ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঝালকাঠিতে বাস দুর্ঘটনা

সুপারভাইজার থেকে চালক, ছিল না ভারী যানের অনুমতি

সুপারভাইজার থেকে চালক, ছিল না ভারী যানের অনুমতি

ছবি: ফাইল

ঝালকাঠি ও রাজাপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০

ঝালকাঠি সদরের ছত্রকান্দা এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে উল্টে যাওয়া বাসের চালক মোহন হাওলাদারের ভারী যানবাহন চালানোর অনুমতি ছিল না। তিনি ‘বাসার স্মৃতি’ পরিবহনের বাসটির সুপারভাইজার ছিলেন। ২০২০ সালে হালকা যানবাহনের লাইসেন্স নেন। বছরখানেক আগে মালিক জেলা বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আকন তাঁকে চালক নিয়োগ করেন। তবে মোহনকে দিয়ে বাস না চালাতে মালিককে একাধিকবার বলেও কাজ না হওয়ায় ছয় মাস আগে মালিক সমিতিকে লিখিত জানান জেলা শ্রমিক সমিতির নেতারা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), মালিক ও শ্রমিক সমিতি এবং ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত শনিবার ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় নারী-শিশুসহ ১৭ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হন।

গতকাল রোববার জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির সদস্যরা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন ছাড়াও আহত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নিয়েছেন। আর ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি করে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি। এখন পর্যন্ত বাসটির চালক মোহন হাওলাদারকে আটক করা সম্ভব হয়নি। হতাহতদের স্বজনরা অভিযোগ না দেওয়ায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। বাসটির মালিক অসুস্থ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ঝালকাঠি বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বাসটির চালক মোহন সমিতির সদস্য না হলেও মালিক তাঁকে দিয়ে গাড়ি চালাতেন। সদস্যদের মধ্যে চালকের স্বল্পতা থাকায় জোর করে কিছু বলা যায়নি।

তবে তাঁকে দিয়ে গাড়ি না চালানোর জন্য মালিক আকন ভাইকে একাধিকবার নিষেধ করেছি। তিনি না শোনায় আমি মালিক সমিতিতে ছয় মাস আগে লিখিত অভিযোগ করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মোহন একই বাসের সুপারভাইজার ছিলেন। মালিক সেই মায়ায় পড়ে তাঁকে চালকের চাকরি দেন।’

ঝালকাঠি বিআরটিএ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের মডেলের বাসটির (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪৬৫৪৯) ফিটনেসের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। ট্যাক্স টোকেন একই বছরের ৯ মে এবং রুট পারমিটের মেয়াদ রয়েছে ২০২৫ সালের ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে বাসটি খুলনা-বরগুনা পথে অনুমতি থাকলেও চলাচল করছিল ভাণ্ডারিয়া-বরিশালে। অবশ্য এ বিষয়ে ঝালকাঠি মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, তাদের সিদ্ধান্তেই বরিশাল বিভাগের ৩২টি পথে মালিক সমিতির গাড়ি চলাচল করে আসছে।

ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘মালিক সমিতির কোনো গাড়ি এই প্রথম এত বড় দুর্ঘটনার কবলে পড়ল। এ জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ছয় সদস্যের কমিটি তদন্ত করে গাফিলতি চিহ্নিত ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিআরটিএ ঝালকাঠি-পিরোজপুর জোনের সহকারী পরিচালক ও জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির সদস্য মাহাবুবুর রহমান জানিয়েছেন, তারা তদন্তকাজ শুরু করেছেন। রোববার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বাসের আহত যাত্রী ছাড়াও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘চালক মোহনের নামে ২০২০ সালে বরিশাল থেকে হালকা মোটরযান চালানোর লাইসেন্স ইস্যু করা। এটি প্রাথমিক ড্রাইভিং লাইসেন্স। তিন বছর পরে তিনি ভারী যান চালানোর লাইসেন্স পেতেন।’

ঝালকাঠি পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, হতাহতদের পরিবার কোনো অভিযোগ করেনি। এ জন্য চালককে আসামি করে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। একই সঙ্গে চালককে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পুকুরটি ভরাট করবে সওজ

ঝালকাঠি সদরের ছত্রকান্দা এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস যে পুকুরে পড়েছিল, সেটি ভরাটে উদ্যোগ নিচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)।  ঝালকাঠি সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন জানিয়েছেন, তাদের আওতাধীন মহাসড়কের দু’পাশে ১০ মিটার জায়গায় কেউ স্থাপনা নির্মাণ বা জমির আকার পরিবর্তন করতে পারে না। কিন্তু পুকুরটি খননে সড়কের কোনো ক্ষতি না হওয়ায় কিছু বলা হয়নি। এখন পুকুরটি ভরাট করার জন্য মালিককে চিঠি দেওয়া হবে। তবে পুকুরের জমির মালিক জামাল হাওলাদার বলেছেন, ‘নির্দিষ্ট দূরত্বে আমরা পুকুর খনন করেছি। সড়কের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। কিন্তু সড়কের দু’পাশে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির বড় গাছ গত বছর বিক্রি করে সড়ক বিভাগ। গাছগুলো থাকলে হয়তো এ দুর্ঘটনা দেখতে হতো না।’

আরও পড়ুন

×