নতুন বছরে দেশে ফেরার আকুতি রোহিঙ্গাদের

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে আয়োজিত সমাবেশে রোহিঙ্গারা
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১১:৩৫ | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১১:৩৫
নতুন বছরে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা। শনিবার দুপুরে হোম নিউ ইয়ার' স্লোগানকে সামনে রেখে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে আয়োজিত সমাবেশে রোহিঙ্গারা এ আকুতি জানান।
দীর্ঘসময়েও প্রত্যাবাসন না হওয়ায় সমাবেশে হতাশা ব্যক্ত করে নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীর নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে আর থাকতে চান না তারা। বিশ্বের সকল জাতির মানুষরা নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ উদযাপন করবে। কিন্তু তাদের সেই সুযোগ নেই, তারা তখনই খুশি হবেন যখন নিজ তারা দেশে ফিরতে পারবেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সমাবেশ উপলক্ষে কুতুপালং, বালুখালী, লম্বাশিয়াসহ আশপাশের ক্যাম্প থেকে দুপুরে থেকে লোকজন খেলার মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন।
সমাবেশে পুরুষদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারী, শিশুরাও যোগ দেন। পোস্টার, প্ল্যাকার্ডে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবি তোলেন। সমাবেশে হাজারো রোহিঙ্গা অংশগ্রহণ করে বলে দাবি রোহিঙ্গা নেতাদের। রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায় ও প্রত্যাবাসনের দাবিতে সোচ্চার শীর্ষ রোহিঙ্গা নেতারা সেখানে বক্তব্য দেন।
সমাবেশে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, 'নতুন বছর এলে পুরো দুনিয়ার মানুষ নিজ নিজ দেশে সেটি আনন্দ উল্লাসে পালন করে। কিন্তু শরণার্থী জীবনে রোহিঙ্গাদের নতুন বছর বরণের সেই সুযোগ নেই। সামনের দিনগুলোতে আমরাও আমাদের জন্মভূমি আরাকানে বসে নতুন বছর উদযাপন করতে চাই। বিশ্ব সম্প্রদায় আমাদের দেশে ফেরার ব্যাপারে যেন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়।
তিনি আরও বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে শুধু চোখের পানি ফেলছি, তোমরা আমাদের চোখের পানি দেখো।
ইয়ুথ লিডার মাস্টার মো. মুসা বলেন, নতুন বছর আসে চলে যায়, কিন্তু রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার কোন বার্তা দিতে পারে না। ২০২৩ সালে আমরা দেশে ফিরে যেতে চাই। বিশ্বের মানুষ যেখানে আগামীকাল ( রোববার) খুশিতে হ্যাপি নিউ ইয়ার পালন করবে সেখানে আমরা থাকবো নীরব। আমাদের দাবি, নতুন বছরে আমরাও আমাদের দেশ মিয়ানমারের আরকান ফিরে যাবো। আমরা আশা করি, বিশ্ব সম্প্রদায় আমাদের সঙ্গে থেকে নিজ দেশে ফেরার সুযোগ করে দেবেন।'
এদিকে, শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গাদের কর্মসূচি শেষ হয়েছে বলে জানান ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪-এপিবিএনের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) সৈয়দ হারুন উর রশিদ। তিনি বলেন, নতুন বছরে নতুন প্রত্যাশা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া দাবি জানিয়ে রোহিঙ্গারা কর্মসূচি পালন করেছে। তারা সেখানে কয়েকটি দাবি তোলেন বলেও জানান তিনি।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে প্রায় ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকেই এখানে ছিল আরও কয়েক লাখ নিপীড়িত রোহিঙ্গা।