বরিশালে জাপা নেতার এ কেমন প্রতিহিংসা!

বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশ: ১৪ মে ২০১৮ | ১৬:৫৪ | আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ | ০৭:২৫
পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির পদ নিয়ে বিরোধের জের ধরে বাকেরগঞ্জে এক মাদ্রাসা সুপারের ওপর বর্বর কায়দায় প্রতিশোধ নিয়েছেন স্থানীয় এক জাতীয় পার্টির নেতা। তার নেতৃত্বে সুপারের মাথায় মানুষের মল ঢেলে দিয়ে উল্লাস করা হয়েছে। এতেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। মোবাইলে এ ঘটনাটি ভিডিও করে ছড়িয়ে দিয়েছে ফেসবুকে। বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে শুক্রবার ফজরের নামাজের পর এ ঘটনা ঘটে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হলে রোববার বিকেল থেকে ঘটনাটি জানাজানি হতে থাকে সর্বত্র। এর পরই তৎপর হয় পুলিশ প্রশাসন। রাতে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার আগে লাঞ্ছনার শিকার মাদ্রাসা সুপারকে খুঁজে বের করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ।
কাঁঠালিয়া গ্রামের ইসলামিয়া দারুসসুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবু হানিফা (৫০) আদিম এ বর্বরতার শিকার হন। ওই মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি স্থানীয় জাপা নেতা (পদহীন) জাহাঙ্গীর খন্দকারের নেতৃত্বে তার ছেলে ও ভাইয়ের ছেলেসহ চার-পাঁচ যুবক মল ঢেলে দিয়েছে তার মাথায়। গ্রেফতার হওয়া তিনজনের মধ্যে বাকেরগঞ্জ পৌর শহরের বেল্লালকে ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে। গ্রেফতার হওয়া অপর দু'জন হলো কাঁঠালিয়া গ্রামের মিনজু ও রাজাপুর গ্রামের মিরাজ হোসেন সোহাগ। মিরাজকে গ্রামবাসী গণধোলাই দিলে বরিশাল মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ গ্রেফতার দেখিয়েছে তাকে।
সোমবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শুক্রবার ভোরে এ ঘটনা ঘটলেও রোববার ফেসবুকের মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসন জানতে পারে ব্যাপারটা। তিনিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে তারা জানতে পেরেছেন, আবু হানিফাকে অপদস্থ করার জন্য পেছনে পরিকল্পনাকারী এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে বাস্তবায়ন করাসহ গোটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে ১০-১১ জন জড়িত। মাদ্রাসার কমিটি ও সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে বর্বর কায়দায় অপদস্থ করা হয়েছে তাকে। পুলিশ এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। অন্যদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে পুলিশ সুপার জানান। তিনি বলেন, ওই এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সদস্যরা অমানবিক এ ঘটনাটি যথাসময়ে জানাতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
থানায় আবু হানিফের দেওয়া লিখিত অভিযোগ ও ফেসবুকে প্রকাশ হওয়া ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, ফজরের নামাজ পড়ে বাড়িতে ফেরার পথে ছয়-সাতজন ঘিরে ধরে আবু হানিফাকে। এ সময় এক যুবক তার দু'হাত ধরে রাখে এবং অপর একজন প্লাষ্টিকের পাত্রে আনা মানুষের মল মাথায় ঢেলে দেয়। পুরো ঘটনাটি দাঁড়িয়ে তদারকি করেন জাপা নেতা জাহাঙ্গীর খন্দকার।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ভিডিওচিত্রে জাহাঙ্গীর খন্দকার ছাড়াও তার ছেলে ইউপি সদস্য হাসান খন্দকার, ভাইয়ের ছেলে সোহেল খন্দকার ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী এনামুল হাওলাদারকে দেখা গেছে।
আবু হানিফার ছেলে মো. মহিবুল্লাহ বলেন, 'সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ থাকায় তার ছোট চাচা (আবু হানিফার ভাই) জাকারিয়া হোসেন হামিদও এ চক্রের সঙ্গে জড়িত।'
আবু হানিফা জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে ইসলামিয়া দারুসসুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে তিনি বিজয়ী সভাপতি উপজেলা যুব সংহতির আহ্বায়ক এইচ এম মজিবর রহমানের পক্ষে ছিলেন। সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর খন্দকার পরাজিত হয়ে আবু হানিফার ওপর ক্ষুব্ধ হন। এর পর থেকেই তাকে বিভিন্ন সময় হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। এর জের ধরে গত শুক্রবার ফজরের নামাজের পর মসজিদ থেকে বাড়িতে ফেরার পথে অভিযুক্তরা পথরোধ করে তার। বাদানুবাদের একপর্যায়ে তার মাথায় মল ঢেলে দেওয়া হয়।
এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাপার কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন জাহান রত্না আমিন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, জাহাঙ্গীর খন্দকার আগে জাপা করত। বর্তমানে জাপার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই তার। শিক্ষক অপদস্থকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।
- বিষয় :
- বরিশাল