রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় লোকসানে পানচাষি

সোহাগ খান সুজন, শরীয়তপুর
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২২ | ২৩:২২
করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে এক বিড়া (৮০টি) পানের দাম ছিল প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এখন সেই পান বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এতে বিপদে রয়েছেন পানচাষিরা।
শরীয়তপুর জেলায় অনুকূল আবহাওয়ায় এ বছর প্রচুর পান চাষ হয়েছে। কিন্তু ভাইরাসের সংক্রমণ ও করোনকালে বিদেশে রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয়ভাবেও ন্যায্য দাম মিলছে না। লোকসানে পড়ে অনেকে আবাদ বন্ধ করে ভিন্ন ফসল ও পেশায় ঝুঁকছেন।
পানচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকার মাটি ও আবহাওয়া পান চাষের উপযোগী। এ কারণে কয়েক যুগ ধরে পানের আবাদ করা হয়। চারা রোপণের এক বছরের মাথায় পান তোলা শুরু হয়। পরিচর্যা করতে পারলে সাত-আট বছর ফলন মেলে। কিন্তু লোকসানের কারণে গোঁসাইরহাট উপজেলার জুসিরগাঁও গ্রামের জসিম সরদার, আজিজুল হক ঘরামী, আমির হোসেন সরদার, রফিক সরদার, আলাউদ্দিন সরদার, সদর উপজেলার আবু কালাম ফকির, রহিম ব্যাপারীসহ অন্তত দুইশ চাষি পানের বরজ ভেঙে দিয়েছেন।
কৃষি বিভাগ ও চাষিদের সূত্রে জানা গেছে, গোঁসাইরহাট উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৫০০ চাষি বাপ-দাদার আদিম পেশা ধরে রাখলেও ক্রমাগত লোকসান গুনছেন। তাঁদের অনেকেই বরজ ভেঙে ফেলে অন্য চাষের মনোযোগী হতে পারেন বলে জানান।
এ বছর শরীয়তপুরে ৪৮৯ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে গোঁসাইরহাটে ৩৫৬, সদরে ৩৬, নড়িয়ায় ৪১, ভেদরগঞ্জে ৪৫ ও ডামুড্যায় ১১ হেক্টর রয়েছে। জেলায় মিষ্টি, সাঁচি, চালতা গোটা, বাংলা ও গাছ পান চাষ হচ্ছে।
জেলার উৎপাদিত পান দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপীয় কয়েকটি দেশে রপ্তানি করা হতো। মিষ্টি পানের চাহিদা ছিল বেশি। কিন্তু করোনা সংক্রমণের পর থেকে রপ্তানি বন্ধ। সংশ্নিষ্টরা জানান, পানে সাইটোনেলা নামে একটি ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান মেলে। এতে ইউরোপে পান রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সময়সীমা শেষ হলেও ইউরোপ এখনও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি। ফলে চাষিরা এখন দেশের বাজারের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এতে উৎপাদন
খরচও উঠছে না।
গোঁসাইরহাটের চাষি জসিম সরদার বলেন, উপজেলায় ভালো ফলন হওয়ায় অন্তত ৯০ শতাংশ কৃষক পান চাষ করেন। প্রতি ৮০টি পানপাতা উৎপাদনে খরচ হয় ৫০ টাকার মতো। তাঁরা বাজারে বিক্রি করেন ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। পানে লোকসান গুনলেও সরকার চাষিদের জন্য কিছুই করছে না।
আজিজুল হক ঘরামী জানান, করোনার আগে ১৮টি দেশে পান রপ্তানি হতো, এখন বন্ধ রয়েছে। উল্টো ভারতের পান আমদানি হচ্ছে। এ কারণে চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। আগে পানের বরজে লাভ হতো। এখন অন্য স্থান থেকে টাকা এনে পানের বরজে খরচ করেন তাঁরা। কমল চন্দ্র নন্দী বলেন, বরজের জন্য প্রয়োজনীয় সার, বাঁশ, পাটখড়ি ও শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। সে তুলনায় দাম আরও কমেছে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মতলুবর রহমান বলেন, দেশীয় পানের বিদেশের বাজারে অনেক চাহিদা ছিল। কিন্তু ইউরোপের বাজার বন্ধ ও করোনায় কয়েকটি দেশে রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। বিদেশে পান রপ্তানি করেন, এমন চার ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়েছে। নতুন করে পান রপ্তানির বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
- বিষয় :
- পানচাষি
- পান রপ্তানি
- শরীয়তপুর