ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫

সাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গলার কাঁটা ইটভাটা

সাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গলার কাঁটা ইটভাটা

নাসিরনগরে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকলেও বহাল তবিয়তে চলছে মেসার্স জোনাকি ব্রিকস ফিল্ড নামের ইটভাটা- সমকাল

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৪ মে ২০২২ | ০২:০৪

পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেই। এক কিলোমিটারের মধ্যে সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় নিষিদ্ধও করা হয়েছে। এর পরও ভাটায় পুড়ছে ইট। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্ভোগে রয়েছেন। এ নিয়ে অভিযোগ করে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা। নাসিরনগর উপজেলার চকবাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা নদীর উত্তর দিকে গড়ে তোলা হয়েছে মেসার্স জোনাকি ব্রিকস ফিল্ড নামে ওই ইটভাটাটি।

জানা গেছে, ইটভাটায় পরিবেশদূষণ ও নদীর ভাঙনের বিষয়টি উল্লেখ করে স্থানীয় বাসিন্দারা কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য, অষ্টগ্রামের ইউএনও, বন, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রী, কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও কিশোরগঞ্জের ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

বিভিন্ন দপ্তরের দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, সরকারি খাস জমিতে মেসার্স জোনাকি ব্রিকস ফিল্ড নামে ইটভাটা পরিচালনা করা হচ্ছে। এর সরকারি কোনো অনুমোদন নেই।

১০-১২ বছর আগে স্থানীয় বাসিন্দারা এ নিয়ে অভিযোগ দিলেও ইটভাটাটি বন্ধ হয়নি। এ ভাটার এক কিলোমিটারের মধ্যে নাসিরনগর অংশে সাতটি এবং অষ্টগ্রাম অংশে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে নাসিরনগরে দুর্গাপুর, বারৈচিরা, রতনপুর, বালিখোলা ও চাতলপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাতলপাড় ওয়াজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজ রয়েছে। এ ছাড়া অষ্টগ্রাম অংশে রয়েছে নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ইটভাটার ধোঁয়ায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ এলাকার বাসিন্দারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। গাছপালা ও ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। ভাটার কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে চাতলপাড়, চকবাজার ও বিলের পাড় ভাঙনের কবলে পড়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল হক বলেন, ভাটার এক কিলোমিটারের মধ্যে সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে চকবাজারের ব্যবসায়ী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ভুক্তভোগীরা বলেন, ইটভাটার কারণে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে, এমন ৩০টি পরিবার রয়েছে। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীতে চলে গেছে।

ভাটার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী অষ্টগ্রামের ইসলাম উদ্দিন বলেন, 'এ ভাটার বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির মামলা করা হয়েছে।' মামলার সাক্ষী ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন, 'আমাকে সাক্ষী করা হয়েছে, অথচ বিষয়টি আমি জানিই না।'

এ বিষয়ে ইটভাটার মালিকদের একজন জামাল মিয়া মোবাইল ফোনে বলেন, 'আমি গাড়িতে আছি। এখন কথা বলতে পারব না। কাগজপত্র দেখে কথা বলতে হবে।' এরপরই তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

কিশোরগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট রুবায়েত সৌরভ বলেন, 'ওই ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। এক কিলোমিটারের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় জোনাকি ইটভাটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেড় লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।'

নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদি হাসান খান শাওন এ বিষয়ে বলেন, অষ্টগ্রাম উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলমও একই কথা বলেন।

আরও পড়ুন

×