বৃক্ষমেলা
ফুল-ফলের হাজারো গাছের সমাহার

খুলনার বৃক্ষমেলায় স্থান পাওয়া এডেনিয়াম-সমকাল
মামুন রেজা, খুলনা
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২২ | ১২:০০
পাকুড় বনসাই, গাছটির বয়স ৪৫ বছর। খুলনা নিউমার্কেট নার্সারির মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন এত বছর ধরে এই গাছের যত্ন করে আসছেন। খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে আয়োজিত বৃক্ষমেলায় আনা বনসাইটির দাম হাঁকা হয়েছে দেড় লাখ টাকা। জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, দুই বছর আগে বৃক্ষমেলায় এক ক্রেতা গাছটির দাম এক লাখ টাকা বলেছিলেন। তবে তিনি বিক্রি করেননি। দেড় লাখ টাকা দিলে গাছটি বিক্রি করতে চান জাহাঙ্গীর। এ ছাড়া তাঁর স্টলে হাজারো প্রজাতির গাছের চারা রয়েছে। যার প্রতিটির মূল্য ২০ টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত।
রূপালী নার্সারির স্টলে আনা হয়েছে ১১ বছর বয়সী দুর্লভ প্রজাতির একটি 'শ্বেত চন্দন' গাছ। এই গাছটিরও দাম হাঁকা হয়েছে দেড় লাখ টাকা। এ ছাড়াও তাঁদের কাছে রয়েছে চন্দন বনসাই, মিষ্টি তেঁতুল, সিডলেস আতাগাছের চারা।
মালঞ্চ পুষ্প কেন্দ্র নার্সারির স্টলে শোভা পাচ্ছে ২২ বছর বয়সী একটি এডেনিয়াম। গাছের ডালে একটি কাগজে মূল্য লেখা রয়েছে ৩০ হাজার টাকা। 'লাইলি-মজনু' শোভা বর্ধনকারী একটি গাছ রয়েছে স্টলটিতে। গাছের পাতার ওপরের অংশের রং সবুজ ও নিচের অংশ খয়েরি। প্রতিদিন এসব গাছ দেখতে ভিড় করছেন বৃক্ষপ্রেমী মানুষ।
বৃক্ষমেলার ৬০টি স্টলে রয়েছে মিষ্টি তেঁতুল, রামবুটান, ত্বিন, নীল গাছসহ বিভিন্ন ফুল, ফল, বনজ, ঔষধি ও শোভাবর্ধনকারী কয়েক হাজার প্রজাতির দেশি-বিদেশি গাছের চারা। রয়েছে ছাদ কৃষির স্টল ও মাটি পরীক্ষা করার ব্যবস্থা। ১৫ দিনব্যাপী এই মেলা চলছে। জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে ২২ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত। তবে মেলায় সকালের তুলনায় বিকেলে ভিড় হচ্ছে বেশি।
মেলায় অন্যতম আকর্ষণ নীল গাছ। আজাদ নার্সারির স্টলে রয়েছে গাছটি। মালিক আবুল কালাম আজাদ জানান, তাঁর নার্সারিতে দুটি নীল গাছ রয়েছে, একটি বড় ও একটি ছোট। বিক্রির উদ্দেশ্যে নয়, প্রদর্শনীর জন্য এনেছেন এ দুটি চারা। এ ছাড়া তাঁর নার্সারিতে বিলুপ্ত প্রজাতির অসংখ্য ঔষধি গাছের চারা রয়েছে।
মেলায় ব্যতিক্রমী গাছের চারা নিয়ে এসেছে রানা নার্সারি। নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে স্টার জুঁইগাছের চারা। যেটির বয়স ৩ বছর, দাম ১৫ হাজার টাকা। নার্সারি মালিক জহুর শেখ বলেন, মেলায় নৌকার আদলে দুটি গাছের চারা নিয়ে এসেছি। আগে ময়ূর, হাতি, বাঘের আকৃতিতে গাছের চারা বানাতাম। তবে যে পরিমাণ পরিশ্রম হয়, তেমন দাম পাওয়া যায় না। তাই এবার শুধু নৌকার আদলের চারা নিয়ে এসেছি। মেলায় বেশ কয়েকটি স্টলে শোভা পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন বনসাই, অ্যাডেনিয়াম ও ক্যাকটাস। এতে রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের আদর্শ বাড়ির আকৃতি।
বাগেরহাটের মোংলা থেকে মেলায় এসেছেন মুর্শিদা সুমি ও তাঁর ভাই নাজমুল হক। ছাদবাগানের চারাগুলো নিয়ে এসেছেন মেলায়। স্টলের নাম দিয়েছেন মুসুর ছাদবাগান। তাঁদের স্টলে রয়েছে চায়না বট, পেরু বটসহ সাড়ে ৩ হাজার প্রজাতির দেশি-বিদেশি গাছের চারা। তাঁদের কাছে বেশিরভাগই অর্কিড প্রজাতির গাছ রয়েছে। যার দাম ১৮ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
মালটা, লেবু, কদবেল, ত্বিনসহ বিভিন্ন গাছের চারা রয়েছে ডালিয়া নার্সারির স্টলে। এ নার্সারির বিক্রেতা মনিরুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি কম ও গরম বেশি হওয়ায় ক্রেতাদের কিছুটা আগ্রহ কম। ভিড় হয় মূলত বিকেল ৫টা থেকে। তবে রাত ৮টা বাজলেই দোকান বন্ধ করার মাইকিং করা হয়। ফলে ক্রেতারা অনেকে খালি হাতেই ফিরে যেতে বাধ্য হন। রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চালু থাকলে বেচাকেনা বেশি হতো।
১০ বছর বয়সের অ্যাডেনিয়াম ৭ হাজার টাকা, মিসরের শরিফা ৬০০ টাকা, জয়তুন ৫০০ টাকা, ত্বিন ৫০০ টাকা, ব্ল্যাকবেরি ৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন গোলাপ কানন নার্সারির শেখ মো. আলাউদ্দিন।
মালঞ্চ পুষ্প কেন্দ্র নার্সারির স্টলে ভিয়েতনামের নারিকেলের চারা ২ হাজার টাকা, দুষ্প্রাপ্য ঔষধি গাছ ননিফল ৫ হাজার টাকা, কেয়া গাছ ৩০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। সবুজ নার্সারিতে কিউজাই জাতের আমের চারার মূল্য ২ হাজার ৮০০ টাকা রাখা হচ্ছে।
মৌসুমী নার্সারির স্টলে রয়েছে গোলমরিচ, থাই শরিফা, চেরিফল, থাইপাতা, লবঙ্গ, এলাচিসহ মসলাজাতীয় গাছের চারা। এ ছাড়া রয়েছে বিদেশি প্রজাতির রামবুটান গাছের চারা, যার দাম ৬০০ টাকা।
মেলায় লাকি ব্যাম্বু দিয়ে বিভিন্ন নকশা তৈরি করেছেন বনকন্যা নার্সারির সোহাগ উদ্দিন শেখ। যার দাম ২০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা।
মেলায় আসছেন সব বয়সী নারী-পুরুষ। তবে তুলনামূলকভাবে শিক্ষার্থীদের পদচারণা বেশি। বিকেল গড়াতেই অভিভাবকরা তাঁদের সন্তান নিয়ে আসছেন, গাছের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে। অফিস শেষে গাছপ্রেমীরা ঘুরে যাচ্ছেন মেলা থেকে, কিনছেন তাঁদের পছন্দের গাছ।
নগরীর বয়রা থেকে গাছ কিনতে এসেছেন আবু সুফিয়ান দম্পতি। তাঁরা বলেন, কিছু গাছের দাম অনেক বেশি চাওয়া হচ্ছে। তবে প্রচলিত প্রজাতির গাছের চারার মূল্য স্বাভাবিক আছে। তাঁরা কারিপাতা, জুঁই ফুলের চারাসহ সাতটি গাছের চারা কিনেছেন।
মেলার আয়োজকরা জানান, মেলায় প্রথম ৭ দিনে ১০ হাজার ৭৫১টি গাছের চারা বিক্রি হয়েছে, যার মূল্য ১৩ লাখ ১২ হাজার ২৩০ টাকা। তাঁদের এই আয়োজনে সব ধরনের গাছের চারা, সার, বীজ, মাটি, কীটনাশক ও কৃষি উপকরণ রয়েছে।
- বিষয় :
- বৃক্ষমেলা