ঢাকা রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

সেই শ্যামলকে হাতিয়ায় বদলি

সেই শ্যামলকে হাতিয়ায় বদলি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২২ | ০৭:১০ | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২২ | ০৭:১০

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তিতে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে ‘আগুল ফুলে কলাগাছ’ হওয়া মাউশির ময়মনসিংহ আঞ্চলিক উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের আলোচিত কর্মচারী রইছ উদ্দিন শ্যামলের বিরুদ্ধে অবশেষে তদন্ত শুরু হয়েছে। সরকারি কলেজের একজন অধ্যাপককে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একইসঙ্গে গত মঙ্গলবার ময়মনসিংহ থেকে শ্যামলকে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপে বদলি করা হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদের সই করা এই বদলি আদেশে বলা হয়, মাউশির ময়মনসিংহ আঞ্চলিক উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটর অপারেটর (স্ববেতনে থাকা) রইছ উদ্দিন শ্যামলকে নোয়াখালীর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে হিসাবরক্ষক পদে বদলি করা হলো। আগামী ২৯ আগস্টের মধ্যে তিনি নিজ কার্যালয় থেকে বিমুক্ত হবেন। অন্যথায় একই তারিখ অপরাহ্নে তিনি তাৎক্ষণিক বিমুক্ত মর্মে গণ্য হবেন।

শ্যামলের ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে গত ৩ জুলাই সমকালের প্রথম পাতায় সচিত্র ‘অপারেটর শ্যামল এলাকায় ধনকুবের’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে ময়মনসিংহে নিজ এলাকায় এই তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীর নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ থাকার তথ্য প্রকাশিত হয়।

সমকালের প্রতিবেদনের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। মাউশি জানিয়েছে, বদলি করা হলেও শ্যামলের বিরুদ্ধে তাদের তদন্ত কাজ চলবে।

শিক্ষকদের অভিযোগ, ময়মনসিংহ উপপরিচালকের হয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির জন্য ঘুষের টাকা ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে এই শ্যামলই অর্থ আদায় করে থাকেন। ময়মনসিংহের গোয়াইলকান্দি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শ্যামল তাঁর বাবার বাড়ির কাছেই করেছেন নিজের পাঁচতলা বাড়ি। চার শতক জমিতে করা এই বাড়ির নাম দেওয়া হয়েছে ‘হাসিনা মঞ্জিল’।

স্থানীয়রা জানান, বাড়িটি শ্যামলের স্ত্রী হাসিনা আক্তারের নামে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুদৃশ্য এ বাড়িতেই সপরিবারে শ্যামলের বসবাস। শ্যালকদের কাছ থেকে নেওয়া এ জমিটির মূল্য ২০ লাখ টাকা- এমনটি জানা যায় স্থানীয়দের কাছ থেকে।

ময়মনসিংহ নগরীর বাদেকল্পা এলাকায় চারটি স্থানে মূল্যবান জমি রয়েছে শ্যামলের। এই জমিগুলোর মালিক হিসেবে শ্যামলকেই জানেন স্থানীয়রা। এর মধ্যে ১৩ শতক জমিতে রয়েছে একটি একতলা বাড়ি। এ বাড়িতে থাকেন শ্যামলের আপন খালা। দৃষ্টিনন্দন তোরণ করা এ বাড়িটি বছরখানেক আগে নির্মাণকাজ শেষ হয়। এ বাড়িতেই শ্যামল তাঁর নিজের বিলাসবহুল প্রিমিও গাড়িটি রাখেন।

এ বাসাটির পাশেই সাড়ে ৬ শতক জমিতে ৬ তলাবিশিষ্ট আরেকটি ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। তৃতীয় তলার ছাদ ঢালাই শেষ হয়েছে। এটিও শ্যামলের। এর আরেক পাশেই রয়েছে প্রাচীরঘেরা আরেকটি প্লট। এ ছাড়াও বাদেকল্পা রুস্তমের মোড় এলাকায় শ্যামলের রয়েছে প্রাচীরঘেরা আরও সাড়ে ৬ শতক জমি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এসব জমির সবই গত কয়েক বছরের মধ্যে কেনা হয়েছে। ৫ লাখ টাকা শতক হিসেবে জমিগুলো সে সময়ে বিক্রি হতো। সে হিসাবে ২৬ শতক জমির দাম অন্তত ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। নির্মিত বাড়ি ও নির্মাণাধীন বাড়ির বাজারমূল্য হবে আরও অন্তত ৪ কোটি টাকা। ৩৩ লাখ টাকা দামের প্রিমিও ব্র্যান্ডের নতুন মডেলের ঢাকা মেট্রো-গ-৪২-৯৮৬৩ গাড়িতে চড়েন শ্যামল। স্ত্রী হাসিনার নামে সেটি কেনা।

আরও পড়ুন

×