বোয়ালমারীর ইউএনও ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

ফাইল ছবি
ফরিদপুর অফিস
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৩ | ০৮:৩৮ | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩ | ০৩:১০
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ‘বেআইনি, স্বেচ্ছাচারী এবং ন্যায়নীতি ও প্রচলিত আইনের পরিপন্থী’ কাজ করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন আদালত। উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের বামনচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামান কাইয়ুম মোল্লার দায়ের করা এক মামলায় এ আদেশ দেন আদালত।
নোটিশ পাওয়ার ১০দিনের মধ্যে ওই দুই কর্মকর্তাকে জবাব দিতে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন আদালত। গত ১৬ এপ্রিল শুনানি শেষে এ আদেশ দেন বোয়ালমারীর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক বীনা দাস।
বৃহস্পতিবার ‘আদালতের এ আদেশ পেয়েছেন’-বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
এর আগে গত ১২ এপ্রিল ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামান কাইয়ুম মোল্লা বাদী হয়ে চারজনকে বিবাদী করে এ মামলাটি দায়ের করেন।
যে চারজনকে বিবাদী করা হয়েছে তারা হলেন- বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোশারেফ হোসেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও অগ্রণী ব্যাংকের বোয়ালমারী শাখার ব্যবস্থাপক।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মানিক মজুমদার বলেন, গত ১৬ এপ্রিল এ মামলার শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত এক ও দুই নম্বর বিবাদী যথাক্রমে ইউএনও ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নোটিশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য আদেশ দেন।
মামলার এজাহারে ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামান কাইয়ুম মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, তিনিসহ ১২ জন ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্বে আছেন। এর মধ্যে ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান শেখের মতবিরোধ দেখা দেয়। এ ছাড়া প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঠিকমতো হিসাব না দেওয়া, সভা না ডাকা, শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং ও রাজনৈতিক বিভাজনসহ বিধিবহির্ভূত কাজ করার অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধান শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আবু সাইদকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু সাইদ বিদ্যালয়ের ২০ জন শিক্ষকের প্রাপ্য ৪ লাখ ৮ হাজার ২২ টাকা বেতন বিল প্রস্তুত করে অগ্রণী ব্যাংকে জমা দেন। কিন্তু ব্যাংক অজানা কারণে শিক্ষকদের বেতন প্রদান করেনি। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক জানায়, ইউএনও ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাকে মানা করায় তিনি টাকা দেননি।
পরবর্তীতে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর ছাড়াই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের বিল ছেড়ে দেন।
এ ব্যাপারে ব্যাংক থেকে জানানো হয় ইউএনও'র চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বেতন ছাড় দেওয়া হয়েছে। ইউএনওর ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির ৮ সদস্য পদত্যাগ করায় বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সে কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০২১ সালের ২৮ মার্চের ১৭ দশমিক ১০ ধারা অনুযায়ী অ্যাডহক কমিটির অবর্তমানে নিম্ন স্বাক্ষরকারী (ইউএনও) বেতন বিলে স্বাক্ষর করে ব্যাংকে পাঠানো এবং পরে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হলো।
অভিযোগে বলা হয়, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির আট সদস্য পদত্যাগ করেছেন এ কথা সত্য নয়। বর্তমান কমিটি বাতিল হয়নি কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভেঙ্গে দেয়নি। কোন অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়নি। ইউএনও ২৮ মার্চ বেতন বিলে যে স্বাক্ষর করেছেন তা ১৭ দশমিক ১০ ধারা অনুযায়ী এখতিয়ার বহির্ভূত ও বেআইনি।
ব্যবস্থাপনা কমিটির পদ থেকে পদত্যাগকারী একজন হলেন ওই বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য লক্ষণ দত্ত। লক্ষণ দত্ত বলেন, বিদ্যালয়ে একটি নিয়োগ কমিটি গঠন নিয়ে সভাপতির সঙ্গে সমস্যা হয়। সকলে নিয়োগ কমিটির প্রধান হিসেবে তার (লক্ষণ) নাম প্রস্তাব দিলে সভাপতি সে সিদ্ধান্ত মেনে নেননি। ফলে আমার ব্যবস্থাপনা কমিটির আট সদস্য পদত্যাগপত্র ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে পাঠিয়ে দেই। এ নিয়ে ঢাকা থেকে তদন্ত কমিটি এসেছিল। তবে আমাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে কিনা এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত আমাকে জানানো হয়নি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন শুক্রবার দুপুরে বলেন, আদালতের নির্দেশনা তিনি বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) পেয়েছেন। তাকে ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে এবং তিনি সময়ের মধ্যে জবাব দিয়ে দেবেন।
জানতে চাইলে বোয়ালমারীর ইউএনও মোশারেফ হোসেন বলেন, আদালত শোকজ করেছেন আমরা আমাদের বক্তব্য আদালতেই পেশ করব।
তিনি বলেন, বেতন প্রদান ছাড়া শতবর্ষী ওই বিদ্যালয়ের আর্থিক আর কোন কাজ করা হয়নি। বেতন দেওয়ার জন্য আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হলে দাঁড়াব।