সুনামগঞ্জে ভাঙা সড়কের ২০ স্থানে সেতু নির্মাণ হবে

বন্যার পানির তোড়ে ক্ষতবিক্ষত সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়ক। উজ্জ্বলপুর এলাকার ছবি-সমকাল
পঙ্কজ দে, সুনামগঞ্জ
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২২ | ১২:০০
'ইকানো উঁচু সড়ক দিলে ভাঙতোই পারে, কারণ পানির চাপ বেশি ইবায়, বৈশাখের পানি আটকানির ব্যবস্থা কইরা, নিচা (নিচু) সড়ক দিলেই ভালা অয়, ২০২০ সালেও বন্যায় ইবায়দি ভাঙছে, ইবার আরেকবার ভাইঙ্গা উড়াইয়া নিছে গি।' কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের উজ্জ্বলপুরের পার্শ্ববর্তী বড়গাগটিয়া গ্রামের নুরুল আমিন।
উজ্জ্বলপুরের পাশা মিয়ার বাড়ির পাশ থেকে উজ্জ্বলপুর মোড় পর্যন্ত সড়ক এবারের বন্যায় ভাঙার কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এখনও ওখানে ১৪-১৫ ফুট পানি রয়েছে। এবারের বন্যায় পুরোপুরি খাল হয়ে আছে এই সড়কের ৩০০ মিটার অংশ। ২০২০ সালের বন্যায়ও এই সড়কের ১৪০ মিটার অংশ ভেসে যায়। পরে প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে সুরমা নদীতীরের এই সড়ক অংশে ব্লক বিছিয়ে পাকা করে সড়ক নির্মাণ করা হয়। সড়কের সেই অংশ এবারও টেকেনি। এবার ওই অংশের সামান্যসহ অন্য অংশের ৩০০ মিটার ভাসিয়ে ভাটির মানুষকে প্লাবিত করেছে।
এই সড়কে চলাচলকারী অনেকেই জানান, ২০২০ সালেই উজ্জ্বলপুরের এই ভাঙন অংশে সড়ক করা ঠিক হয়নি। দুর্লভপুরের বাসিন্দা জাকির হোসেন বললেন, ব্লক বিছিয়ে ঢালাই করে সড়ক করতে যে টাকা ব্যয় হয়েছে, এই টাকা ব্যয়ে সেতু করা যেত। যেহেতু নদীর পাড়ের এই অংশে হাওর রক্ষা বাঁধ করাই হয়, তাহলে সড়ক না করে সেতু বা স্লুইসগেট কাম সেতু করা উচিত ছিল।
জামালগঞ্জের উপসহকারী প্রকৌশলী আনিছুর রহমানকে উজ্জ্বলপুরের এই ভাঙন অংশে সেতু না করে ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে কেন সড়ক করা হয়েছিল- সেই প্রশ্নে বলেন, স্থানীয় লোকজন সেতু করতে দেননি।
পানির চাপে জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কের পাঁচ অংশে এবং জামালগঞ্জ- সেলিমগঞ্জ সড়কের ছয় অংশ এবার ভেঙেছে। এই প্রকৌশলী জানালেন, এবার প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন আছে, যেখানে সড়ক ভেঙেছে, সেখানে সড়ক নয়, সেতু করতে হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানেরও কঠোর নির্দেশনা আছে- ভাঙনে আর সড়ক নয়, সেতু, কালভার্ট বা কজওয়ে হবে। এবার তাহলে কী করা হবে- এমন প্রশ্নে প্রকৌশলী আনিছুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। ওখানে সেতুই করতে হবে।
কেবল জামালগঞ্জের এই সড়ক নয়, অপরিকল্পিতভাবে সেতুর স্থলে সড়ক করায় সুনামগঞ্জের কমপক্ষে ২০টি ভাঙন অংশে এবার সেতু, কালভার্ট বা কজওয়ে নির্মাণ করতে হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বন্যার পর সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বলেন, ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সড়কের যে অংশ ভেঙেছে, কোথাও আর সড়ক নয়, সেতু বা কালভার্ট করতে হবে।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশ্মির রেজা বললেন, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ-সেলিমগঞ্জ পর্যন্ত সড়কের ১১ অংশ ভেঙেছে, বন্যার সময় সড়ক ভাঙার পর প্রবল বেগে পানি ঢুকে ভাটি অঞ্চলকে প্লাবিত করেছে। সড়ক না হয়ে সেতু বা কালভার্ট থাকলে এসব অংশ দিয়ে উজানের পানি সহজে নামত। ভাটি অঞ্চলের বাসিন্দারাও তখন প্রস্তুত থাকতেন। ভাটি অঞ্চলের প্রতিটি সড়কের ক্ষেত্রেই যেখানে যেখানে সেতু প্রয়োজন, সেখানে সেতু করতেই হবে। অন্যথায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। উজানের মানুষকে বন্যার ভোগান্তি পোহাতে হবে।
সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম বললেন, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ-সেলিমগঞ্জ সড়ক, সুনামগঞ্জ-দোয়ারা-ছাতক সড়কসহ অনেক সড়কে বন্যায় বড় বড় ভাঙন হয়েছে। এসব স্থানে সেতু, কালভার্ট বা কজওয়ে (অপেক্ষাকৃত নিচু সড়ক, বেশি পানি হলে যাতে ওপর দিয়ে যেতে পারে) নির্মাণ করতে হবে। ২০টিরও বেশি অংশে বিপজ্জনক ভাঙন হয়েছে। এসব অংশের ডিপিপি তৈরির প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
- বিষয় :
- সুনামগঞ্জ