ঢাকা রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

কসবায় মাটি ফুঁড়ে নির্গত 'গ্যাসে'র বিষয়ে সিদ্ধান্ত ৭২ ঘণ্টা পর

কসবায় মাটি ফুঁড়ে নির্গত 'গ্যাসে'র বিষয়ে সিদ্ধান্ত ৭২ ঘণ্টা পর

টিউবওয়েল বসানোর জন্য খনন করা কূপ থেকে গ্যাসের সঙ্গে বের হচ্ছে বালু ও পানি- সমকাল

কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ০৫:৪৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়ন পরিষদের শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন টিউবওয়েলের কূপ থেকে দুই দিন ধরে অবিরাম বের হচ্ছে 'গ্যাস'। সঙ্গে উঠছে বালু ও পানি। বুধবার সকাল থেকে বিকট শব্দে এই কূপ থেকে 'গ্যাস' নির্গত হচ্ছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে বিদ্যালয়ের দুটি ভবন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে পেট্রোবাংলার চার সদস্যের একটি কারিগরি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তিনদিন পর্যবেক্ষণের পর তারা সিদ্ধান্ত জানাবেন। গ্যাস নির্গমনস্থলের পাশে লাল পতাকা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

বায়েক ইউপি চেয়ারম্যান ও শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল মামুন ভূইয়া জানান, বিদ্যালয়ের পুরাতন টিউবওয়েলটি কাজ না করায় সরকারিভাবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্বাবধানে নতুন একটি টিউবওয়েল বসানোর কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। প্রায় ৫৪০ ফুট খননের পর বুধবার সকালে বালু ও পানির স্তর পাওয়ায় ফিল্টার পাইপ লাগানোর জন্য শ্রমিকরা পাইপ ওপরের দিকে তুলতে শুরু করলে হঠাৎ করে বিকট শব্দে বালু ও পানির সঙ্গে গ্যাস উঠতে থাকে। এই অবস্থা দেখে টিউবওয়েল মিস্ত্রিরা ভয়ে দূরে সরে যায়। গ্যাসের সঙ্গে নিচের বালু উঠে আসার কারণে বিদ্যালয়ের দুটি ভবন হুমকির মুখে। প্রচণ্ড বেগে নিচ থেকে গ্যাস, বালু ও পানি ওঠার কারণে একটি ভবন অর্ধেক বালুর নিচে চলে যাচ্ছে। অপর ভবনটির মধ্যে হালকা কাপুনি অনুভূত হচ্ছে। এ ছাড়া গ্যাস ওঠার জায়গায় গর্ত বড় হয়ে দেবে গেছে বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারটি। বালু ও পানিতে বিদ্যালয়ের মাঠ একাকার হয়ে গেছে। দ্রুত বিষয়টির নিরসন না হলে বিদ্যালয়ের প্রায় ৮শ' শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে।

তিনি জানান, বুধবার রাতে পেট্রোবাংলা থেকে চার সদস্যের একটি টেকনিক্যাল দল এসেছে। তারা পরীক্ষা করে দেখছেন এবং ঢাকায় তাদের স্যাম্পল (নমুনা) পাঠানোর কথা। এ ছাড়া আরও কয়েকজন টেকনিক্যাল কর্মকর্তা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার জন্য আসবেন বলে তিনি শুনেছেন।

বালু ও পানিতে বিদ্যালয়ের মাঠ একাকার হয়ে গেছে- সমকাল

ঢাকা থেকে আসা টেকনিক্যাল টিমের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা রাজি হননি। তবে সালদা গ্যাস ফিল্ডের প্লান্ট অপারেটর রেজাউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'বুধবার গভীর রাত থেকে পেট্রোবাংলার টেকনিক্যাল টিম স্যাম্পল সংগ্রহের কাজ করছে। বিকট শব্দ ও প্রচণ্ড বেগে গ্যাস, পানি ও বালু ওঠার কারণে কাজ করতে খুব বেগ পেতে হচ্ছে। ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের পর সিদ্ধান্ত নেবে বাপেক্স কর্তৃপক্ষ। পর্যবেক্ষণের পর আমরা একটি ভালো সংবাদ পাব বলে আশা করছি।'

বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রাশেদুল কাওসার ভূইয়া জীবন। পরিদর্শনের পর তিনি জানান, বিষয়টি তিনি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে অবহিত করেছেন। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বুধবার সকালে একটি নতুন গভীর নলকূপ স্থাপনের সময় থেকে দ্রুত গতিতে গ্যাস বের হচ্ছে। কোনোভাবেই তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিষয়টি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা থেকে আসা টেকনিক্যাল টিম কাজ করছে। দুর্ঘটনা এড়াতে সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন

×