হাসপাতালে নেই জরুরি সেবাও

সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২০ | ১৩:৫৮ | আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২০ | ১৪:১৪
বাবুল বড়ূয়ার বয়স ৬২ বছর। ২৫ মার্চ সকালে হার্ট অ্যাটাক হয় তার। সেইসঙ্গে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। চন্দনাইশের সাতবাড়িয়া থেকে ২৬ মার্চ সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন তিনি। কিন্তু এ হাসপাতাল তাকে ভর্তি করতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরপর যান চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। সেখানেও ব্যর্থ হন তার স্বজনরা। এরপর নেওয়া হয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে। সেখানে রক্তের নমুনা রেখে অন্য হাসপাতালে ভর্তি করতে বলা হয়। বাবুল বড়ূয়ার স্বজনরা এবার আসেন মেট্রোপলিটন হাসপাতালে। তবে ভর্তি করেনি তারাও। এরই মধ্যে কেটে যায় দু'দিন। নিকটাত্মীয় এক ডাক্তারকে ফোন করে ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় তাকে ভর্তি করানো হয় রয়েল হাসপাতালে। ততদিনে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। ২৮ মার্চ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বাবুল বড়ূয়া। করোনা সন্দেহে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলো ভর্তি করেনি তাকে। অথচ মৃত্যুর পর জানা গেল বাবুলের শরীরে ছিল না করোনাভাইরাস। তার শ্বাসকষ্ট হয়েছিল আসলে হার্ট অ্যাটাক থেকে।
শুধু বাবুল বড়ূয়া নন, চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলো এমন অমানবিক আচরণ করছে বেশিরভাগ রোগীর সঙ্গে। সংকটের এ মুহূর্তে হাসপাতালগুলো থেকে সেবা না পেয়ে দিশেহারা চট্টগ্রামের সাধারণ রোগীরা। মানবতার ধার ধারছেন না অধিকাংশ ডাক্তার। চট্টগ্রামে তিন হাজারের বেশি সরকারি ও বেসরকারি ডাক্তার আছেন। নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে চেম্বারও আছে প্রায় দুই হাজার ডাক্তারের। করোনা আতঙ্কে বেশিরভাগ ডাক্তার বন্ধ রেখেছেন তাদের চেম্বার।
বাবুল বড়ূয়ার মতো দুর্ভোগে প্রাণ গেছে কক্সবাজারের বৌদ্ধগোনা থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসা নিতে আসা ১৪ বছরের শিশু ওমর সিদ্দিকের। শ্বাসকষ্ট ও জ্বর দেখা গেলে ৩১ মার্চ তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসেন তার বাবা আবদুল হামিদ। প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান তারা। কিন্তু করোনা সন্দেহে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয় ওমরকে। আরও কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে অবশেষে তাকে ভর্তি হয় আন্দরকিল্লার জেনারেল হাসপাতালে। ১ মার্চ মারা যায় ওমর। মৃত্যুর পর রক্ত পরীক্ষায় জানা গেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছিল না ওমরের।
বাবুল বড়ূয়া ও ওমর সিদ্দিকীর পরিবারের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে তাদের উভয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন করোনা বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) গঠিত কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমান। সমকালকে তিনি বলেন, 'মৃত্যুর আগে বাবুল বড়ূয়ার স্বজনরা চট্টগ্রামের অন্তত পাঁচটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ঘুরেছেন। হাসপাতালগুলো রোগী ভর্তি করে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে এই দুটি প্রাণ হয়তো বাঁচাতে পারতাম আমরা।'
চট্টগ্রামে ১০০ শয্যার বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে এক ডজনেরও বেশি। পার্কভিউ, ন্যাশনাল, ম্যাক্স, মেট্রোপলিটন, মেডিকেল সেন্টার ও সার্জিস্কোপ এর মধ্যে অন্যতম। আবার রয়েল, সিএসসিআর, ডেল্টাসহ এক দেড় ডজন হাসপাতালের প্রতিটিতে শয্যা আছে পঞ্চাশেরও বেশি। এসব হাসপাতালে আছে অসংখ্য ডাক্তারের চেম্বার। তবে বেশিরভাগ ডাক্তার বসছেন না চেম্বারে। চট্টগ্রাম বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, 'আতঙ্কের কারণে শুরুতে এমন কিছু ঘটনা ঘটলেও এখন তা কমে আসছে। করোনা সন্দেহের কোনো রোগী পেলে তা সংশ্নিষ্ট হাসপাতালে পাঠাতে বলা হয়েছে। চিকিৎসা সুরক্ষা সরঞ্জাম থাকায় ডাক্তররাও চেম্বারে বসছেন। আস্তে আস্তে এই হার বাড়বে আরও।'