ঢাকা মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পোলট্রি খামারে লোকসানের ধাক্কা

পোলট্রি খামারে লোকসানের ধাক্কা

এম. আতিকুল ইসলাম বুলবুল, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ | ০০:১৯

তাড়াশ পৌর এলাকার পোলট্রি খামারি হাফিজুর রহমানের খামারের আয়েই প্রায় এক যুগ ধরে চলছে তাঁর পরিবার। তবে সম্প্রতি খামারের আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।

হাফিজুরের মতো একই অবস্থা মাঝারি ও ছোট পর্যায়ের পোলট্রি খামারিদের। প্যাকেটজাত পোলট্রি খাবার, ওষুধসহ আনুষঙ্গিক জিনিসের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের পোলট্রি খাতে চলছে দুরবস্থা। যেখানে খামারে প্রতি কেজি পোলট্রি মুরগির মাংস উৎপাদন করতে খরচ হচ্ছে ৭০ টাকার মতো। পাইকারি বাজারে সেই মাংস কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা দরে। লোকসানের মুখে চলনবিল এলাকার অনেক খামারিই তাঁদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন।

জানা গেছে, চলনবিলের ৯ উপজেলায় উদ্যোমী যুব নারী, যুব পুরুষসহ অন্যদের প্রায় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০টির মতো ব্রয়লার, সোনালি, লেয়ার ও লেয়ার-১ মুরগির খামার রয়েছে। গত ২ মাসে বিশেষ করে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির খামারিরা প্রতি কেজি মুরগির মাংস উৎপাদন করতে সব মিলিয়ে ব্যয় করেছেন কেজিতে প্রায় ৭০ টাকা। তবে পাইকারি বাজারে মুগরির মাংসের দাম পড়ে যাওয়ায় খামারে মুরগি তোলা বন্ধ রেখেছেন অনেকেই। পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার অপেক্ষায় আছেন তাঁরা।

সলঙ্গা এলাকার খামারি শাহিনুর রহমান ও রফিকুল ইসলাম জানান, খামার বন্ধ হচ্ছে বিধায় এক দিন বয়সী সব ধরনের মুগরির বাচ্চার দামই বর্তমানে ব্যাপক হারে কমে গেছে।

উপজেলার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আফতাব, নারিশ, কাজী, প্যারাগনসহ বিভিন্ন পোলট্রি বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিটি মুগরির বাচ্চা বিক্রি করেছেন মাত্র ১২ টাকায়, যা ছয় মাস আগেও ছিল ৫২ টাকার মতো। মূলত মুরগির বাচ্চার বাজার পড়ে যাওয়া খামারিদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে বলে জানিয়েছেন চলনবিলের বিয়াশ এলাকার খামারি রমিজুল ইসলাম।

এ দিকে তাড়াশ উপজেলার চৌপাকিয়া গ্রামের খামারি শায়লা পারভীন জানান, পোলট্রি খামারে ব্রয়লার, সোনালি, লেয়ার, লেয়ার-১ জাতের প্রতি মুরগি ৩০ থেকে ৩৫ দিনে বিক্রি করার উপযোগী হয়। এ সময়ে প্রতিটি এক কেজির ব্রয়লার মুরগি প্যাকেটজাত খাবার খায় প্রায় ২ কেজির মতো। যার দাম ১৪০ টাকা। অথচ পাইকারি দরে সেটি ১১৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

আফতাব পোলট্রি খাবারের ডিলার লুৎফর রহমান লিটন জানান, বর্তমানে বাজারে প্যাকেটজাত ব্রয়লার মুরগির গ্রোয়ার, স্টাটার ১ কেজি খাবারের দাম ৭০ টাকা, যা ছয় মাস আগে ছিল ৫৬ টাকা। আবার প্যাকেটজাত সোনালি মুরগির গ্রোয়ার, স্টাটার ১ কেজি খাবারের দাম ৬৭ টাকা, যা ছয় মাস আগে ছিল প্রতিকেজি খাদ্য ৪৪ টাকা। লেয়ার, লেয়ার-১ প্রতিকেজি খাবারের দাম ৬৫ টাকা, যা ছয় মাস আগে ছিল ৪৫ টাকা।

অন্যদিকে গত বুধবার পর্যন্ত এলাকার বিভিন্ন হাটবাজার ও খামারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস বিক্রি হয়েছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। ছয় মাস আগেও যা ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সোনালি মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়, যার ছয় মাস আগের মূল্য ২৮০ টাকা।

পোলট্রি খাতের দুরবস্থার এখানেই শেষ নয়। গত ছয় মাসের ব্যবধানে সব ধরনের মুরগির ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান দফায় দফায় ভিটামিন ও নানা রোগের প্রতিষেধকসহ সব ধরনের ওষুধের দাম ২০-৩০ ভাগ বাড়িয়েছেন।

নাভানা ফার্মার বিক্রয় প্রতিনিধি মিজানুর রহমান জানান, আমদানিনির্ভর মুরগির ওষুধ তৈরির কাঁচামাল ও উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ ভাগ বেড়ে গেছে।
উপজেলার প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের ভ্যাটেরিনারি সার্জন শরিফুল ইসলাম বলেন, 'পোলট্রি মুরগির বাজার ওঠানামা করছে। খাদ্য ও ওষুধের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। তবে সব সময় এ অবস্থা থাকবে না। হতাশ হওয়ার কিছু নেই।'

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×