রংপুর সিটি নির্বাচন
ভোটের প্রচারে তোয়াক্কা নেই আচরণবিধির
এখনও প্রতীক বরাদ্দ না হলেও প্রার্থীদের পক্ষে চলছে শোডাউন। রংপুর নগরীর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চব্বিশ হাজারী এলাকা থেকে শুক্রবার তোলা-সমকাল
স্বপন চৌধুরী, রংপুর
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৫:১৮
রংপুর সিটি করপোরশন (রসিক) নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীদের প্রচারে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। প্রতীক বরাদ্দের আগে মিছিল-মিটিং কিংবা শোডাউনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিষেধাজ্ঞা মানছেন না কেউ। বিশেষ করে নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে সন্ধ্যার পর থেকে চলছে জমজমাট নির্বাচনী প্রচার। গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থীদের সভা-সমাবেশ ও শোডাউনে মুখর নানা এলাকা। ঢাকঢোল পিটিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে ভোটারদের। ওয়ার্ডগুলোতে কমপক্ষে ৪৯৫টি ক্যাম্পে এই তোড়জোড় চলছে। যদিও ইসি জানিয়েছে, এ ব্যাপারে কোনো পক্ষ এখনও অভিযোগ করেনি। তার পরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তপশিল অনুযায়ী, আগামী ২৭ ডিসেম্বর রসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৮ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে ৯ ডিসেম্বর। ইসির বিধি অনুযায়ী প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার আগে কেউ নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন না। ওই দিন থেকে নির্বাচন শুরু হওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত প্রচারের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এই নির্দেশনা কেউ মানছেন না।
সরেজমিন দেখা গেছে, পাড়ায়-পাড়ায় গড়ে উঠেছে নির্বাচনী ক্যাম্প। স্পোর্টিং ক্লাব, যুব সংঘ কিংবা উপনির্বাচনী ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত করছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। চালা তৈরি করে প্রার্থীর ছবিসহ পোস্টার-ব্যানার লাগানোসহ নানা প্রচারে ক্যাম্প জমজমাট থাকছে রাতভর। বিশেষ করে ক্যাম্পগুলোতে বিশ্বকাপের উন্মাদনায় ভোটের প্রচার উৎসবে রূপ নিয়েছে।
নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা। প্রচারাভিযান ও কার্যালয় স্থাপনের ক্ষেত্রে নিয়ম মানছেন না প্রার্থীরা। সচেতন মহল বলছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় এখনই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।
গত ৭ নভেম্বর তপশিল ঘোষণার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আবদুল বাতেন রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখানে প্রার্থীদের মিছিল-মিটিং ও শোডাউনে নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে ঘোষণা দেন। প্রার্থীদের পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন ইত্যাদি অপসারণের নির্দেশও দেওয়া হয়।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ নির্বাচন কমিশন থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোথাও অনিয়ম হলে ভোটকেন্দ্র বন্ধসহ পুরো নির্বাচন বন্ধের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারে ইসি। সিটি নির্বাচন আইনবিধি অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচার চালানোর কোনো সুযোগ নেই। দেয়াল লিখন, পোস্টার, বিলবোর্ড, ব্যানার, তোরণ ও গেট তৈরি পুরোপুরি নিষিদ্ধ। ভিডিও প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রচার, সড়কে যানজট সৃষ্টি করে প্রচার কিংবা খাবার বিতরণ আচরণবিধির লঙ্ঘন।
২০৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রংপুর সিটিতে পুরোনো পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন ১৮টি ওয়ার্ড। প্রতিটি ওয়ার্ডেই নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয়েছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি মৌজা- বাহাদুর সিংহ, কোবারু ও চব্বিশ হাজারী এলাকায় ১৫টিসহ সিটির ৩৩টি ওয়ার্ডে প্রচারণা ক্যাম্প রয়েছে ৪৯৫টি।
নগরের ২, ৫, ১৮ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, একাধিক প্রার্থীর ক্যাম্প থাকায় প্রতি মুহূর্তে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের বক্তব্য, ক্যাম্প বলতে সমর্থকদের বসার স্থান বানানো হয়েছে, নির্বাচনী কার্যালয় নয়।
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের উপপরিচালক নাছির চৌধুরী বলেন, প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ নেই। তবে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। তার পরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, গত বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে মেয়র পদে ১০ প্রার্থীসহ কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর পদে ২৪১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ১১ নারী কাউন্সিলর পদে ৬২টি ও ৩৩টি কাউন্সিলর পদে ১৬৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে।