চট্টগ্রামে পশুহাটে অভাবের চিত্র

ফাইল ছবি
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২২ | ১৩:৪০
এক দিন পরই মুসলমানদের দ্বিতীয় প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। কোরবানির এই উৎসবকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তে জমে উঠছে চট্টগ্রামের পশুর হাটগুলো। দেখাদেখি ও দর কষাকষি শেষে কেনাবেচায় ফিরছেন ক্রেতা-বিক্রেতা। তবে এবার আকর্ষণ কম বড় গরুর প্রতি। করোনার অভিঘাত এবং জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশচুম্বী মূল্যের কারণে অভাবের তাড়নায় বিক্রেতারা যেমন তাঁদের ছোট ও মাঝারি গরুগুলোও বাজারে তুলেছেন, তেমনি একই কারণে ক্রেতাদেরও দৃষ্টি আটকে গেছে তুলনামূলক এসব স্বল্পমূল্যের পশুর ওপর।
চট্টগ্রামে কোরবানির পশু হিসেবে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। দেশের বর্তমান অবস্থা, মানুষের দৈন্য ও দুর্দশার কথা মাথায় রেখে ব্যাপারীরাও দূর-দূরান্ত থেকে ছোট ও মাঝারি আকৃতির পশু বেশি এনেছেন। বিক্রিও হচ্ছে বেশ। এতে অসন্তুষ্ট নয় কোনো পক্ষই। নগরীর সবচেয়ে বড় হাট সাগরিকার ইজারাদার আলী আকবর বলেন, আস্তে আস্তে পশুর বাজার জমছে। শেষ মুহূর্তে ক্রেতার সমাগম বাড়লেও এবারের চিত্র ভিন্ন। তাদের দর কষাকষি ও চাহিদা মূল্যায়ন করে মনে হচ্ছে, কোরবানির জন্য বড় অঙ্কের বাজেট রাখতে পারেননি অধিকাংশ ক্রেতা। বেশিরভাগ মানুষ ছোট ও মাঝারি গরু কিনছেন।
কুষ্টিয়ার ব্যাপারী আলম মিঞা বলেন, সংসারে টানাটানি চলছে। তাই চট্টগ্রামের চারটি পশুর হাটে শতাধিক ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরু এনেছি। বেশিরভাগই বিক্রি হয়েছে। দিনাজপুরের আলী হাসান বলেন, বাজারে আসা বেশিরভাগ ক্রেতাই কম টাকার মধ্যে কোরবানির পশু কিনতে চাইছেন। আমাদেরও গরুগুলো বিক্রি করতে না পারলে খেয়েপরে বেঁচে থাকা কঠিন হবে। তাই অল্প লাভেই ছেড়ে দিচ্ছি।
ক্রেতা আবদুর রহমান বলেন, করোনাসহ নানা কারণে আয়ের ওপর বড় ধাক্কা পড়েছে। তার ওপর অসহনীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য। এতকিছুর পরও কোরবানি তো দিতে হবে। তাই অল্প বাজেটের মধ্যে একটি ছোট সাইজের গরু কিনতে এসেছি। হালিশহরের বাসিন্দা মোরশেদ হোসাইন বলেন, বাজারে বিভিন্ন দাম ও আকৃতির পশু থাকলেও আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রেখেই গরু কিনতে হয়েছে। ক্যাবের বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, করোনার পাশাপাশি ভোজ্যতেলসহ বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের আকাশচুম্বী দামে দিশেহারা মানুষ। তারপরও কোরবানি তো দিতে হবে। এ জন্য অল্প টাকার মধ্যে কোনো রকম একটি পশু কিনে আনুষ্ঠানিকতা সারতে চাইছেন অধিকাংশ ক্রেতা।
পশুর চাহিদা বাড়লেও বাড়েনি হাট :বন্দরনগরীতে ২০১১ সালে পশু কোরবানি হয়েছিল তিন লাখ ৮৬ হাজার ৭৬৭টি। এবারের চাহিদা আট লাখ ২১ হাজার। সময়ের সঙ্গে পশুর চাহিদা লাফিয়ে বাড়লেও নতুন করে গড়ে ওঠেনি পশুর হাট। সিটি করপোরেশনের সেই অস্থায়ী ছয়টি স্থানই ভরসা পৌনে এক কোটি নগরবাসীর! চাপ বাড়লেই হাট চলে যায় ব্যস্ততম সড়কের ওপর। দীর্ঘদিন ধরে নতুন পশুর হাট না বসায় ভোগান্তিকে সঙ্গী করেই কোরবানির পশু কিনতে হচ্ছে নাগরিকদের। আর বাজার সংকটকে পুঁজি করে অবৈধ পশুর হাট বসিয়ে রমরমা বাণিজ্য করে আসছেন প্রভাবশালীরা।
চট্টগ্রাম গরু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অলি আহমদ বলেন, নগরীতে প্রতিবছর মানুষ বাড়ছে। কোরবানির পশুর চাহিদাও বহুগুণে বাড়ছে। শুধু বাড়ছে না হাট। মাত্র ছয়টি স্থানে লাখ লাখ পশু বিক্রি করতে গিয়ে ব্যাপারীরা নানা ভোগান্তির শিকার হন। সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয় ক্রেতাদেরও।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে প্রতি বছর ১৫ শতাংশের বেশি কোরবানি পশুর চাহিদা বাড়ছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় বৈধ হাট খুবই কম। এতে নানামুখি সংকট তৈরি হচ্ছে, বাড়ছে ভোগান্তি ও হয়রানি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামশুল তাবরিজ বলেন, জায়গা না পাওয়ায় কোরবানি পশুর হাট বাড়ানো যাচ্ছে না। নির্দিষ্ট ছয়টি হাটে পশু বেচাকেনা করতে বলা হয়েছে। তবে এবার ১০টি নতুন হাটের প্রস্তাব দিলে জেলা প্রশাসন তিনটির অনুমোদন দেয়।
- বিষয় :
- চট্টগ্রামে পশুহাট
- পশুর হাট
- কোরবানি