৮ মাসেও মেলেনি ক্ষতিপূরণ
আজিজুল হক সরকার, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২২ | ০১:৫৩
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী-মদিরা সড়কের পাশে পাকড়ডাঙ্গা গ্রামের প্রভাষক দুলাল হোসেনের জমিতে গড়ে উঠেছিল পুরোনো ব্যাটারি প্রক্রিয়াজাতকরণের একটি কারখানা। সেই কারখানা থেকে ছড়িয়ে পড়া বর্জ্যের বিষক্রিয়ায় গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে আশপাশের চার গ্রামের ৪০টি গরু মারা যায়। ক্ষতিগ্রস্তদের আন্দোলনের মুখে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। যে কারণে মামলাও করেননি ভুক্তভোগীরা। তবে আট মাস পেরিয়ে গেলেও সেই ক্ষতিপূরণের দেখা মেলেনি।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, দুর্ঘটনার পর ওই এলাকায় বিষাক্ত সিসার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতির প্রমাণ মেলে। পরীক্ষায় ঘাসে ও খড়ে পাওয়া যায় ৩০ হাজার পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) এবং মাটিতে মেলে ৫ হাজার পিপিএম সিসা। গরুর শরীরে মাত্র ১০ পিপিএম সিসা প্রতিরোধের ক্ষমতা থাকে।
উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের বাদশা হোসেনের চারটি গরু বিষক্রিয়ায় তখন মারা যায়। তিনি বলেন, 'ব্যাটারি বর্জ্যের বিষ ছড়িয়ে পড়ে মিশে যায় খড়-ঘাসে। এসব খেয়ে আমার গরুগুলো মারা যায়। আরও দুটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে বিক্রি করে দিই।'
নন্দলালপুর গ্রামের সুলতান হোসেনের তিনটি গরুরও একই পরিণতি হয়। আরও চারটি গরু অসুস্থ অবস্থায় বিক্রি করে দেন। এ দু'জনের মতো ক্ষতির শিকার হন চারটি গ্রামের ২০ জন।
সুলতান বলেন, নামমাত্র দামে গরু বিক্রি করতে হওয়ায় তাঁর গোয়াল খালি হয়ে পড়ে। ক্ষতিপূরণের জন্য তাঁরা মানববন্ধন করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর আবেদনও করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেয় প্রশাসন। তবে আট মাস পেরিয়ে গেলেও সেই ক্ষতিপূরণ পাননি কেউই।
মৃত গরুর মালিকদের তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে তাঁরা হলেন- বাসুদেবপুরের বাদশা হোসেন (৪টি গরু), ফয়জুর (৩টি), বেলায়েত (২টি), সোহেল (১টি), জহুরুল (১টি), আনোয়ার (১টি), মহেশপুর ও নন্দলালপুর গ্রামের সুলতান হোসেন (৩টি), আজমির (১টি), মাহাবুবুর (১টি), মজিবর (১টি), মিলন (১টি), ছামসুল (২টি ছাগল), মোশাররফ (১টি), আরিফুলের (১টি), আজহার (১টি), আমিনুল (১টি), সেফাজুল (২টি), মোস্তফা (১টি), ফরিজুল (১টি) এবং পৌরসভার পূর্ব গৌরীপাড়ার শরিফুল ইসলাম আপেল (২টি) ও আব্বাস আলী (২টি)।
অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিক্রি করে দেওয়া গরুর মালিকদের নামও প্রশাসন তালিকাভুক্ত করে। তাঁরা হলেন- বাদশা হোসেন (২টি), ফয়জুর (২টি), জহুরুল (১টি), আনোয়ার (২টি), সুলতান (৪টি), আজমির (২টি), জাহাঙ্গীর (১টি), মিলন (১টি), আনোয়ারা (১টি), মুক্তার (১টি) ও আফতাব (১টি)।
এ ছাড়া বিষাক্ত খড় ব্যবহার না করে পুড়িয়ে ফেলার শর্তে ক্ষতিপূরণ পাবেন- এমন তালিকায় ছিলেন বাসুদেবপুর গ্রামের বাদশা হোসেন (১ দশমিক ৫০ শতক), ফয়জুর (১ দশমিক ০৫ শতক), বেলায়েত (১ দশমিক ৭৫ শতক), জহুরুল (১ দশমিক ৫০ শতক), আমজাদ (২ একর), আজাদ (২ দশমিক ৭০ শতক), আনোয়ার (২ দশমিক ৫০ শতক), জুতিশ মুর্মু (শূন্য দশমিক ৭৫ শতক), আগনেশ মুর্মু (শূন্য দশমিক ৫০ শতক), সুপল (১ একর), মফিল (শূন্য দশমিক ২৫ শতক), তোফাজ্জল (২ দশমিক ৯৩ শতক); মহেশপুর ও নন্দলালপুর গ্রামের সুলতান হোসেন (৩ একর), আনোয়ারা (শূন্য দশমিক ৫০ শতক), মোশাররফ (শূন্য দশমিক ৪০ শতক), মুক্তার (শূন্য দশমিক ৪০ শতক), আজহার (শূন্য দশমিক ৬০ শতক), আফতাব (১ একর) ও ছামসুলের (১ দশমিক ৫০ শতক) নাম।
দুর্ঘটনার পরপরই কারখানা বন্ধ করে পালিয়ে যান মালিক মো. আক্তারুল ইসলাম। দীর্ঘদিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। গতকাল সোমবার তাঁর মোবাইল ফোনে কল দিলে বলেন, ওই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি রংপুরের বাড়িতে বসবাস করছেন। তবে ওই দুর্ঘটনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
এ বিষয়ে ইউএনও মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, 'ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখনও কোনো উত্তর পাইনি। আবারও খোঁজখবর নিচ্ছি। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে সদিচ্ছার কমতি নেই।'
উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, সর্বস্বান্ত কৃষকরা যেন দ্রুত ক্ষতিপূরণ পান, সে বিষয়ে তিনি ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন।