমজান মাসজুড়েই চলবে এ কার্যক্রম।

ভোররাতে 'সেহরিওয়ালা'র প্যাকেট পেয়ে আনন্দিত রিকশাচালক ইসমাইল বলেন, 'রোজা রেখে রিকশা চালানো অনেক কঠিন। তাই এখন বেশিরভাগ দিন ইফতারের পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত রিকশা চালাই। টাকার অভাবে ভালোভাবে সেহরি খেতে পারতাম না। একদিন রিকশা চালিয়ে মুরাদপুর রাস্তার পাশে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি একদল তরুণ সাইকেল নিয়ে হাজির। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাতে তুলে দিলেন সেহরি প্যাকেট। খুলে দেখি রান্না করা বিরিয়ানি। সেই থেকে খুব আনন্দের সঙ্গেই সেহরি করছি। এভাবে সেহরি পাওয়া খুবই সৌভাগ্যের ব্যাপার।'

নগরের মোহাম্মদপুর বস্তির বাসিন্দা আলী কদম বলেন, 'সেহরির সাইরেন দেওয়ার কিছু আগে একদল তরুণ ঘরের সামনে এসে চার প্যাকেট সেহরির প্যাকেট দিয়ে যায়। তা দিয়ে স্ত্রী আর দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে পেট ভরে সেহরি খেয়ে রোজা রাখি। বস্তির আরও কয়েকজন এভাবে প্যাকেট পান। এতে আমার মতো অনেকেই খুশি।' আরও অনেকেই বললেন একই কথা। জানা গেল, প্যাকেট বিতরণের এক পর্যায়ে উদ্যোক্তারাও কোথাও বসে নিজেদের সেহরি সেরে নেন।

এ প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা তোসাদ্দেক নূর চৌধুরী তপু সমকালকে বলেন, 'সব সময়ই চেষ্টা করি অসহায়দের জন্য কিছু করার। এরই অংশ হিসেবে পবিত্র এই রমজানে একেবারে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ 'সেহরিওয়ালা' নিয়ে হাজির হয়েছি। এমন অনেক ভাসমান মানুষ আছেন, যারা টাকার অভাবে চাহিদামতো খাবার খেয়ে রোজা রাখতে পারেন না। তাদের হাতেই রান্না করা বিরিয়ানির প্যাকেট তুলে দিচ্ছি আমরা।' তিনি আরও বলেন, 'টাকার বিনিময়ে ফুডপান্ডার মাধ্যমে অনেকে হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে পছন্দের খাবার কিনে খায়। ফুডপান্ডার এই আইডিয়া আমরা অসহায়দের জন্য সেহরি বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছি।'
উদ্যোক্তা তোসাদ্দেক নূর চৌধুরী তপু চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রচার সম্পাদক। এর আগে করোনা বিপর্যয়ের সময় তিনি ফ্রি মুদির দোকান, ফ্রি পুষ্টি গাড়ি, এক টাকায় শীতবস্ত্র প্রদান এবং ফ্রি সবজির মতো ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে আলোচিত হন।

প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে 'সেহরিওয়ালা'রা এই সেহরি রান্নার কাজ শুরু করেন। এর পর নগরের মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে ব্যাগভর্তি প্যাকেট নিয়ে সাইকেলে চড়ে ছড়িয়ে পড়েন সারা শহরে।

আরও পড়ুন

×