ছাত্রলীগের ৩০ কর্মীর তাণ্ডবে ৩৫ ঘণ্টা অচল ছিল চবি
চবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২২ | ১০:২৭ | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২২ | ১০:২৭
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে তাণ্ডবের শুরুটা করেন পদবঞ্চিত মাত্র ৩০ কর্মী। পরে যুক্ত হন তাঁদের অনুসারীরা। তাতেই টানা ৩৫ ঘণ্টা অচল ক্যাম্পাস। এ সময়ে প্রশাসন অন্তত ৯টি পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। অবশেষে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের হুঁশিয়ারিতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক সংগঠন 'বিজয়' গ্রুপের নেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটির পদ পাইনি। বিষয়টি আমাদের নেতা মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে জানানোর জন্য অবরোধ কর্মসূচি করেছি। তিনি বিষয়টি অবগত হয়েছেন। তাই আমরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
এর আগে চবির অস্থিরতা নিয়ে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন নওফেল। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘পদ-পদবির বিষয়ে যে কোনো দাবি-দাওয়া কর্মীরা সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। সাংগঠনিক দাবি থাকলে তা সমাধান করা যায়। কিন্তু সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট, ভাঙচুর, অপহরণ, অপরাধ ও হত্যার হুমকি দেওয়া কোনোভাবেই ছাত্র সংগঠনের আদর্শিক কর্মীর কাজ হতে পারে না।’
‘যাঁরা এসব করছে, তাঁরা ব্যক্তিস্বার্থেই অরাজকতা করছে। তাঁদের কাছে সংগঠন বা শিক্ষার মূল্য আছে বলে মনে হয় না। নিজেদের সাংগঠনিক দাবিতে অপরাধমূলক সহিংসতা যাঁরা করছে, তাঁদের বিষয়ে সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অত্যন্ত কঠোর হওয়া প্রয়োজন।’
তাঁর এই পোস্টের আধা ঘণ্টা পরই অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলফটক থেকে মুহূর্তে সরে যান তাঁরা। তিন বছর পর গত রোববার মধ্যরাতে চবির ৩৭৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এর পরই পদবঞ্চিতরা আন্দোলনে নামে, পাঁচটি হলের অন্তত ৪০টি কক্ষে ভাঙচুর চালায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের চালকসহ তিনজনকে অপহরণ করে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বহনকারী পরিবহন চলাচলেও বাধা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারও অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন আন্দোলনকারীরা। অবরোধের দুদিনে আট বিভাগের নয়টি নির্ধারিত পরীক্ষা বাতিল করা হয়। এর মধ্যে চবির জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের দুটি পরীক্ষা বাতিল করার কথা জানান বিভাগের সভাপতি ড. নাজনীন নাহার ইসলাম।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চবি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে দুটি পক্ষ রয়েছে। একটি সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের, অন্যটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের। এই দুটি পক্ষ আবার ৯টি উপগ্রুপে বিভক্ত। এর মধ্যে শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক উপগ্রুপের মধ্যে 'সিএফসি' ও 'বিজয়' ক্যাম্পাসে নওফেলের অনুসারী বলে পরিচিত। কমিটি গঠন নিয়ে বিজয় গ্রুপের সদস্য দেলোওয়ার হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন, জামশেদ, বখতিয়ার, বেলাল, মিঠু, ইমাম, আনোয়ার, রাহাতসহ মাত্র ৩০ জনের কাছে প্রায় দু'দিন জিম্মি হয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাস। যদিও নওফেল তাঁর কোনো অনুসারী আছেন বলে কখনও স্বীকার করেন না।
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, শিগগির একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। আন্দোলনের নামে শাটল ট্রেনের লোকোমাস্টার (চালক) অপহরণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেছে। এরই ফলে আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেছে। বুধবার থেকে শাটল ট্রেন চলাচল করবে এবং ক্লাস-পরীক্ষাও স্বাভাবিক নিয়মে চলবে।
বিতর্কিত কমিটি থেকে পদত্যাগ
এদিকে, খুনের আসামি, ঠিকাদার, বিবাহিত, অছাত্ররা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন- এমন নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন সহসভাপতি মঈনুল ইসলাম। তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র না মেনে ছন্নছাড়া বিশাল কমিটি করা হয়েছে। ত্যাগী কর্মীরা বাদ পড়েছেন। প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় আমি পদত্যাগ করেছি।
- বিষয় :
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
- ছাত্রলীগ