লক্ষ্মীপুরে কিশোর খুন, আওয়ামী লীগ নেতা রাহুলসহ গ্রেপ্তার ৫

নিহত রাসেলের মা। ছবি-সমকাল
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৬:৩১ | আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৬:৩১
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আধিপত্য বিস্তারের জেরে আওয়ামী লীগের দু'পক্ষের সংঘর্ষে রাসেল হোসেন নামে এক কিশোর নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। বুধবার রাতে নিহতের মা ফাতেমা বেগম ছয়জনের নামে ও অজ্ঞাত চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় সংঘর্ষের দিনই আটক পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রায়পুর থানার ওসি শিপন বড়ূয়া জানান, অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। প্রধান আসামি রাহুলের ক্লাবঘরে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল, একটি খেলনা পিস্তল ও কয়েকটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।
দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির মোল্লাহ বলেন, ধর্ষণের মামলায় হাজত খেটে এসে রাহুল ভালো হয়ে যাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ জন্য দলও তাঁকে সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু কিশোর রাসেল হত্যার ঘটনায় রাহুলকে দল থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। স্থায়ীভাবে বহিস্কারের জন্য জেলা ও উপজেলা নেতাদের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
এদিকে, রাসেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী। শোকার্ত হৃদয় নিয়েও তাঁরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। আজ রাহুল ও তাঁর সহযোগীদের ফাঁসির দাবি জানানো হয়েছে। আজ শুক্রবার মামলার সব আসামি গ্রেপ্তার ও খুনের বিচার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা পারভেজ আলী জানান, রাহুল নদীর পাড়ে রিসোর্ট গড়ে প্রতি রাতে মদ, জুয়া ও নারী এনে ফূর্তি করতেন। আওয়ামী লীগ করায় কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করত না। স্থানীয় বাবুল ব্যাপারী বলেন, জয়বাংলায় নাম লেখিয়ে 'আঙুল ফুলে কলা গাছ' হয়েছে রাহুলের। জমি দখল, নদী থেকে বালু তোলা, রিসোর্টে মদ-জুয়া, অনৈতিক কার্যকলাপ- এমন অপকর্ম নেই, যা তিনি করতেন না। লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণী এসে তাঁর রিসোর্টে রাত কাটাতেন। এসব নিয়ে কেউ কিছু বললেই তার ওপর অত্যাচার করতেন রাহুল ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা।
সরেজমিন উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চরকাচিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা মনির হোসেন ভুট্টু ব্যাপারী। নিজে আহত হয়েও ছেলেকে বাঁচাতে পারেননি, এ আক্ষেপ তাঁকে পোড়াচ্ছে। মা ফাতেমা বেগম বাড়ির উঠানে হাউমাউ করে কাঁদছেন। রাসেলের ছবি হাঁতড়ে নিজেকে বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রতিবেশীদের সান্ত্বনার কোনো চেষ্টাই কাজে আসছে না। বিলাপ করতে করতে ফাতেমা বলেন, 'রাসেল কইত- আম্মু চিন্তা করিও না, বাবার সঙ্গে কাজ করছি। আর দুঃখ থাকবে না। ছোট ভাই-বোন সুমি, নীরব ও রুমিকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করব। দুঃখ ঘোচাতে চেয়ে কলিজা আমারে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে গেল।' তিনি বলেন, 'রাহুলের অপকর্ম সম্পর্কে রাসেলই প্রথম বলেছিল। ও বলত- রাহুল কাকা মানুষ ভালো না। চরে যেতে দেখেছি, কাকা রিসোর্টে ছেলেমেয়ে এনে খারাপ কাজ করেন। আমি একদিন দেখে ফেলায় কাকা মারধর করেন। এর পর থেকে রাসেল ওদিকে যেত না। এর পরও রাহুল আমার ছেলেকে কেড়ে নিল। আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমি রাহুলের ফাঁসি চাই।'
রাহুল ও তাঁর অনুসারীদের পরিবারের সদস্যরা বুধবার রাসেলের মৃত্যুর খবর পেয়েই ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। আজ এসব বাড়িতে তালা ঝুলতে দেখা যায়। গ্রামে পুলিশ টহল দিলেও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। স্থানীয়রা জানান, আধিপত্য নিয়ে বুধবার সকালে ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য নজরুল ইসলামের লোকজনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা রাহুলের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় মাঠে যাওয়ার পথে নজরুল ইসলামের ভাই মনির হোসেন ও তাঁর ছেলে রাসেলের ওপর হামলা চালায় রাহুলরা। এ সময় পেটে ছুরিকাঘাতে রাসেল গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
- বিষয় :
- মামলা
- গ্রেপ্তার
- কিশোর খুন