চট্টগ্রামে বস্তিতে আবারও আগুন
আমেনাদের স্বপ্নও পুড়ে ছাই

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১৩:৪৩
আগুনে পুড়ে গেছে চট্টগ্রামে রেলওয়ের জমিতে গড়ে ওঠা বস্তির দুই শতাধিক ঘর।
ঘরের সঙ্গে পুড়েছে বহু মানুষের স্বপ্ন। তাদেরই একজন পোশাক কর্মী আমেনা
আক্তার। তার বিয়ের জন্য জমানো তিন লাখ টাকাও ভোরবেলার আগুনে ছাই হয়ে গেছে।
এখন কীভাবে তার নতুন সংসার শুরু হবে, সেই দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবারটি।
আমেনার মা জাকিয়া বেগম বলেন, অনেক দিন ধরে ইচ্ছা ছিল ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে
দেব। মেয়ের বিয়ের জন্য ছেলে দেখা হচ্ছিল। তাই চাকরির তিন লাখ ১০ হাজার
টাকা সমিতিতে জমিয়েছিলাম। কিছুদিন পর বস্তি ছেড়ে ভালো পরিবেশে একটি ঘর
নেওয়ার ইচ্ছা ছিল। সে মতো টাকাগুলো তুলে এনে ঘরে রেখেছিলাম। তবে এদিন ভোরে
বস্তিতে ভয়াবহ আগুনে ঘরের সঙ্গে ছাই হয়ে গেছে সেই কষ্টের টাকা। নিজের ঘর ও
মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো টাকা হারিয়ে মেয়ের ভবিষ্যৎ ভেবে এখন দিশাহারা।
আমেনা আক্তার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। পুড়ে যাওয়া ঘরে স্বামী আর মেয়ে
নিয়ে থাকতেন জাকিয়া বেগম।
গতকাল সোমবার নগরীর মাঝিরঘাট এলাকায় নাহার বিল্ডিংয়ের পাশে মাদারবাড়ির
এসআরবি বস্তিতে ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই শতাধিক ঘর পুড়ে ছাই
হয়েছে। গৃহহারা হছেন চার শতাধিক মানুষ। গতকাল ভোর ৫টা ১০ মিনিটে এ আগুন
লাগার ঘটনা ঘটে।
গতকাল সকালে বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ঘরের ছাইয়ের মধ্যে
সহায়-সম্বল হারানো সব মানুষ মূল্যবান জিনিসপত্র খুঁজছেন। পোড়া জিনিসপত্র
পরিস্কার করছেন। পোড়া টিন ঘেরা দিয়ে তৈরি করছেন অস্থায়ী ঘর। হাঁড়ি-পাতিল,
কাপড় ও সন্তানদের স্কুলের বই রাখছেন গুছিয়ে। এ বস্তিতে থাকত নিম্নআয়ের
কয়েকশ' পরিবার। আগুনে সব হারানো পরিবারগুলো এখন খোলা আকাশের নিচে আশ্রয়
নিয়েছে।
বস্তির বাসিন্দা ভ্যানচালক লোকমান হোসেন বলেন, 'ছোট থেকেই বেড়ে ওঠা এই
বস্তিতে স্ত্রী-সন্তানসহ আটজন নিয়ে থাকতেন। ভোরে বস্তির পশ্চিমদিক থেকে
আগুন লাগে। চোখের পলকে আগুন ছড়িয়ে যায়। নিজেরা জীবন নিয়ে বাইরে চলে আসি। ঘর
থেকে কিছুই আনতে পারিনি।'
বস্তির আরেক বাসিন্দা রিকশাচালক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আগুন আগুন চিৎকার
শুনে ঘুম থেকে উঠে দেখি চারদিকে আগুন জ্বলছে। ঘর থেকে গুরুত্বপূর্ণ মালপত্র
নিয়ে নিরাপদে চলে যাই। কেউ ষড়যন্ত্র করে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে কিনা তা
প্রশাসনের দেখা দরকার।
নগরীর আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক ফরিদ
আহমেদ চৌধুরী জানান, ভোরে আগুন লাগে। খবর পেয়ে নগরীর আগ্রাবাদ, চন্দনপুরা,
নন্দনকানন ও চকবাজার ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিটের ১৫টি গাড়ি ঘটনাস্থলে
গিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে সকাল ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত আগুন লাগার কারণ ও
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আজিজুল ইসলাম জানান,
বস্তিতে দুই শতাধিক কাঁচা ঘর পুড়ে গেছে। দ্রুত আগুন নেভাতে পারায় কিছু ঘর
রক্ষা পেয়েছে।
এর আগে নগরীর পাঁচলাইশ থানার মির্জারপোলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই ভাইয়ের দুটি বস্তি আগুনে পুড়ে গেছে।
- বিষয় :
- আগুন