কুষ্টিয়ায় যুবজোট নেতা খুন
মামলায় সাবেক এমপির ভাইসহ ৬ স্বজনের নাম

মাহবুব খান সালাম
কুষ্টিয়া ও দৌলতপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ মে ২০২২ | ০৯:৫৬ | আপডেট: ১৩ মে ২০২২ | ০৯:৫৬
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা যুবজোটের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান সালাম হত্যায় ওই আসনের সাবেক এমপির পরিবারের নাম এসেছে। শুক্রবার বিকেলে সালামের বাবা এনামুল হক ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। এতে কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল হক চৌধুরীর পরিবারের ছয় সদস্য রয়েছেন। এমপির ভাই হোগলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম চৌধুরীকে করা হয়েছে প্রধান আসামি।
স্থানীয় বাসিন্দা, যুবনেতার স্বজন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দৌলতপুরের আল্লাহরদরগা এলাকার চরদিয়াড়ে কয়েক বছর আগে আস্তানা গাড়েন তাছের আলী নামে একজন। কুষ্টিয়া ছাড়াও দেশের নানা প্রান্তে তাছেরের ভক্ত ছিল। ওই স্থানে মাজার গড়ে শিষ্যদের নিয়ে গান-বাজনা করতেন তিনি। মাদকসেবন, কেনাবেচাসহ এলাকায় নানা অপকর্ম পরিচালনার অভিযোগও রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। এই মাজার পাহারা দেওয়ার জন্য একটি নিজস্ব বাহিনীও ছিল। তাছেরের অন্যতম সহযোগী ছিলেন খুন হওয়া যুবজোট নেতা সালাম। সম্প্রতি তাছেরের আস্তানায় রাশেদ নামে তাঁর এক ভক্ত খুন হন। ওই ঘটনার পর এলাকাবাসী আস্তানাটিতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। ওই সময় পালিয়ে যান তাছেরসহ তাঁর অনুগতরা। পরে তাছের, যুবজোট নেতা সালামসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। সালাম জামিনে ছিলেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এলাকায় প্রভাবশালী সালাম ওই আস্তানার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। আস্তানায় নানা স্থান থেকে মাসে কোটি টাকার বেশি অর্থ আসত। সেই টাকার ভাগ পেতেন সালামসহ অনেকেই। চরদিয়াড়ে তাছেরের আস্তানার পাশের গ্রাম সোনাইকুণ্ডিতে বাড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক এমপি রেজাউল হকের। তার এক ভাই সেলিম চৌধুরী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। আরেক ভাই বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। অন্যরাও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। পাশের গ্রামের প্রভাবশালী এমপির পরিবার আস্তানার নিয়ন্ত্রণ ও বিপুল আয়ের একটি অংশ পেতে উঠে-পড়ে লেগেছিলেন। এ নিয়েই তাছের, সালামসহ অন্যদের সঙ্গে তাঁদের বিরোধ তৈরি হয়। রাশেদের মৃত্যুর পর সাবেক এমপির পরিবারের সহযোগিতায় হামলা ও তাছেরকে এলাকা ছাড়া করার অভিযোগও রয়েছে।
তারা আরও জানান, রাশেদ হত্যার পর তাছেরের সঙ্গে সালামও পালিয়ে গিয়েছিলেন। জামিন নিয়ে এলাকায় ফেরেন তিনি। সম্প্রতি তাছেরকে ফের আস্তানায় ফেরানোর উদ্যোগ নিচ্ছিলেন সালামসহ তার সহযোগীরা। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে ভেতরে ভেতরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, তাছেরের কারণে এলাকায় সালামের ভালো প্রভাব ছিল। নতুন করে আস্তানা চালু করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। এ ছাড়া এলাকায় আধিপত্য নিয়ে তাঁর সঙ্গে অনেকের দ্বন্দ্ব চলছিল। সাবেক এমপির পরিবারের সঙ্গেও সম্পর্ক খারাপ ছিল। মাজার ও আধিপত্য নিয়েই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে তারা নানা সূত্রে জানতে পেরেছেন। কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
জেলা জাসদ সভাপতি গোলাম মহসিন জানান, সালামকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ছায়াতলে থেকে টোকেন চৌধুরীসহ তার পরিবারের লোকজন এলাকায় টেন্ডার বাণিজ্য, মানুষকে মারধর, হাট-ঘাট দখল থেকে নানা অপকর্ম করে আসছিলেন। এর প্রতিবাদ করায় টোকেনের নেতৃত্বে সালামকে হত্যা করা হয়েছে। দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন রিমন বলেন, যুবজোট নেতার খুনে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। আওয়ামী লীগ হত্যার রাজনীতি করে না। পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে।
এ বিষয়ে সাবেক এমপি রেজাউলের পরিবারের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কয়েক স্বজনের মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে সালাম হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। তারা দ্রুত খুনিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
দৌলতপুর থানার ওসি এসএম জাবীদ হাসান জানান, সালামের বাবার মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। চৌধুরী পরিবারের ছয় সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
গত বুধবার রাতে আল্লারদরগা এলাকায় সালামকে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলেও রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
- বিষয় :
- কুষ্টিয়া
- যুবজোট নেতা খুন
- এমপির ভাই