শিকলবন্দি ১০ বছর
নাসিরনগরে নিজ বাড়িতে শিকলে বাঁধা রবিউল - সমকাল
নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ | ০০:৩৭
১৯ বছরের তরুণ রবিউল। এক সময় স্বপ্ন দেখতেন পড়ালেখা করে মানুষ হবেন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় নির্মাণাধীন ভবনের লোহার রড মাথায় ঢুকে গেলে অসুস্থ হন রবিউল। দিন দিন তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এক পর্যায়ে তাঁর মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণের মাত্রা বাড়তে থাকে। পরে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে শিকল দিয়ে ঘরে বেঁধে রাখতে বাধ্য হন। সেই থেকে প্রায় ১০ বছর শিকলবন্দি হয়ে দিন কাটে তাঁর।
রবিউল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের রিকশাচালক খলিল মিয়ার ছেলে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন গ্রামবাসীর কাছে সাহায্য নিয়ে। ছোট ছেলে স্কুলে পড়ে। আর বড় ছেলে রবিউল ১০ বছর ধরে শিকলে বাঁধা। ভূমিহীন খলিলের পরিবারকে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে দেওয়া হয়েছে ঘর। সামান্য আয়ে চার সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ করতেই হিমশিম খেতে হয় খলিলের। ছেলের চিকিৎসার খরচ বহন করতে পাগলপ্রায় তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় রবিউলের বাবা খলিল মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, ঢাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত রবিউল। এক দিন স্কুল থেকে ফেরার পথে বন্ধুদের সঙ্গে একটি নির্মাণাধীন ভবনের নিচে খেলা করতে গিয়ে দেয়ালে ধাক্কা খেলে রডের একটি অংশ তার মাথার পেছনের দিকে ঢুকে যায়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। এর পাঁচ মাস পর থেকেই তার অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হয় এবং ক্রমে বাড়তে থাকে। বাড়িতে যে জায়গাজমি ছিল, তা বিক্রি করে চিকিৎসা করানো হয়েছে। এর পর ঘরের আসবাব থেকে শুরু করে থালাবাসনও বিক্রি করতে হয়। এখন পরনের কাপড় ছাড়া বিক্রি করার মতো কিছুই নেই তাঁর।
খলিল বলেন, চিকিৎসকরা বলছেন ১০-১২ লাখ টাকা হলে ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করালে রবিউল ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু তিনি (খলিল) একজন ভূমিহীন রিকশাচালক। এত টাকা পাবেন কোথায়! তাঁর চাওয়া সরকার কিংবা কোনো বিত্তবান লোক যদি তাঁর ছেলের চিকিৎসায় এগিয়ে আসেন, তাহলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে রবিউল।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রাকেশ পাল জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে শিকলে বাঁধা রবিউলের বিষয়টি জেনেছেন। সমাজসেবা অফিস থেকে তাঁর জন্য ভাতার ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন এক কর্মকর্তা।