করোনা সন্দেহে রংপুরে পাঠানো সেই ৫ জন এখন ঠাকুরগাঁওয়ে

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২০ | ০০:১৩ | আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ | ০০:২২
করোনা সন্দেহে ঢাকাফেরত এক ব্যক্তিসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে আবার ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তারা বর্তমানে সেখানে আইসোলেশন বিভাগে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন।
এর আগে, গত শনিবার রাতে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সদর উপজেলার ভেলাজান নদীপাড়া গ্রামের এক পরিবারের পাঁচ সদস্যকে করোনা সন্দেহে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
আক্রান্ত ব্যক্তি ঢাকা থেকে ৪ দিন আগে বাড়িতে ফেরেন বলে জানা গেছে। শনিবার রাতে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্তাবধানে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের সাথে যোগাযোগ করে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠায়। পরে করোনা সন্দেহে রোববার দুপুরে অসুস্থ সবার নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়।
রোববার দুপুরে নমুন সংগ্রহ করে আবার রাতেই রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের করোনা ইউনিট থেকে তাদের পাঠানো হয় ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে। এর আগে গত শনিবার ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল থেকে তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিল।
ওই ব্যক্তি ঢাকায় অবস্থানকালে চাকরির সুবাদে এক বিদেশির সংস্পর্শে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। ঢাকায় তাকে ১৫ দিনের কোয়ারেন্টাইন দেওয়া হলেও তিনদিন পরে তিনি নিজ গ্রামে চলে আসেন।
ঢাকা থেকে ফেরার পর থেকেই তিনি, তার স্ত্রী, ভাই ও দুই সন্তান সর্দি, জ্বর, কাশি ও গলা ব্যথায় ভুগছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
শনিবার ওই ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ভেলাজান বাজারের এক প্রাথমিক চিকিৎসকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। শারীরিক বর্ণনা শুনে ওই চিকিৎসক তাদের দ্রুত ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এরপর থেকে এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় লোকজন ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মামুনকে জানালে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের সহায়তায় তাদের সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক নাদিরুল আজিজ চপল জানান, যে ৫ জনকে করোনা সন্দেহে রংপুর মেডিকেলে পাঠানো হয়েছিল তারা সবাই একই পরিবারের সদস্য। আইইডিসিআর তাদের নমুনা সংগ্রহ করেছে। রংপুর মেডিকেলের করোনা ইউনিট তাদের ফেতর পাঠিয়েছে। তারা সবাই হাসপাতালের আইসোলেশন বিভাগে চিকিৎসাধীন। আইইডিসিআর থেকে প্রতিবেদন আসার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের ভেলাজান নদীপাহাড় গ্রামে সবার সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কথা ভেবে গ্রামটির সবাইকে ঘরে থাকার কথা বলা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু ওই গ্রামটির এমন পরিস্থিতিতে গরীব অসহায় মানুষদের মধ্যে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট।
জানা গেছে, এ খাদ্য সংকটের কারণে গ্রাম থেকে পালানোর চেষ্টা করছে অনেকে। কেউ যাতে অন্য গ্রামে যেতে না পারেন সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন থেকে পাহাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভান্ডার থেকে এই গ্রামের শতাধিক গরিব মানুষের মধ্যে ৭ দিনের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমান বলেন, নদীপাড়া গ্রামটির সবাইকে ঘরে থাকার কথা বলা হয়েছে। ওই গ্রামের কোনো মানুষ যেন গ্রামের বাইরে না যায় সেজন্য রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এলাকার মনুষকে সচেতনভাবে চলতে বলা হয়েছে। যেহেতু এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ দিনমজুর সেজন্য খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে যা আসছে আমরা তা দ্রুত তাদের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, নদীপাড়া গ্রামের সবাইকে ঘরে থাকার কথা বলা হয়েছে। ওই গ্রামের শতাধিক পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণভান্ডার থেকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। সেই সাথে সবাইকে জীবাণুনাশক পাউডার দেওয়া হয়েছে। খবর নেওয়া হচ্ছে, যাদের খাদ্যের অভাব তাদের দ্রুত সময়ে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া হবে।
- বিষয় :
- করোনার প্রাদুর্ভাব
- ঠাকুরগাঁও