ঢাকা সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

বৃক্ষপ্রেমিক

সবুজায়নে মজেছেন প্রকৌশলী টুটুল

সবুজায়নে মজেছেন প্রকৌশলী টুটুল

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে গাছের চারা তুলে দেন আলিমুজ্জামান টুটুল - সমকাল

সাজ্জাদ রানা, কুষ্টিয়া

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২২ | ০৩:০২

তাঁর নেশা গাছ লাগানো ও গাছের চারা বিতরণ। সুযোগ পেলেই ছুটে যান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন নানা জাতের চারা। বিদ্যালয় ছাড়াও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি গাছের চারা তুলে দেন শিক্ষার্থীদের হাতে।

এ কাজটি যিনি করছেন তাঁর নাম আলিমুজ্জামান টুটুল। পেশায় প্রকৌশলী টুটুল দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে কাজটি করে যাচ্ছেন। এই সময়ে বিভিন্ন জাতের ১১ লাখ গাছের চারা বিতরণ ও রোপণ করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে পুরস্কারও পেয়েছেন।
টুটুল কুষ্টিয়া সদরের হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে ১৯৭০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি ঝিনাইদহ পৌরসভায় সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। তিনি পাবনা ও কুষ্টিয়া পৌরসভা এবং মেহেরপুর পৌরসভায় নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৬ সালে তিনি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান দেন। তিনি ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ছাত্রজীবন থেকেই সবুজায়নের প্রতি ঝোঁক ছিল। তখন সাধ থাকলেও সামর্থ্য ছিল না। এক সময় চাকরি শুরু করেন তিনি। পরে স্বল্প পরিসরে গাছ লাগানো ও চারা বিতরণের উদ্যোগ নেন। তা জেলায় ছড়িয়ে দেন। তাঁর দেখাদেখি এলাকার অনেকেই এখন এ কাজটি করছেন।

টুটুলের ঘনিষ্ঠরা জানান, তাঁর স্বপ্ন ছিল জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে কুষ্টিয়াসহ দেশের সবুজায়নে ভূমিকা রাখবেন। এ জন্য তিনি চাকরির পাশাপাশি বাড়ির ডিজাইন করে অর্থ উপার্জন করেন। সেই অর্থ সবুজায়নে ব্যয় করেন। তিনি ২০০০ সালে গ্রিন আর্কিটেক প্রতিষ্ঠা করে দেশব্যাপী পরিবেশবান্ধব বাড়ি নির্মাণে ও সুন্দর শহর গঠনে কাজ করে চলেছেন।

হরিপুর ইউনিয়নের ধর্মীয়, সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাছ রোপণ করেছেন টুটুল। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলার প্রতিষ্ঠানসহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের অর্থায়নে কয়েক হাজার ফলদ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করেছেন। এসব গাছ এখন ফল দিচ্ছে। বিনামূল্যে প্রায় ৬০০ মসজিদের ডিজাইনও করেছেন তিনি। নিয়মিত কুইজ প্রতিযোগিতাসহ বই বিতরণ করছেন শিক্ষার্থীদের মাঝে। গরিব শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতাও করেন তিনি।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার ও নাগরিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. সেলিম তোহা বলেন, প্রকৌশলী টুটুলের নেশা গাছের প্রতি বেশি। পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন নিয়মিত।

কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান ডাবলু বলেন, কয়েক যুগ ধরে টুটুল গাছের চারা বিতরণ করে আসছেন। তাঁর এমন উদ্যোগে বদলে যাচ্ছে পরিবেশ।

টুটুল বলেন, দেশে গাছের সংখ্যা অনেক কম। তাই আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় যদি একটি গাছও বেড়ে ওঠে, তা দেশের জন্য কাজে লাগবে। সামনের দিনে অসহায় মা-বাবার জন্য বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছে রয়েছে।

আরও পড়ুন

×