ঢাকা বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মাগুরায় তিন ফসলি জমিতে অবৈধ ইটভাটা

মাগুরায় তিন ফসলি জমিতে অবৈধ ইটভাটা

ফাইল ছবি

অলোক বোস, মাগুরা

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৬:৫৮

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাগুরার চার উপজেলার তিন ফসলি জমি ও নদী দখল করে ৯৬টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। জমি ও নদী ভরাট করে এসব ভাটা বানানো হয়েছে। এতে একদিকে কৃষিজমির পরিমাণ কমছে, তেমনি দূষণের শিকার হচ্ছে পরিবেশ। শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগব্যাধির শিকার হচ্ছে এলাকার মানুষ। পানি প্রবাহে বাধা পাওয়ায় মরে যাচ্ছে মধুমতী নদী।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অন্তত ৬০টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে তিন ফসলি জমি ও মধুমতি নদী দখল করে। মাগুরা সদর উপজেলার জগদল, লস্করপুর, চাঁদপুর, পারলা, আঠারোখাদা, কাশীনাথপুর, ছোটব্রিজ, ইটখোলা, আমুড়িয়া, ধলহারা, ইছাখাদা, মহম্মদপুর উপজেলার তল্লাবাড়িয়া, ধোয়াইল, কানুটিয়া, শ্রীপুর সদর, বাখেরা শালিখার আড়পাড়া, শতখালী, হরিশপুর, বুনাগাতিসহ বিভিন্ন মাঠে তিন ফসলি জমিতে অন্তত ৩০টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া সদর উপজেলার বাগবাড়িয়া, কছুন্দি ও পাতুড়িয়ায় মধুমতি নদী দখল করে উঠেছে আরও ৩০টি ইটভাটা।

জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের নাজির হরশিত সিকদার জানান, লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ রয়েছে। ফলে ৯৬ ইটভাটার কোনোটির এখন লাইলেন্স নেই। অনুমোদন ছাড়াই বছরের পর বছর ইট পুড়িয়ে যাচ্ছেন ভাটা মালিকরা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায়ই এসব ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হয়। কিন্তু কাঠ পোড়ানো বন্ধ হয়নি। অনেক ইটভাটায় সিমেন্টের তৈরি ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যের চিমনির বদলে ব্যবহূত হচ্ছে স্বল্প উচ্চতার চিমনি। যা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ।
ইটভাটা সংশ্নিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, প্রতিটি ভাটায় মৌসুমজুড়ে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ লাখ ইট পোড়ে। প্রতি ১ লাখ ইটে ৮০ টন থেকে ১০০ টন হিসাবে ৯৬টি ইটভাটায় পুড়ছে ৫ থেকে ৬ লাখ টন জ্বালানি কাঠ। টন প্রতি ২ হাজার ৬০০ টাকা হিসাবে এসব কাঠের মূল্য শতকোটি টাকার ওপরে; যা সংগ্রহ করা হয় স্থানীয় বিভিন্ন বন ও বাঁশবাগান উজাড় করে।

ফসলি জমিতে নতুন ইটভাটা গড়ে ওঠার বিষয়ে কৃষকরা জানান, লস্করপুর মাঠে তিন ফসলি জমিতে 'ফাতেমা ব্রিকস' নামে ইটভাটা তৈরির প্রচেষ্টা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদে তা অনুমোদনের আবেদনও করেছেন সদরের ভিটাসাইর গ্রামের প্রভাবশালী আওয়াল মোল্যা। মাগুরা সদর কৃষি অফিসের অনুমতিও মিলেছে।

আওয়াল মোল্যা কৃষকদের জানিয়ে দিয়েছেন, চলতি ফসল উঠে গেলে কেউ যেন নতুন করে ফসল আবাদ না করেন। অথচ তিন ফসলি জমির ওপরই কৃষকদের জীবন চলে। নিজেদের খাওয়া, সন্তানদের লেখাপড়াসহ সাংসারিক সবকিছু এসব জমির ওপর নির্ভরশীল। জবরদস্তি করে নামমাত্র মূল্যে ইজারা নিয়ে এসব জমি ইটভাটার গ্রাসে চলে গেলে কৃষকদের পথে বসতে হবে। পাশাপাশি পরিবেশ দূষিত হবে। ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেছেন।

বাগবাড়িয়ার আবুল বরকতসহ অনেকে জানান, মধুমতী নদী দখল করে মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে অন্তত ৩০টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। অথচ চরে শুস্ক মৌসুমে ফসল আবাদ হতো। এখন চরে কোনো জমি নেই। ইটভাটার ধুলা ও ধোঁয়ায় বাড়িঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চর্মরোগ, শ্বাসকষ্টসহ নানা অসুখে ভুগছে মানুষ। নদীর ভেতরের মাটি কেটে নেওয়ায় ভাঙনের মুখে পড়ছে জনপদ।

ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি তারিকুল ইসলাম বলেন, লাইন্সেস নবায়ন বন্ধ থাকায় করার কিছুই নেই। সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হলে জেলা প্রশাসন লাইন্সেস দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। কয়লার স্বল্পতা ও উচ্চ দামের কারণে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। তবে যারা তিন ফসসি জমিতে ইটভাটা বানাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান বলেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেজুলেশনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, তিন ফসলি জমিতে কোনো ইন্ডাস্ট্রি বা ইটভাটা করা যাবে না। মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তারিফ উল হাসান বলেন, তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা বানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধ ইটভাটার ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে একাধিক ইটভাটাকে জরিমানার পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

×