ঢাকা রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

বাঘায় একরাতে ৪০০ আমগাছ কেটেছে দুর্বৃত্তরা

বাঘায় একরাতে ৪০০ আমগাছ কেটেছে দুর্বৃত্তরা

গভীর রাতে উপজেলা মনিগ্রাম ইউনিয়নের হাবাসপুর এলাকায় ৪০০ আমগাছ কেটেছে দুর্বৃত্তরা।

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১০:২৫ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১০:২৮

রাজশাহীর বাঘায় একরাতে ৪০০ আমগাছ কেটেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার গভীর রাতে উপজেলা মনিগ্রাম ইউনিয়নের হাবাসপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চাষি আবু সামা ও সাধন কুমার প্রামাণিক বাদী হয়ে আজ সোমবার সকালে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে এজাহারে তারা কারও নাম উল্লেখ করেননি। 

চাষি আবু সামা (৪৫) জানান, তার ১৮ বছর বয়সী ২৮টি গাছ করাত দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে। উপজেলার হাবাসপুর গ্রামে এক রাতে তাঁরমতোই ১৫ জন চাষির প্রায় ৪০০ আমগাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। চাষিদের বাড়ির সামনে কাটা গাছ এনে ফেলা হচ্ছে। তা দেখে আহাজারি করছেন তারা। এ গ্রামে যেন শোকের গ্রামে পরিণত হয়েছে।  

উপজেলার হাবাসপুর আমবাগান সমৃদ্ধ এলাকা। গ্রামের শতভাগ জমিতে আমগাছ রয়েছে। এমনকি বাড়ির আঙিনায়ও রয়েছে আমগাছ। যে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেগুলো অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় লাগানো হয়েছে। আগে এই জমিতে শুধু ধান চাষ করা হতো। সম্প্রতি সেখানেও আমগাছ লাগানো হয়েছে।   

গভীর রাতে উপজেলা মনিগ্রাম ইউনিয়নের হাবাসপুর এলাকায় ৪০০ আমগাছ কেটেছে দুর্বৃত্তরা।

সোমবার দুপুরে হাবাসপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা দিয়ে ভ্যানে করে বাগানের মালিকেরা কাটা গাছের ডালপালা বাড়িতে নিয়ে আসছেন। বাড়ির সামনে গাছের ডাল ফেলার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের লোকজন বের হয়ে আহাজারি শুরু করছেন। 

প্রবীর সরকারের প্রায় ১৮ বছর বয়সী ১৮টা আমগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। সেই গাছের ডালপালা বাড়ির সামনে এনে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী রীতা সরকার বুক চাপড়াতে শুরু করেন। প্রবীর সরকার বলেন, ‘মাঠে যায়ি দেকি মাঠ সাফ কইরি দিচে।’ 

মাঠ থেকে ভ্যানে গাছের ডালপালা তুলে দিয়ে পেছনে পেছনে বাইসাইকেল নিয়ে হেঁটে আসছিলেন নিপেন্দ্রনাথ প্রামাণিক (৬৭)। তিনি মুঠোফোনে তার স্ত্রীকে গাছগুলো নামিয়ে নিতে বলছেন আর চোখ মুছছেন। তিনি জানান, তার তিন ভাইয়ের ১৮টি গাছ কেটে কেটেছে। তাদের কারও সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই। প্রায় ১৭ বছর বয়সী গাছগুলোর কোনোটিতে চার মণ, কোনোটিতে পাঁচ মণ আম ধরে। 

সাধন কুমার প্রামাণিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বৃদ্ধ বাবা সন্তোষ কুমার প্রামাণিক গাছের ডালপালা নিয়ে বাড়ির সামনে বসে রয়েছেন। তিনি প্রায় কথা বলতে পারছেন না। তার নিজের ১৫টি আর ছোট ভাই রিপনের ১৫টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গাছগুলোর বয়স ১৭ বছর হয়েছে। প্রতিটি গাছে প্রায় পাঁচ মণ করে আম ধরে। 

সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে আবু সামা মাঠে নিয়ে গেলেন। মাঠে নামার রাস্তার মুখেই দেখা গেল চাষি হাফিজুল তার কাটা গাছ টেনে তুলছেন। মাঠের মধ্যে গিয়ে এক মর্মান্তি দৃশ্য দেখা গেল। কোনো গাছের ডালপালা নেই। কোনো গাছের  গোড়া কেটে দেওয়া হয়েছে। গাছটি শুয়ে পড়েছে। প্রায় ৩২ বিঘার মাঠ জুড়ে একই দৃশ্য। কোনোটার ডালপালা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুধু কাটা গোড়া দেখা যাচ্ছে। আর কোনোটা এখনো মাঠে পড়ে রয়েছে।  

গভীর রাতে উপজেলা মনিগ্রাম ইউনিয়নের হাবাসপুর এলাকায় ৪০০ আমগাছ কেটেছে দুর্বৃত্তরা।

আবু সামা একটি গাছের গোড়া ধরে বসে বিলাপ করতে লাগলেন, ‘একেকটা গাছ আমার সন্তানের মতোন। একটা ছেলে যেভাবে মানুষ করতে হয় একটা আমগাছই সেইরকম যত্ন করলেই বাঁচে।’ 

 তিনি বললেন, ‘কয়েক বছর আগে এই মাঠেই এক রাতে তার ২০টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছিল। তার বিচার আজও পাননি। সেই আসামিও ধরতে পারেননি। এবার আবার সেই ঘটনা ঘটল। কেউ বলতে পারছে না কে এই কাজ করেছে।’

আবু সামার বাগানের পাশে প্রতিবন্ধী চাষি সোলায়মান হোসেনের স্ত্রী রূপজামান বেগম জানান, তার স্বামীর আটটি গাছ কেটে ফেলেছে। তিনি ‘হায় হায়’ করে মাঠের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় ছোটাছুটি করছেন। 

কাটা গাছ দেখে একজন ব্যাপারি এসেছেন গাছ কিনতে। আবু সামা বললেন, ‘আজ আমি কিছুতেই গাছে হাত দিতে পারব না। থাক আমার গাছ পড়ে থাক।’

স্থানীয় মনিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘লোকমুখে শুনে আমি বাগানে গিয়েছিলাম। ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে।  সেই চেষ্টা করা হবে।’

বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন

×