ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

চকবাজারে আগুনে নিহত নোয়াখালীর একই ইউনিয়নের ৯ জন

চকবাজারে আগুনে নিহত নোয়াখালীর একই ইউনিয়নের ৯ জন

নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে নাটেশ্বর ইউনিয়নের পরিবেশ -সমকাল

নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ১৩:৫৯ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ১৪:১০

পুরান ঢাকার চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার এক ইউনিয়নের ৯ জন নিহত হয়েছেন। 

তারা হলেন- উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়নের মির্জানগর গ্রামের আনোয়ার হোসের মঞ্জু (৪২), নাছির উদ্দিন (৩৫), হিরা (২৮), নাটেশ্বর গ্রামের মো, আলী (৬০), ঘোষকামতা গ্রামের মাসুদ রানা (৩৫), তার ভাই রাজু (২৮), একই গ্রামের রানা (২৫),  সবুজ (২২) ও  মধ্য নাটেশ্বর গ্রামের সিদ্ধিক উল্লাহ (৪৫) ।

সোনাইমুড়ির নাটেশ্বর গ্রামের মৃত আব্দুর রহিম বিএসসি ছেলে নিহত আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বড় ভাই দুলু চৌধুরী মুঠোফোনে সমকালকে বলেন, তিনি ও তার ভাই মঞ্জু দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে চকবাজার রাজ্জাক ভবনের পাশে ঔষধের ব্যবসা করতেন। তাদের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের নাম হায়দার মেডিকো। মঞ্জু দোকান পরিচালনা করতেন ও তিনি তদরকির দায়িত্বে ছিলেন। প্রতিদিনের মতো তিনি রাত সাড়ে নয়টার দিকে দোকান থেকে বের হয়ে যান। রাত দশটার দিকে তাদের দোকানের সামনে থাকা একটি প্রাইভেট কারের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে গাড়িটিতে আগুন লেগে যায়। এই সময় মঞ্জু তার বন্ধু নাছির ও হিরাসহ ৮ জন ফার্মেসির ভেতর আড্ডা দিচ্ছিলেন। আগুন দেখে তারা সাটার বন্ধ করে দোকানে আশ্রয় নেন। পরর্বতীতে মূহুর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পরলে তারা পুড়ে মারা যান।

দুলু আরও বলেন, তাদের দোকান থেকে ৮ জনের পোড়া দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখানে তার ভাই মঞ্জু, তাদের এলাকার গাউস উদ্দিনের ছেলে নাসির উদ্দিন ও মোমিন উল্লাহর ছেলে হিরাও রয়েছেন। 

এদিকে সরেজমিনে নাটেশ্বর গিয়ে দেখা যায় নিহত মঞ্জুর মাহিবি চৌধুরী (১৪) ও মেয়ে সাঞ্জু নামে দুই সন্তান রয়েছে। স্বামীর শোকে মঞ্জুর স্ত্রী নাহিদা পাথর হয়ে গেছেন। মা রাহেলা বেগম পুত্রশোকে বুক চাপরাচ্ছেন আর বিলাপ করছেন। বুধবার রাত ১ টার সময় বড় ভাই দুলু চৌধুরী মুঠোফোনে মাকে মঞ্জুর মারা যাওয়ার কথা জানান। সেই থেকে তিনি নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে অনবরত বিলাপ করেই চলেছেন। 

নাটেশ্বর ইউনিয়নের ঘোষকামতা গ্রামের সাহাব উল্লাহর ছেলে মাসুদ রানা (৩৫) ছোট ভাই রাজুকে নিয়ে চকবাজার এলাকায় মোবাইলের ব্যবসা করতেন। নিহত মাসুদ রানা ও রাজুর চাচা বাবর হোসেন জানান, বুধবার রাতে তাদের আগুন দেখে টাকা পয়সা ও মোবাইল গুছিয়ে ব্যাগে নিয়ে বের হওয়ার আগেই দোকানে আগুন গ্রাস করে। এতে দুই ভাই পুড়ে মারা যান। নিহতদের মধ্যে রাজু ২৭ দিন আগে বিয়ে করেছিলেন। মেহেদির রঙ মুছতে না মুছতেই রাজু তার নববধূ কানিজকে বিধবা করে  অকালে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। 

নাটেশ্বর গ্রামের মৃত ভুলু মিয়ার ছেলে মোঃ  আলী (৬০) চকবাজার এলাকায় প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবসা করতেন। অগ্নিকাণ্ডের সময় তিনি নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে ছিলেন। এই সময় আগুনে পুড়ে তিনি মারা যান। নিহতের স্বজন মোমেন উল্লাহ জানান, গভীর রাতে তারা মুঠো ফোনের মাধ্যমে মো. আলীর পুড়ে মারা যাওয়ার খবর জেনেছেন। 

নাটেশ্বর ইউনিয়নের ১নং ওয়াডের সাবেক সদস্য মোঃ মোমিন জানান, তার এলাকা ঘোষকামাতা গ্রামের রানা ও সবুজ নামের দুই যুবক আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছেন। তবে এই ব্যপারে তিনি বিস্তারিত কোন তথ্য দিতে পারেননি। 

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নিহতরা দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় থাকেন না।

নাটেশ্বর গ্রামের সিদ্দিক উল্লাহ (৪৫) পুরান ঢাকায় ব্যাগের ব্যবসা করতেন। তিনি নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুনে পুড়ে মারা যান।

নাটেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন খোকন বলেন, চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে তার ইউনিয়নের ৯জন পুড়ে মারা যাওয়ার খবর তিনি পেয়েছেন। বুধাবার রাত থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি খোঁজখবর রিয়েছেন। 

তবে মৃতের সংখ্যা ও এই সংক্রান্ত কোন তথ্য জেলা পুলিশের কাছে নেই। সন্ধ্যায় নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মোঃ ইলিয়াছ শরীফ সমকালকে বলেন, এই সংক্রান্ত কোন তথ্য পুলিশের কাছে নেই। 

আরও পড়ুন

×