আমন চাষের খরচ নিয়ে চিন্তায় যশোরের চাষিরা
যশোর অফিস
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২২ | ১৩:৪৩
বাবার রেখে যাওয়া তিন বিঘা জমিই ভরসা যশোর সদরের রূপদিয়ার দুই ভাই জাহাঙ্গীর আলম ও রাব্বির। এই জমিতে ফসল ফলিয়েই বড় ভাই জাহাঙ্গীর সারা বছরের খোরাকের সঙ্গে চালান সংসারের খরচ। চলে ছোট ভাই রাব্বির পড়াশোনাও। অন্য বছর এ সময়ে তাঁর আমনের জমিতে ধানের চারা সবুজের আভা ছড়ালেও এবার তা খাঁ খাঁ করছে। অনাবৃষ্টির কারণে সময় মতো চাষাবাদ শুরু করতে না পারা এ কৃষক বলেন, এবার তিন বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করতে চেয়েছিলাম। সেই পরিমাণ বীজতলাও দিয়েছি। তবে পানির অভাবে জমিতে রোপণ করতে পারিনি। এখন ইউরিয়ার দামও বাড়ল। চাষ নিয়ে দুশ্চিতায় আছি।
শুধু জাহাঙ্গীর নন, যশোরের সব চাষির অবস্থাই এমন। শ্রাবণের দুই সপ্তাহ পার হলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টির দেখা নেই এখানে। গত দেড় মাসে যশোর অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১৫০ মিলিমিটার। অথচ গত বছর একই সময়ে বৃষ্টি হয়েছিল সাড়ে ৪০০ মিলিমিটার। তীব্র খরায় আমন ধানের বীজতলা পুড়ছে। ক্ষেতও ফেটে চৌচির।
কৃষকরা জানান, বৃষ্টিনির্ভর আমনের চাষও এবার সেচনির্ভর হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির অভাবে ধানের ফলন যেমন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেচের ওপর নির্ভরতার কারণে উৎপাদন খরচও বাড়বে। এর সঙ্গে সার ও ডিজেলের দাম বাড়ায় এখন বিঘাপ্রতি তাঁদের তিন থেকে চার হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হবে।
বাঘারপাড়ার শালবরাট গ্রামের সুনীল দেবনাথ জানান, এক বিঘা জমিতে তিন হাজার টাকা সেচ খরচ হয়। সার লাগে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার মতো। জমি প্রস্তুত ও চারা রোপণে তিন হাজার টাকা। এ ছাড়া পরিচর্যা ও ফসল কাটাতে তো খরচ আছেই। সব মিলিয়ে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয় এক মৌসুমে। বৃষ্টিনির্ভর আমন চাষে এ খরচ এক-দুই হাজার টাকা কম হয়। এবার বৃষ্টির অভাবে বোরা মৌসুমের মতোই খরচ হবে আমনে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৭ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এসব জমিতে হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান ফলাবেন কৃষকরা। তবে এখন পর্যন্ত ধান লাগানো হয়েছে মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে। যশোর আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী এক সপ্তাহ প্রতিদিনই কমবেশি বৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তখন অনেকেই ধান রোপণ করতে পারবেন।
গতকাল মঙ্গলবার যশোর সদর উপজেলার পুলেরহাট-মালঞ্চি-কিসমত নওয়াপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শুকনো চাষ দিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে। খেতের মধ্যে একখণ্ড জমিতে আমনের বীজতলা। শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে পানি দিয়ে বীজতলা ও ক্ষেত ভেজানো হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, অন্য বছর এ সময় জমিতে রোপা আমনের চারা লালচে রং থেকে সবুজে রূপ নিত। তবে এখনও চাষাবাদই শুরু করতে পারেননি। তবে কিছু কিছু জায়গায় সেচ দিয়ে চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
এদিকে আমন ধান আবাদের ভরা মৌসুমে কৃষি মন্ত্রণালয় ইউরিয়া সারের দাম কৃষক পর্যায়ে কেজিতে ৬ টাকা বাড়িয়েছে। এখন প্রতি কেজি ইউরিয়া কিনতে হচ্ছে ২২ টাকায়। সদরের মুনশেফপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, আগে পাঁচ থেকে ছয় বিঘায় ধান করতাম। বর্তমানে তিন থেকে চার বিঘায় চাষ করতেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। ওষুধ, সার, শ্রমিক- সব কিছুর দাম বেশি। এদিকে ধানের দাম তো বাড়েনি। দুই বছর আগের এক হাজার টাকা ধানের মণ এখনও তাই আছে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, আমন ধান রোপণের মৌসুম সবে শুরু হলো। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত এক মাস ধান রোপণের ভরা মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। আমরা আশা করছি, এই সময়ে ভালো বৃষ্টিপাত হবে।
যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাত হোসেন জানান, সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। দাম বাড়লেও উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।