ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

বড় ভাইয়ের সঙ্গে বেড়াতে না গিয়ে বেঁচে গেছে ছোট ভাই তৌফিক

বড় ভাইয়ের সঙ্গে বেড়াতে না গিয়ে বেঁচে গেছে ছোট ভাই তৌফিক

চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে বসে কাঁদছিলেন জিয়াউল হক সজীবের ছোটভাই তৌফিক (কালো টি-শার্ট পরা)- সমকাল

শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২২ | ১৩:১৮ | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২২ | ১৩:১৮

শিক্ষক-শিক্ষার্থী একত্রে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনা দেখতে যাওয়ার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন কোচিং সেন্টারের শিক্ষক জিয়াউল হক সজীব। নিজের সঙ্গে ছোট ভাই তৌফিককেও যেতে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে সায় দেননি তিনি। ভাইয়ের সঙ্গে বেড়াতে না যাওয়ায় বেঁচে গেছেন তৌফিক।

শুক্রবার মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনা দেখে ফেরার পথে ট্রেন-মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন জিয়াউল হক সজীব। তার সঙ্গে লাশ হয়েছেন আরও তিন শিক্ষকও। তাদের সঙ্গে ওপারে পাড়ি জমিয়েছে এবারের পাঁচ এসএসসি পরীক্ষার্থী- হিসান, আয়াত, মারুফ, তাসফির ও হাসান। তাদের সবার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে। থাকেন সবাই আমান বাজারের চিকনদণ্ডি ইউনিয়নের যুগেরহাট এলাকায়। পরীক্ষার আগে মনকে সতেজ করতে সবাইকে নিয়ে ঝরনা দেখতে যায় কোচিং সেন্টারের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। চালক ও হেলপারসহ মোট ১৭জন যাত্রী ছিলেন মাইক্রোবাসে। এদের মধ্যে ছয়জন আহত হলেও না ফেরার দেশে চলে গেছেন ১১ জন।

বড় ভাইয়ের এমন মৃত্যুকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষক জিয়াউল হক সজীবের ছোট ভাই তৌফিক। চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে 'আমার ভাই কই? এখন কে আমারে শাসন করবে? পরামর্শ দেবে?'- এভাবে ভাইয়ের জন্য বিলাপ করতে করতে কিছুক্ষণ পর পর অজ্ঞান হয়ে পড়েন তৌফিক। কান্নারত অবস্থায় তৌফিক সমকালকে বলেন, ‘শুক্রবার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বাড়ি থেকে চলে যায় বড় ভাই। তাই বাড়ি থেকে শেষবারের মতো যাওয়ার সময়ও ভাইয়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। এটি যে তার শেষ যাত্রা হবে তা কখনও কল্পনাও করতে পারিনি। ও ভাই তুই কেমনে এভাবে আমাকে একা করে চলে গেলি? এখন থেকে কে আমায় বকাঝকা করবে? শাষণ করবে? আমি ভাই বলে ডাকবো কাকে?'- ভাই ভাই বলে তার এমন বিলাপে কান্নায় পুরো হাসপাতালের চারপাশ ভারি হয়ে ওঠে।

এদিকে সজীব নিহত হওয়ার খবর পেয়ে হাটহাজারী উপজেলার চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের খন্দকিয়া গ্রামের আব্দুল লতিফ মাস্টারের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। জিয়াউল হক সজীব ওমরগণি এমইএস কলেজের গণিত দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়ালেখার পাশাপাশি ওই এলাকার যুগীরহাট এলাকার আরএনজে কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করতেন তিনি। এ জন্য এলাকায় তিনি অনেকের কাছে 'মাস্টার সজীব' নামেও পরিচিত ছিলেন। তার মা শাহনাজ আক্তারও ছেলেকে আদর করে ডাকতেন মাস্টার সজীব। মুদি দোকানের কর্মচারী আবদুল হামিদের চার ছেলে মেয়ের মধ্যে সবার বড় সজীব। ছেলে বড় হয়ে পরিবারের হাল ধরবে এই স্বপ্ন ছিল তাদের। কিন্তু তার আগেই ট্রেন দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে চলে যেতে হয়েছে সজীবকে। তার এমন মৃত্যুকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনসহ এলাকার বাসিন্দারাও।

আরও পড়ুন

×