ঢাকা শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

ভোজ উৎসবেও কর বসাচ্ছে চসিক

ভোজ উৎসবেও কর বসাচ্ছে চসিক

আব্দুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৩:৪২

কোনো উপলক্ষ পেলেই চট্টগ্রামবাসী আয়োজন করে মেজবান। জন্ম, মৃত্যু, বিয়েসহ নানা উপলক্ষে লেগে থাকে মেজবান নামের ভোজ উৎসব। এমন আয়োজনে চট্টগ্রামবাসীর জুড়ি মেলা ভার। এবার সেই ভোজ আয়োজনে নজর পড়েছে সিটি করপোরেশনের (চসিক)। নগরে এমন আয়োজনে কর বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু ভোজ নয়, নতুন করে ১৬ খাতে কর আদায়ের তালিকা করা হয়েছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা নগরবাসী বলছে, চলতি অর্থবছর থেকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে গৃহকর আদায় করছে চসিক। এ অবস্থায় নতুন নতুন খাতে কর আদায় করাটা হবে 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা'। তবে বেতন-ভাতা দিতে হিমশিম খাওয়া সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দাবি, এ ছাড়া তাঁদের আর কোনো উপায় নেই। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরবাসীর ওপর করের বোঝা না চাপিয়ে সিটি করপোরেশনের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে লাভবান হওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ আদায় করে আয় বাড়ানো যেতে পারে।
সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন আদর্শ কর তপশিল ২০১৬ অনুযায়ী কর আদায় করে। এর মধ্যে ভবনের ভাড়ার ভিত্তিতে ১৪ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত গৃহকর আদায় করা হয়। এ ছাড়া আরও ৯টি খাতে কর আদায় করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- ট্রেড লাইসেন্স ফি, ভূমি হস্তান্তর ফি, বিজ্ঞাপন কর, শপ সাইন, চলচ্চিত্র ও বিনোদন কর, যান্ত্রিক যানবাহন ফি, অযান্ত্রিক যানবাহন ফি, রিকশা লাইসেন্স ফি, এস্টেট ও বিবিধ।

সিটি করপোরেশনের ১৮তম সাধারণ সভায় কর তপশিল অনুযায়ী, রাজস্ব আদায়যোগ্য ২৬টি খাতে কর আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, একটি তালিকা তৈরি করে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে- জন্ম, বিয়ে, দত্তক গ্রহণ ও জেয়াফত বা ভোজের ওপর কর, ইমারত নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণের জন্য আবেদনের ওপর কর, নগরীতে ভোগ, ব্যবহার বা বিক্রয়ের জন্য পণ্য আমদানির ওপর কর, নগর থেকে পণ্য রপ্তানির ওপর কর, নগরে চলাচলরত যানবাহন থেকে টোল, পশুর ওপর কর, জনসেবামূলক কার্য সম্পাদনের কর, পানি কল ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য কর, স্কুল ফি, বাজারের ওপর ফি, করপোরেশন থেকে লাইসেন্স, অনুমোদন ও অনুমতির ওপর ফি, করপোরেশনের কোনো বিশেষ কাজের জন্য ফি, আদর্শ কর তপশিলের আওতায় অনুমোদিত অন্য কোনো ফি ও সরকারের আইন বলে আরোপনীয় অন্য কোনো কর।
এসব খাতের মধ্যে জন্ম, বিয়ে, দত্তক গ্রহণ ও জেয়াফত বা ভোজের ওপর কর আদায়ের হার নির্ধারণ করতে সিটি করপোরেশনের অর্থবিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ইমারত নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণের জন্য আবেদনের ওপর কর আদায় বিষয়ে যাচাই-বাছাই করছে সিটি করপোরেশনের আইন বিভাগ। বাজারের ওপর ফি, নগরীতে ভোগ, ব্যবহার বা বিক্রয়ের জন্য পণ্য আমদানি ও নগর থেকে পণ্য রপ্তানির ওপর কর আদায়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

চসিকের অর্থ ও সংস্থাপনবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ইসমাইল সমকালকে বলেন, সাধারণ সভায় যেসব খাতে কর আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেসব খাতে করহার নির্ধারণে আগামী বৃহস্পতিবার কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। সভায় করহার নির্ধারণ করা হবে। এমনভাবে কর নির্ধারণ করা হবে, যাতে মানুষের ওপর বোঝা না হয়।

তবে চসিকের সাবেক প্রশাসক ও নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা খোরশেদ আলম সুজন বলেন, 'বিয়ে বা জেয়াফতের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানে কর আদায় করা ঠিক হবে না। বন্দর, কাস্টমস, ইপিজেড, বিএসসি, কনটেইনার ইয়ার্ড, রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসহ যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশনের অবকাঠামো সুবিধা ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছে, তাদের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ আদায় করতে পারে সিটি করপোরেশন। মানুষের ওপর করের বোঝা না চাপিয়ে এসব খাত থেকে অর্থ আদায় করে করপোরেশন স্বাবলম্বী হতে পারে।'

চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের মুখপাত্র হাসান মারুফ রুমী সমকালকে বলেন,করোনা দুর্যোগ কাটিয়ে মানুষ যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখন উপনিবেশিক কায়দায় একের পর এক মানুষের ওপর করের বোঝা চাপাচ্ছে সিটি করপোরেশন। নগরের অবস্থা বেহাল। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মানুষ মরছে। সেবার মান বাড়ানোর দিকে তাদের কোনো খেয়াল নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাড়ি ভাড়া, পানি, গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে মানুষের নাজেহাল অবস্থা। এ অবস্থায় নতুন করের বোঝা চাপানো হলে মানুষের দুর্দশা বাড়বে।


আরও পড়ুন

×